পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড (কেপিপিএল) সর্বশেষ ছয় বছর ধরে টানা লোকসানে রয়েছে। সর্বশেষ বছরগুলোতে কোম্পানিটির ব্যবসার পরিধিও ছোট হয়েছে। তবে লোকসানের বোঝা সর্বশেষ ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২১-২২ হিসাব বছরে অনেকটা কমে এসেছে। একই সঙ্গে চলতি ২০২২-২৩ হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকেও (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আগের হিসাব বছরের একই সময়ের তুলনায় কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট লোকসান কমেছে।
আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৬-১৭ হিসাব বছর থেকে টানা লোকসানে রয়েছে খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির আয় হয়েছিল ৭ কোটি ১০ লাখ টাকা। এ সামান্য আয়ের বিপরীতে কোম্পানিটিকে পরিচালন লোকসান গুনতে হয়েছে ৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। বিভিন্ন খরচ শেষে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট লোকসান হয়েছে ৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। লোকসানের জন্য আলোচ্য হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানিটি। একইভাবে পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭-১৮ হিসাব বছরেও শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানিটি। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটি আয় দেখিয়েছে শূন্য। এ সময়ে তাদের পরিচালন লোকসান গুনতে হয়েছে ২ কোটি ১১ লাখ টাকা। আর বিভিন্ন খরচ শেষে কর-পরবর্তী নিট লোকসান হয়েছিল ৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।
২০১৮-১৯ হিসাব বছরে কোম্পানিটির আয় হয়েছে ৩১ কোটি ৩১ লাখ টাকা। আলোচ্য হিসাব বছরে আয় আগের বছরের তুলনায় বাড়লেও কোম্পানিটির পরিচালন লোকসান গুনতে হয়েছে ৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা। আর বিভিন্ন খরচ শেষে কর-পরবর্তী নিট লোকসান হয়েছে ১৭ কোটি ১১ লাখ টাকা। আলোচ্য হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটি।
২০১৯-২০ হিসাব বছরে কোম্পানিটির আয় আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটি ১০৮ কোটি ৬ লাখ টাকা আয় করেছিল। এ সময়ে কোম্পানিটি পরিচালন মুনাফায় ফিরলেও বিভিন্ন খরচ শেষে কর-পরবর্তী নিট লোকসান গুনতে হয়েছে ২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের দশমিক ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে।
২০২০-২১ হিসাব বছরে কোম্পানিটির আয় হয়েছে ৫২ কোটি ৭ লাখ টাকা। এর বিপরীতে পরিচালন লোকসান হয়েছে ৪০ কোটি ২৩ লাখ টাকা। আর বিভিন্ন খরচ শেষে কর-পরবর্তী নিট লোকসান হয়েছিল ৪৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। আলোচ্য হিসাব বছরে শেয়ারেহাল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানিটি।
সর্বশেষ ২০২১-২২ হিসাব বছরে কোম্পানিটির আয় আরো কমার পাশাপাশি নিট লোকসানও কমেছে। এ সময়ে কোম্পানিটির আয় হয়েছে মাত্র ১৪ লাখ টাকা। এর বিপরীতে পরিচালন লোকসান গুনতে হয়েছে ২০ কোটি ১৬ লাখ টাকা। আর বিভিন্ন খরচ শেষে কর-পরবর্তী নিট লোকসান হয়েছে ২২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। লোকসানে থাকায় সর্বশেষ হিসাব বছরেও শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো লভ্যাংশের সুপারিশ করেনি কোম্পানিটি।
এদিকে চলতি ২০২২-২৩ হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট লোকসান হয়েছে ৪৪ লাখ টাকা। এ সময়ে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৬ পয়সা। এর আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির নিট লোকসান হয়েছে ৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এ সময়ে শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ১ টাকা ৩ পয়সা।
খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং ২০১৪ সালে শেয়ারবাজারে আসে। কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ১০০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ৭৩ কোটি ৪ লাখ টাকা। পুঞ্জীভূত লোকসান রয়েছে ৮৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ৭ কোটি ৩০ লাখ ৪০ হাজার। এর মধ্যে ৩৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে, ১ দশমিক ১১ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও বাকি ৫৯ দশমিক ১৩ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীর হাতে রয়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত বৃহস্পতিবার কেপিপিএলের শেয়ারের সর্বশেষ দর ছিল ৮ টাকা ৯০ পয়সা। সমাপনী দর এদিন একই ছিল। গত এক বছরে শেয়ারটির সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ দর ছিল যথাক্রমে ৮ টাকা ২০ পয়সা ও ১১ টাকা ৮০ পয়সা।