দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত জেমিনি সী ফুড উৎপাদন সক্ষমতার সঠিক ব্যবহার করতে পারছে না। তারপরেও প্রয়োজনের তুলনায় বেশি মজুদ পণ্য রাখা ও সরবরাহকারীকে অপ্রযোজনে বড় ধরনের অর্থ অগ্রিম প্রদান করা হয়েছে। যে কোম্পানিটিতে চলতি মূলধনের (ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল) ঘাটতি এবং পরিশোধিত মূলধনের কয়েকগুণ ঋণ রয়েছে। এসব পরিস্থিতি কোম্পানিটির ব্যবসা টিকিয়ে রাখাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক।
কোম্পানিটির ২০২০-২১ অর্থবছরের আর্থিক হিসাবে নিরীক্ষায় নিরীক্ষক এ তথ্য জানিয়েছেন।
নিরীক্ষক জানিয়েছেন, ক্রয়ের তুলনায় জেমিনি সী ফুডে মজুদ পণ্যের পরিমাণ খুবই বেশি। এছাড়া উৎপাদন সক্ষমতা, বিক্রিত পণ্যের ব্যয় ও বিক্রির তুলনায় মজুদ পণ্যের পরিমাণ খুবই বেশি। যা বছরের পর বছর বাড়ছে। কিন্তু মজুদ পণ্যের অবিক্রিত অংশের জন্য কোন সঞ্চিতি গঠন করেনি। যাতে করে ২০২০-২১ অর্থবছরে সম্পদ ও মুনাফা বেশি করে দেখানো হয়েছে।
এদিকে কোম্পানিটিতে ২০২১ সালের ৩০ জুনের আর্থিক হিসাবে ২৬ কোটি ১১ লাখ টাকার মজুদ পণ্য দেখানো হয়েছে। যা কোম্পানিটির মোট সম্পদের ৫০.৬১ শতাংশ। কিন্তু মজুদ পণ্যের সংখ্যা, মান ও মূল্যের বিষয়ে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ নিরীক্ষককে কোন টেকনিক্যাল স্ট্যাটাস সরবরাহ করেনি। এছাড়া করোনার কারনে স্বশরীরে মজুদ পণ্যের সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি নিরীক্ষক।
জেমিনি সী ফুডের অ্যাডভান্স, ডিপোজিট ও প্রি-পেমেন্টস প্রতিবছর বাড়ছে। এর মাধ্যমে ২০২১ সালের ৩০ জুন অ্যাডভান্স, ডিপোজিট ও প্রি-পেমেন্টস দাড়িঁয়েছে ১২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এরমধ্যে কাচাঁমাল সরবরাহকারীকে ১১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা অগ্রিম প্রদান রয়েছে। কোম্পানিতে অনেক মজুদ পণ্য থাকা সত্ত্বেও এই অগ্রিম প্রদানের কোন যুক্তি নেই। এই অপ্রয়োজনীয় অগ্রিম প্রদানের মাধ্যমে কোম্পানির ওয়ার্কিং ক্যাপিটালকে (চলতি মূলধন) বাধাগ্রস্থ করা হচ্ছে। যা কোম্পানির আয়ে প্রভাব ফেলছে। একইসঙ্গে কোম্পানির ঋণের পরিমাণ বাড়ছে।
কোম্পানি কর্তৃপক্ষ হাতে নগদ হিসেবে দেখিয়েছে ৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। যা ক্রয়-বিক্রয়ের তুলনায় খুবই বেশি। যা কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট দ্ধারা যাচাই করা। কিন্তু করোনার কারনে নিরীক্ষক যাচাই করতে পারেনি।
বর্তমানে কোম্পানিটির উৎপাদন সক্ষমতার ব্যবহার খুবই নাজুক অবস্থায় বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক। যা আগের বছরের থেকে ৪.৯৬ শতাংশ কমে এসেছে। এর মাধ্যমে কোম্পানিটির উৎপাদন সক্ষমতার ব্যবহার নেমে এসেছে ১৪.৪৫ শতাংশে। যার পরিমাণ আগের অর্থবছরে ছিল ১৯.৪১ শতাংশ। এ বিষয়ে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ নিরীক্ষককে জানিয়েছেন, করোনায় অর্থনীতি নিম্নমুখী হওয়ায় চাহিদা কমে গিয়ে এমনটি হয়েছে। এছাড়া চলতি মূলধনের ঘাটতিও উৎপাদন সক্ষমতা ব্যবহার হ্রাসের কারন হিসেবে রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে নিরীক্ষক জানিয়েছে, আর্থিক অবস্থা শক্তিশালী করার জন্য অবশ্যই উৎপাদন সক্ষমতার সর্বোচ্চ পর্যায়ে ব্যবহার করতে হবে। কারন কোম্পানিটির সংরক্ষিত আয় (রিটেইন আর্নিংস) এরইমধ্যে ২০২১ সালের ৩০ জুন ঋণাত্মক দাড়িঁয়েছে ৪ কোটি ২৬ লাখ টাকায়। এছাড়া ৪৮ কোটি ৩১ লাখ টাকার ব্যাংক ঋণ ও লিজ দায় রয়েছে। যা কোম্পানির ইক্যুইটি ও দায়ের ৯৩.৬৫ শতাংশ।
এসব বিষয়গুলো কোম্পানির ব্যবসা টিকিয়ে রাখার অনিশ্চয়তা তৈরী করেছে বলে মতামত দিয়েছেন নিরীক্ষক।
ব্যবসা টিকিয়ে রাখা ঝুকিঁতে থাকলেও জেমিনি সী ফুডের শেয়ার দর পিছিয়ে নেই। সোমবার (১০ জানুয়ারি) লেনদেন শেষে কোম্পানির শেয়ার দর দাড়িঁয়েছে ২৯০.২০ টাকায়। তারপরেও শুধুমাত্র ৪ কোটি ৭০ লাখ টাকার মতো স্বল্প মূলধনী কোম্পানি হওয়ায় কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারটিকে আকাশচুম্বি অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।