শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর থেকেই মুনাফায় ধারাবাহিকভাবে পতন হয়েছে একমি পেস্টিসাইডসের। মুনাফা পতনের সঙ্গে কোম্পানিটির ডিভিডেন্ডেও পতন হয়েছে। এবার কোম্পানিটি যে পরিমাণ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে, তা কেবল বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণাই নয়, শেয়ারবাজারে হাস্যকর ডিভিডেন্ড ঘোষণার কোম্পানিতেও পরিণত হয়েছে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২১ সালে কোম্পানিটি যখন শেয়ারাবাজরে তালিকাভুক্ত হয়, সেই বছর কোম্পানিটি নীট মুনাফা দেখিয়েছিল ২২ কোটি ২১ লাখ টাকা। যা আগের বছরের তুলনায় ১৪.০৭ শতাংশ বেশি ছিল। তালিকাভুক্তির পর ২০২২ সালেই কোম্পানিটির মুনাফা কমে যায় ১৫ শতাংশ। এবছর কোম্পানিটির মুনাফা কমে দাঁড়ায় ১৮ কোটি ৮০ লাখ টাকায়। সর্বশেষ ২০২৩ সালে মুনাফা আরও কমে দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৯৩ লাখ টাকায়।
এতে দেখা যায়, তালিকাভুক্তির আগে কোম্পানিটির মুনাফা ৩ টাকার ওপরে থাকলেও তালিকাভুক্তির পর ২০২২ সালে শেয়ার প্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয় ২ টাকা ১২ পয়সায়। পরের বছর ২০২২ সালে ইপিএস কমে যায় ১ টাকা ৫১ পয়সায়। সর্বশেষ ২০২৩ সালে ইপিএস আরও কমে দাঁড়ায় ৯৬ পয়সায়।
মুনাফা হ্রাসের কারণে কোম্পানিটির ডিভিডেন্ডও কমেছে ধারাবাহিকভাবে। তালিকাভুক্তির প্রথম বছর ২০২২ সালে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ৫ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে। কিন্তু এবছর ২০২৩ সালে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে ০.১০ শতাংশ। অর্থাৎ শেয়ার প্রতি ১ পয়সা।
এতে দেখা যায়, ২০২২ সালে ১ টাকা ৫১ পয়সা মুনাফার বিপরীতে ডিভিডেন্ড দিয়েছে ৫০ পয়সা। এবছর ২০২৩ সালে মুনাফা ৯৬ পয়সার বিপরীতে ডিভিডেন্ড দিয়েছে ১ পয়সা।
বিনিয়োগকারীরা বলছেন, এটি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বড় ধরণের প্রতারণা। এই ধরণের হাস্যকর ডিভিডেন্ড এর আগে কোনো কোম্পানি দেয়নি।
বিনিয়োগকারীরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কোম্পানিটি ডিভিডেন্ড নীতিমালা পরপর দুই বছরই লংঘন করেছে। যেখানে মুনাফার অন্তত ৭০ শতাংশ ডিভিডেন্ড আকারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিতরণের কথা, সেখানে একমি পেস্টিসাইডস সেই নিয়মের তোয়াক্কাই করেনি।
এখন নিয়ন্ত্রক সংস্থার দায়িত্ব কোম্পানিটির বিরুদ্ধে এমন দায়িত্বহীন ও অনৈতিক আচরণের আইনগত ব্যবস্থা নেয়া। কারণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা কোম্পানিটির আর্থিক নানা অনিয়ম জেনেও কোম্পানিটিকে আইপিও-তে আসার অনুমিত দিয়েছিল।
উল্লেখ্য, একমি পেস্টিসাইডসকে যখন শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের অনুমতি দেয়া হয়, তখন কয়েকটি নিউজ পোর্টাল এর বিভিন্ন আর্থিক অনিয়ম তুলে ধরে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। তারপরও নিয়ন্ত্রক সংস্থা কোম্পানিটির আইপিও অনুমোদন বহাল রাখে এবং কোম্পানিটিকে কোনো প্রকার সতর্ক করেনি।
কোম্পানিটির হাস্যকর ডিভিডেন্ডের খবর আসার পর বৃহস্পতিবার ডিএসই-তে এর শেয়ার দরপতনের শীর্ষ তালিকায় শীর্ষ অবস্থানে ছিল। শেয়ারটি কিনে বিনিয়োগকারীরা এখন বড় লোকসানের মুখে পড়েছে।