১৯৯৬ এবং ২০১০ সালের পুঁজিবাজার কেলেঙ্কারিতে তদন্তে অনেক কিছুই বেরিয়ে এসেছিল। কিন্তু তার আলোকে কিছুই করা হয়নি। কাউকে শাস্তি দেওয়া হয়নি। বরং তদন্তে উঠে আসা দরবেশ, পীরেরা দাঁড়ি কামানোর আগ পর্যন্ত শেয়ারবাজার চালিয়েছে। এখন সেইসব দরবেশ পীরেরা নেই। কিন্তু তাদের মুরিদরা রয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটির সদস্য ইয়াওয়ার সাঈদ।
সোমবার (০২ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির তদন্ত কমিটির সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
ইয়াওয়ার সাইদ বলেন, ১৯৯৯ সালের ২৯ আগস্ট প্রথম মিউচুয়াল ফান্ডের উদ্বোধন করা হয়। এরপরে ২৫ বছর পার হয়ে গেলেও শেয়ারবাজার ২৫ কদমও এগোয়নি। বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঋণাত্মক হয়েছে।
তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোতে যেসব অনিয়ম দুর্নীতি হয়েছে শেয়ারবাজারে, সেগুলো সাংবাদিকরা রিপোর্ট করেছেন। এখন এসব রিপোর্টের ভিত্তিতে আমরা তদন্ত করব। আমরা এখন আছি এখানে কোনো রাজনৈতিক চাপ নেই। এখন কোনো এমপি মন্ত্রী আমাদের বলবে না ওর নামে রিপোর্ট করো না। আমরা নিরপেক্ষভাবে কাজ করব। আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ হবো। মানুষ যেন আমরা মরে গেলেও বলে যে মার্কেটের জন্য কিছু লোক কাজ করে গেছে।
অনুষ্ঠানে বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেন, যারা তদন্ত কমিশনে আছেন তাদের আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, কমিশন থেকে কোনো ধরনের প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হবে না। কমিটি স্বাধীনভাবে কাজ করবে। তাড়াহুড়ো করে কোনো কাঁচা কাজ হবে না। আমরা কমিটির কাছে প্রমাণসহ অনিয়মের চিত্র চাই। তাই এখানে বিভিন্ন খাতের বহু বছরের অভিজ্ঞ সম্পন্ন ব্যক্তিদের এই তদন্ত কমিটিতে রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, গণমাধ্যমে উঠে আসা আলোচিত বিষয়গুলো নিয়ে তদন্ত শুরু করবে তদন্ত কমিটি। শুরুতে ১২টি কোম্পানি নিয়ে তদন্ত শুরু হবে। এরপরে ধারাবাহিকভাবে অন্যসব কোম্পানি নিয়ে তদন্ত করা হবে। এক্ষেত্রে সাংবাদিকরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্টেকহোল্ডার।
তদন্ত কমিটির ৫ জনের মধ্যে ২ জন বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত হওয়ায় এরইমধ্যে কমিটি নিয়েই আলোচনা শুরু হয়েছে- এমন প্রশ্নে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, আমরা যেখানেই যাই না কেনো, সেখানো কেউ না কেউ অন্য কোথাও জড়িত থাকার বিষয়টি আসে। এখন আমাদের তদন্ত কমিটি তদন্ত করতে গিয়ে যদি কেউ কোনটার সঙ্গে সর্ম্পৃক্ততার বিষয় আসে, তখন ওই সদস্য সেই নির্দিষ্ট বিষয়ের ক্ষেত্রে সড়ে দাঁড়াবে। কমিটির বাকি সদস্যরা তদন্ত করবে। এটা সারা দুনিয়ায় হয়। খুবই সাধারন একটি বিষয়।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, শেয়ারবাজার সামনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। এই কমিশন গঠনের ১১ দিনের মাথায় আমরা এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ভবিষ্যতে আরও অনেক কাজ করব এটাই স্পষ্ট বার্তা। সবার কাছে শেয়ারবাজারকে আস্থার জায়গা করা হবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান জিয়া উদ্দিন আহমেদ বলেন, কোন কোন জায়গায় অনিয়ম দুর্নীতিগুলো হয়েছিল, এগুলো আমরা সাংবাদিকদের বিভিন্ন রিপোর্ট থেকে বের করব।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও তদন্ত কমিটির সদস্য মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আমাদের সামনে যে সময়টা এসেছে এটা বারবার আসে না। আমরা প্রতিশ্রুতি করছি আমাদের সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করব।
তদন্ত কমিটির আরেক সদস্য মো. শফিকুর রহমান বলেন, ছাত্র জনতা একটি গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমাদের যে সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে আমরা কাজ করতে চাই।
তদন্ত কমিটির সদস্য ব্যারিষ্টার জিসান হায়দার বলেন, শেয়ারবাজারের যেসব দুর্নীতি কারসাজি হয়েছে এগুলোর যেসব ক্রিমিনাল অফেন্স আছে, এগুলো নিয়ে আমি কাজ করব