সব মিলিয়ে ২৪ হাজার ৯৬৯ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ নিয়ে একীভূত হচ্ছে পাঁচ দুর্বল ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হলো রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের বিডিবিএল, বেসিক ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক এবং বেসরকারি খাতের পদ্মা ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক।
বিডিবিএল ব্যাংককে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে, বেসিক ব্যাংককে বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংকের সঙ্গে, ন্যাশনাল ব্যাংককে ইউনাইটেড কর্মাশিয়াল ব্যাংকের সঙ্গে, রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককে আরেক রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে এবং বেসরকারি পদ্মা ব্যাংককে একীভূত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে।
শুরুতে ১০ দুর্বল ব্যাংককে তুলনামূলক ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার কথা বলা হয়। রেড জোনে থাকা ব্যাংকগুলো দুর্বল ব্যাংকগুলোকেও চিহ্নিত করা হয়।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে অবস্থান থেকে সরে আসে। সর্বশেষ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বলা হয়েছে ১০টি নয়, আপাতত পাঁচটি দুর্বল ব্যাংককে একীভূত করা হচ্ছে। এই পাঁচ ব্যাংকের অভিজ্ঞতা নিয়ে পরে নতুন করে চিন্তা করা হবে।
ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের বোঝায় পরিণত হওয়া, সুশাসনের অভাব ও নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে নিমজ্জিত ছিল। ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গাইডলাইন দেওয়া থেকে শুরু করে পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেও কোনো ফল আসেনি। শেষ পর্যন্ত ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার মধ্যে দিয়ে এসব ব্যাংকের অস্তিত্ব মুছে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
অন্য ব্যাংকের সঙ্গে বিলিন হতে যাওয়া ব্যাংকগুলোর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের বিডিবএল ব্যাংকের খেলাপি ঋণ রয়েছে ৯৮২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। ব্যাংকটির মোট বিতরণ করা ঋণের ৪২ দশমিক ৪৬ শতাংশ খেলাপি। বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আট হাজার ২০৪ কোটি টাকা, যা ব্যাংকটির মোট বিতরণ করা ঋণের ৬৪ শতাংশ।
ন্যাশনাল ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১২ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২৯ শতাংশ। রাজশাহী কৃষি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা। ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার ২১ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
বেসরকারি খাতে চতুর্থ প্রজন্মের আলোচিত ফার্মাস ব্যাংক পদ্মা ব্যাংকে রূপান্তর হয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। পদ্মা ব্যাংক রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের ব্যাংকগুলো মিলে দুই দফায় তহবিল দিয়ে ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। ব্যাংকটি একীভূত হচ্ছে বেসরকারি শরীয়া ভিত্তিক এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে। পদ্মা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক হাজার ৮৮০ কোটি ৫১ লাখ টাকা, যা ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের ৪৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
ভালো ব্যাংক বলে যেসব ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত করা হচ্ছে সেসব ব্যাংকের সবগুলোর খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি ভালো নয়। ১০ শতাংশের ওপরে খেলাপি ঋণ রয়েছে। যদিও উচ্চ খেলাপি ঋণ খারাপ ব্যাংকের একমাত্র চিহ্ন নয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৩ হাজার ১৫০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের বড় এই ব্যাংকটির কোনো প্রভিশন ঘাটতি নেই।
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২ হাজার ৫০০ কোটি পাঁচ লাখ টাকা, যা ব্যাংকটির মোট ঋণের পাঁচ শতাংশ। ব্যাংকটির কোনো প্রভিশন ঘাটতি নেই।
আরেক সরকার মালিকানাধীন বিশেষায়িত ব্যাংক বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ তিন হাজার ৯৮০ কোটি ২৯ লাখ টাকা, খেলাপি ঋণের হার ১২ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
এক্সিম ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক হাজার ৬২৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। শরীয়া ভিত্তিক পরিচালিত ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার ৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ।