পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনারি লিমিটেড তিন বছর ধরে টানা লোকসানে রয়েছে। এমনকি প্রতি বছরই কোম্পানিটির লোকসানের বোঝা বড় হচ্ছে। পেট্রোলিয়াম পণ্যের বিক্রির চুক্তি শেষ হওয়ার কারণেই মূলত কোম্পানিটিকে লোকসান গুনতে হয়েছে। তবে সর্বশেষ হিসাব বছরের শেষের দিকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) সঙ্গে পণ্য বিক্রির নতুন চুক্তি করলেও এখনো লোকসান থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি কোম্পানিটি।
কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৯-২০ হিসাব বছর থেকে লোকসানে রয়েছে সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনারি। ওই হিসাব বছরে কোম্পানিটির বিক্রি হয়েছিল ৬৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। যেখানে আগের হিসাব বছরে বিক্রি হয়েছিল ৭২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির বিক্রি কমেছে ৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা বা ৬ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির পরিচালন লোকসান হয়েছে ১২ লাখ টাকার বেশি। যেখানে আগের হিসাব বছরে পরিচালন মুনাফা হয়েছিল ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। ২০১৯-২০ হিসাব বছরে কোম্পানিটির বিভিন্ন খরচ শেষে কর-পরবর্তী নিট লোকসান হয়েছে ১ কোটি ২৯ লাখ টাকা। যেখানে আগের হিসাব বছরে নিট মুনাফা হয়েছিল ৩১ লাখ টাকা। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৫১ পয়সা। যেখানে আগের হিসাব বছরে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছিল ১২ পয়সা। লোকসানের কারণে ২০১৯-২০ হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানিটি। এর আগের হিসাব বছরে ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল তারা।
আলোচ্য হিসাব বছরের ধারাবাহিকতায় পরের বছর অর্থাৎ ২০২০-২১ হিসাব বছরেও লোকসান হয়েছে কোম্পানিটির। ওই হিসাব বছরে এর আগের হিসাব বছরের তুলনায় কোম্পানিটির বিক্রি কমেছে ৬৫ কোটি ৯ লাখ টাকা বা ৯৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির বিক্রি হয়েছিল ৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। বিক্রি কমায় আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটিকে পরিচালন লোকসান গুনতে হয়েছে ৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। আর বিভিন্ন খরচ শেষে ২০২০-২১ হিসাব বছরে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট লোকসান হয়েছে ৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এ হিসাব বছরে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ২ টাকা ৪৯ পয়সা। আলোচ্য হিসাব বছরে শেয়াহোল্ডারদের ১০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটি।
বিপিসির সঙ্গে চুক্তি না থাকায় ২০২১-২২ হিসাব বছরে কোম্পানিটির পণ্য বিক্রি শূন্য দেখানো হয়েছে। চলতি বছরের ২৭ জুন থেকে সংস্থাটির সঙ্গে নতুন চুক্তি হওয়ার পর কোম্পানিটি পুনরায় হাইড্রোকার্বন সলভেন্ট পেট্রোলিয়াম পণ্যের বিক্রি শুরু করেছে। তবে বিক্রি বন্ধ থাকায় সর্বশেষ হিসাব বছরে কোম্পানিটিকে ৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা পরিচালন লোকসান গুনতে হয়েছে। আর বিভিন্ন খরচ শেষে আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট লোকসান হয়েছে ৭ কোটি ২৯ লাখ টাকা। ২০২১-২২ হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ২ টাকা ৬৩ পয়সা। লোকসানের কারণে সর্বশেষ সমাপ্ত হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো লভ্যাংশের সুপারিশ করেনি কোম্পানিটি।
এদিকে চলতি ২০২২-২৩ হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকেও (জুলাই-সেপ্টেম্বর) লোকসান হয়েছে কোম্পানিটির। আলোচ্য প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৮৬ পয়সা। এর আগের হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে যেখানে এ লোকসান ছিল ৫২ পয়সা। আলোচ্য প্রান্তিকে লোকসান হওয়ার কারণ হিসেবে কোম্পানিটি জানিয়েছে, নতুন উৎপাদন লাইন ন্যাপথা চালুর জন্য সর্বশেষ প্রান্তিকে তাদের আর্থিক খরচ বেড়েছে। এর পাশাপাশি পরিচালন ব্যয় ও প্রত্যক্ষ ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় আলোচ্য প্রান্তিকে কোম্পানিটিকে লোকসান গুনতে হয়েছে।
১৯৯০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সিভিও পেট্রোকেমিক্যালের অনুমোদিত মূলধন ১৫০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ২৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ ২ কোটি ৭২ লাখ টাকা। মোট শেয়ার সংখ্যা ২ কোটি ৭৭ লাখ ৬৯ হাজার ৫০০। এর ৪৫ দশমিক ৩১ শতাংশ উদ্যোক্তা পরিচালক, ১৫ দশমিক ২৯ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, দশমিক ৬৬ শতাংশ বিদেশী বিনিয়োগকারী ও ৩৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে।
ডিএসইতে বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির শেয়ারের সমাপনী দর ছিল ১৬৩ টাকা ৭০ পয়সা। গত এক বছরে শেয়ারটির দর ১৫৮ টাকা ৯০ পয়সা থেকে ২৪৩ টাকা ৩০ পয়সার মধ্যে ওঠানামা করেছে।
সর্বশেষ প্রকাশিত রেটিংস অনুসারে, সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনারির ঋণমান দীর্ঘমেয়াদে ‘ট্রিপল বি প্লাস’ ও স্বল্পমেয়াদে ‘এসটি-ফোর’। ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২০-২১ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন, চলতি বছরের ২২ নভেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকের কাছে কোম্পানির দায় ও রেটিং প্রকাশের দিন পর্যন্ত অন্যান্য প্রাসঙ্গিক গুণগত তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রত্যয়ন করেছে ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (সিআরএবি)।