পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সম্প্রতি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) যে ৭ জন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে, তা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ)। একইসঙ্গে তারা স্টক এক্সচেঞ্জের ডি-মিউচুয়ালাইজেশন স্কিম মেনে নমিনেশন অ্যান্ড রেমুনারেশন কমিটি (এনআরসি) গঠন বা পুনর্গঠন এবং তাদের প্রস্তাবিত তালিকা থেকে পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার তাগিদ দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই আহ্বান জানিয়েছে ডিবিএ।
উল্লেখ, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের সব স্বতন্ত্র পরিচালক পদত্যাগ করেন। শূন্য পদ পূরণের লক্ষ্যে গত ১ সেপ্টেম্বর বিএসইসি নিজ ক্ষমতাবলে ও একক সিদ্ধান্তে ৭ জন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেয়। নিয়োগপ্রাপ্তরা হলেন, মালদ্বীপ ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান কে এ এম মাজেদুর রহমান, আর্মি ইনস্টিউট অফ বিজনেস এ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ডাইরেক্টর জেনারেল ও প্রফেসর মেজর জেনারেল (অবঃ) ডক্টর মোঃ কামরুজ্জামান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ডক্টর নাহিদ হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ মফিজুল ইসলাম রাশেদ, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, ৪৬ ব্রিগেড, বাংলাদেশ আর্মি, সেন্টার অন ইনটিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফর এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিকের (সিরডাপ) ডাইরেক্টর রিসার্চ ডক্টর মোঃ হেলালউদ্দিন, মেটলাইফ বাংলাদেশের সাবেক জেনারেল ম্যানেজার সৈয়দ হাম্মাদুল করীম, এবং বাংলাদেশ ডাটা সেন্টার ও ডিজাস্টার রিকভারী সাইট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও, বাংলাদেশ ব্যাংকের (লিয়েন) চীফ ইনফরমেশন সিকিউরিটি অফিসার (CISO) মোঃ ইসহাক মিয়া।
এর আগে বিএসইসির পক্ষ থেকে ডিএসইর কাছে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের জন্য তালিকা আহ্বান করেছিল বিএসইসি। সে অনুসারে স্টক এক্সচেঞ্জটির পক্ষ থেকে একটি তালিকাও জমা দেওয়া হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে এই তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের বিবেচনায় না নিয়ে এবং ডিএসইর সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে নিজের পছন্দ মত ৭ জনকে পরিচালক নিয়োগ করে বিএসইসি।
বিষয়টিকে ডিএসইর সদস্যরা ডি-মিউচুয়ালাইজেশন আইনের লংঘন ও সাংঘর্ষিক মনে করছেন। বিএসইসির নিয়োগকৃত পরিচালকদের মধ্যে ২ জন পরিচালকের নিয়োগের বিষয়টি ডি-মিউচুয়ালাইজেশন আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে দাবি জানিয়েছেন তারা। ওই আইন অনুসারে, সর্বশেষ ৩ বছরের মধ্যে কোনো ব্রোকারহাউজের সঙ্গে সম্পর্ক থাকা এবং রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তি স্বতন্ত্র পরিচালক হবার জন্য যোগ্য নন। কিন্তু বিএসইসির তালিকায় থাকা কে এ এম মাজেদুর রহমান একটি ব্রোকারহাউজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, অন্যদিকে ডক্টর নাহিদ হোসেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব, যে দপ্তরটি পুঁজিবাজারকে রেগুলেট করে থাকে।
এমন বাস্তবতায় ডিবিএ আজ বিএসইসি চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি দিয়ে ৭ পরিচালক নিয়োগের আইনী অসঙ্গতি তুলে ধরে এই আইন অনুসরণ করে এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
ডিবিএর চিঠিতে বলা হয়, গত ১৫ বছর ধরে চলা দুটি কমিশনের বিনিয়োগকারী বিরোধী, অস্বচ্ছ এবং স্বার্থান্বেষী সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার একটি অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে পড়েছে। স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা আশা করেছিলেন যে, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে আমাদের একটি স্বচ্ছ, বিনিয়োগকারী-বান্ধব বাজার থাকবে। পাশাপাশি বিএসইসি একটি গণতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রক হিসাবে কাজ করবে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করবে।
বিএসইসি ডিএসইর পর্ষদে সাতজন স্বাধীন পরিচালক নিয়োগের জন্য ডিমিউচুয়ালাইজেশন অ্যাক্ট ২০১৩-এর ২৪ ধারা প্রয়োগ করেছে। এবিষয়ে আমরা আইনি পরামর্শ নিয়ে জেনেছি, ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইনের ২৪ ধারাটি আরও কার্যকরভাবে এবং যথাযথভাবে অনুসরণ করে এবং ডিমিউচুয়ালাইজেশন স্কিম মেনে ডিএসইর এনআরসি গঠন বা পুনর্গঠনে কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
চিঠিতে বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে ডিএসইর সাতজন পরিচালকের নিয়োগের নির্বাচন প্রক্রিয়ার বিষয়ে কয়েকটি প্রস্তাব করেছে ডিবিএ। প্রস্তাবগুলো হলো-
১. অনুগ্রহ করে ডিমিউচুয়ালাইজেশন অ্যাক্ট ২০১৩-এর ধারা ২৪ প্রয়োগ করে বিদ্যমান চারজন নির্বাচিত শেয়ারহোল্ডার পরিচালকের সমন্বয়ে এনআরসি গঠন করুন।
২. ডিএসইর স্বতন্ত্র পরিচালক মনোনয়নের সুপারিশ বিএসইসিতে পাঠানোর জন্য এনআরসিকে যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করতে দিন এবং ডিএসই ও পুঁজিবাজারের স্বার্থে ডিমিউচুয়ালাইজেশন স্কিম অনুযায়ী বিএসইসি থেকে পরিচালক চূড়ান্ত করার পদ্ধতি অনুসরণ করতে দিন।
উল্লেখিত বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন একটি বিনিয়োগকারী-বান্ধব বাজার তৈরি করতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি ডিএসইকে ‘বৈচিত্রপূর্ণ কার্যকরী প্রার্থী’ মনোনয়নে স্বাধীনভাবে কাজ করতে সাহায্য করবে।