নতুন ছয়টি জাহাজ যুক্ত হওয়ায় ২০১৯-২০ অর্থবছর বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি) নিট মুনাফা করেছে ৪১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। আগের অর্থবছর এর পরিমাণ ছিল ১৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা। অর্থাৎ আগের অর্থবছরের তুলনায় মুনাফা বেড়েছে প্রায় ২৪ কোটি টাকা বা ১৩৬ শতাংশ। এতে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির মুনাফা গত পাঁচ অর্থবছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
বাংলাদেশে শিপিং করপোরেশন তথ্যমতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিএসসির মোট আয় ৩২২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে পরিচালনা আয় হয়েছে ২৭৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে আয় হয়েছে ৪২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। অপরদিকে মোট ব্যয় হয়েছে ২৪৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে পরিচালনা ব্যয় হয়েছে ১৭৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা এবং প্রশাসনিক ও আর্থিক খাতের ব্যয় হয়েছে ৬৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এ সময়ে কর সমন্বয়ের পর নিট মুনাফা করেছে ৪১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।
অপরদিকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট আয় ছিল ২২২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা, ব্যয় ১৮৫ কোটি ১০ লাখ টাকা। নিট মুনাফা ছিল ১৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বিএসসির নিট মুনাফা বেড়েছে প্রায় ২৪ কোটি টাকা বেশি। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় মুনাফা বেড়েছে ২৩৭ শতাংশ।
সংস্থাটির একটি প্রতিবেদন জানা যায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের নিট মুনাফা ছিল পাঁচ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরের ছিল ছয় কোটি ৭২ লাখ টাকা। একইভাবে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ছিল আট কোটি ৬৬ লাখ টাকা এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ছিল ১২ কোটি ৫২ লাখ টাকা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের সমুদ্রপথে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ৭৫ বিলিয়ন ডলার। আর এ বাণিজ্যের প্রায় ৮২ শতাংশ হয় সমুদ্রের মাধ্যমে হয়। এতে বছরে সমুদ্রে পণ্য পরিবহনে ব্যবসা হয় প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ সংকটের কারণে নামেমাত্র বাজার অংশীদারিত্ব আছে বাংলাদেশের। ফলে পুরো টাকাটা চলে যাচ্ছে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে।
বাংলাদেশে শিপিং করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানান, উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এরই মধ্যে চীন সরকারের অর্থায়নে ছয়টি (তিনটি বাল্ক ক্যারিয়ার ও তিনটি প্রোডাক্ট অয়েল ট্যাংকার) নতুন জাহাজ বিএসসির বহরে যুক্ত হয়েছে। এসব জাহাজ বাণিজ্যিকভাবে পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত আছে। ফলে আমাদের নিট মুনাফাও বেড়েছে। এছাড়া ঢাকায় বিএসসির নিজস্ব জমিতে নির্মিত বিল্ডিংয়ের ভাড়া আসছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশে শিপিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর সুমন মাহমুদ সাব্বির বলেন, গত বছর ছয়টি নতুন জাহাজ যুক্ত হওয়ায় নিট মুনাফা ভালো হয়েছে। কিছুদিন আগেও মাত্র দুটি জাহাজ ছিল, যা শুধু লাইটারিং করত। এছাড়া আরও কিছু জাহাজ সংগ্রহের জন্য কাজ করা হচ্ছে। এ নিয়ে কাজ চলছে।
এ সময়ে তিনি আরও বলেন, বিএসসির মতো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ একটি সরকারি সংস্থার কমপক্ষে ৪০টি জাহাজ থাকা উচিত, কিন্তু বিনিয়োগ ও অর্থ সংকট থাকার কারণে সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে দেশের মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে এবং রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিএসসির উন্নতি ব্যাহত হচ্ছে। আর বাংলাদেশে পতাকাবাহী জাহাজ (স্বার্থরক্ষা) আইন, ২০১৯ বাস্তবায়ন করতে পারলে বিএসসি ভবিষ্যতে লাভজনক ও ঝুঁকিমুক্তভাবে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে অধিক লাভজনক সংস্থায় পরিণত হতো।