শেয়ারবাজারে দুর্নীতির বরপুত্র শিবলী রুবাইয়াত-উল- ইসলামের পদত্যাগের পর থেকেই বাাজরে সেল প্রেসার বাড়ছিল। সেল প্রেসারের চাপে পতন প্রবণতাও ঝেঁকে বসছিল।
অন্তবর্তী সরকারের নিয়োগ করা বর্তমান চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ দায়িত্ব গ্রহণের পর শিবলীর সহযোগিরা আরও বেপরোয় হয়ে পড়ে। যার কারণে গত দুই কর্মদিবসে পতনের বড় চাপে বাজার বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বাজার সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, অস্বাভাবিক এই পতনের সঙ্গে জড়িত ছিল স্টক এক্সচেঞ্জের কিছু অসাদু কর্মকর্তাও।
শিবলীর সহযোগিদের এই অসৎ উদ্দেশ্য আঁচ করতে পেরে বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যান বুধবার বিকালে দুটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। প্রথমটি হলো-উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের কার্যক্রম খতিয়ে দেখতে বিএসইসি কর্মকর্তাদের নিয়ে কমিটি গঠন। দ্বিতীয়টি হলো-শিবলী রুবাইয়াত এবং তার অন্যতম সহযোগি আবুল খায়ের হিরুসহ শেয়ারবাজারের ১১ ব্যক্তির বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) লেনদেন স্থগিতকরণ।
এই দুই সিদ্ধান্তের পরও আজ বৃহস্পতিবার আগের দুই কর্মদিবসের মতো শিবলীর প্রেতাত্মারা লেনদেনের শুরুতেই সর্বনিম্ন দরে শতাধিক কোম্পানির লাখ লাখ শেয়ারের সেল বসিয়ে দেয়। এতে লেনদেনের প্রথম প্রহরেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন আতঙ্ক ভর করে। যার ফলে লেনদেনের ২২ মিনিটের মাথায় প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ৫২ পয়েন্ট পড়ে যায়।
এরপর নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং জোরদার করাতে বাজার ঘুরে দাঁড়াতে থাকে। এই সময়ে শিবলীর প্রেতাত্মাদের চোটপাটও কমতে থাকে এবং বাজারও ইতিবাচক ধারায় ঘুরতে থাকে। এরপর দিনভরই ইতিবাচক প্রবণতায় লেনদেন হয়। এতে পতনের বড় আতঙ্ক কাটিয়ে শেষবেলায় বাজার বড় উত্থানের পথে অগ্রসর হয়।
শেয়ারবাজারের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র শেয়ারনিউজকে জানায়, বাজারে এখন শিবলী গংদের দাপট কমবে। বিপরীতে যেসব বড় বিনিয়োগকারী এতোদিন নিষ্ক্রিয় ছিল এবং আওয়ামী লীগ সরকারের রোষানলে পড়ে দেশত্যাগ করেছিলেন, তারা দেশে ফিরছেন এবং ধীরে ধীরে শেয়ারবাজারমুখী হচ্ছেন।
সূত্রটি আরও জানায়, এখন প্রতিদিনই কিছু কিছু নিষ্ক্রিয় বিনিয়োগকারী বাজারে সক্রিয় হচ্ছেন। পাশাপাশি নতুন নতুন বিনিয়োগকারীদেরও বাজারে আগমণ ঘটছে। যার ফলে সামনে বাজার অনেক ভালো হবে এবং শক্তিমত্তা অনেক বৃদ্ধি পাবে।
বৃহস্পতিবারের বাজার পর্যালোচনা
আজ ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৯৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭০০ পয়েন্টে। আগেরদিন সূচক কমেছিল ১০৮ পয়েন্ট।
এদিন ডিএসইতে ৭৭৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের দিন হয়েছিল ৫৩৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। আজ লেনদেন বেড়েছে ২৪১ কোটি ৭২ লাখ টাকার বা ৪৫ শতাংশ।
এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৯৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ১৫১টি বা ৩৮.৩২ শতাংশের। আর দর কমেছে ২১০টি বা ৫৩.২৯ শতাংশের ও দর পরিবর্তন হয়নি ৩৩টি বা ৮.৩৭ শতাংশের।
অপর শেয়ারবাজার চিটাগাং স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) আজ ১৩ কোটি ২২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।
আজ সিএসইতে লেনদেন হওয়া ১৯৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ৬৯ টির, কমেছে ১১০টির এবং পরিবর্তন হয়নি ১৬টির।
এদিন সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৯৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁডিয়েছে ১৬৩৯৬ পয়েন্টে।