1. [email protected] : ইকোনোমিক বিডি প্রতিবেদক : ইকোনোমিক বিডি প্রতিবেদক
  2. [email protected] : ইকোনোমিক বিডি : ইকোনোমিক বিডি
ব্যাংক খাতে আমানত বাড়লেও ঋণ বিতরণ নেমেছে অর্ধেকে
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৯ অপরাহ্ন

ব্যাংক খাতে আমানত বাড়লেও ঋণ বিতরণ নেমেছে অর্ধেকে

  • পোস্ট হয়েছে : বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
Bank

ব্যাংক খাতে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে আমানত বাড়লেও কমেছে ঋণ বিতরণ। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় আমানত বেড়েছে প্রায় ৪১ হাজার কোটি টাকা। তবে এ সময় ঋণ বিতরণ অর্ধেকে নেমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়।

খাত-সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ৬-৯ সুদহার তুলে দেয়ার পর থেকে ব্যাংক খাতে আমানত বাড়তে শুরু করেছে, তার প্রভাবে আগের তুলনায় কয়েকগুণ আমানত বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে ঋণপত্র (এলসি) খোলা কমার কারণে ঋণ বিতরণ কমেছে। কারণ অধিকাংশ এলসি খোলা হয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে। এরপরও ব্যাংক খাতে যে তারল্য সংকট তা কিছু ব্যাংকের ঋণ আদায় না হওয়ার কারণে। কারণ সংকটে থাকা অনেক ব্যাংকের আমানতের চেয়ে ঋণ বেড়ে গেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ব্যাংক খাতে আমানত বেড়েছে ৫৯ হাজার ৩৩ কোটি টাকা। গেল অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছিল ১৮ হাজার ১১৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে আগের বছরে একই সময়ের চেয়ে আমানত বেড়েছে ৪০ হাজার ৯১৯ কোটি টাকা বা ২২৬ শতাংশ। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের আমানতের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৫৪ হাজার ২৮৮ কোটি টাকায়।

তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ঋণ বিতরণের বিপরীত চিত্র দেখা গেছে। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ঋণ বিতরণ হয়েছে ৪৪ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৯০ হাজার ১৩ কোটি টাকা। সে হিসেবে ঋণ বিতরণ কমেছে ৪৫ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা বা ৫০ দশমিক ৬১ শতাংশ। ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের ঋণ বিতরণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৭১ হাজার ২২২ কোটি টাকায়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোসলেহ উদ্দীন আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, ব্যাংক খাতে আমানত বাড়ছে মূলত ৬-৯ ঋণের সুদহার তুলে দেয়ায়। কারণ এখন ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করতে পারছে ১৩ শতাংশ সুদে। যে কারণে বেশিরভাগ ব্যাংক আমানতের সুদহার বৃদ্ধি করেছে। ফলে আমানত বেড়েছে। তবে ঋণ বিতরণ কমার কারণ এলসি খোলা অনেক কমেছে। কারণ বেশিরভাগ আমদানি-পরবর্তী অর্থায়ন ব্যাংক ঋণ থেকেই হয়।

তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে বিভিন্ন খাতের ব্যবসা করা কঠিন হচ্ছে। বিশেষ করে স্প্র্রিং, ডাইং, ওয়াশিং এবং সিরামিক খাতে। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতির কারণেও খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই যাদের প্রয়োজন অনুযায়ী যতটুকু করা দরকার, সেই অনুযায়ী তা করতে পারছে না। এজন্য ঋণের চাহিদা কমে গেছে। এছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ প্রবৃদ্ধি কমিয়েছে। তারও প্রভাব রয়েছে।

ডলার সংকটের কারণে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানির এলসি খোলায় কড়াকড়ি আরোপ করে। ফলে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে আমদানি এলসি কমেছে ৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ। একই সময় এলসি নিষ্পত্তি কমেছে ১৮ শতাংশের বেশি।

আমানত বাড়লেও ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট কেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কিছু ব্যাংকের আমানতের চেয়ে ঋণ বেড়ে গেছে। এসব ব্যাংক ঋণ আদায় করতে পারছে না। ফলে ব্যাংকগুলোয় তারল্য সংকট বাড়ছে।

জানা যায়, তারল্য সংকটের কারণে এখন ব্যাংকগুলো প্রতিদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ১৫ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ধার করছে। গত সোমবার বিভিন্ন ব্যাংক ১৮ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তারল্য সহায়তা নিয়েছে।

এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সরকারের নিট ব্যাংক ঋণ ঋণাত্মক অবস্থায় রয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রথম ছয় মাসে নিট ব্যাংক ঋণ ৩ হাজার ১১ কোটি টাকা ঋণাত্মক। যেখানে গত অর্থবছরের একই সময়ে ২৬ হাজার ২২ কোটি টাকা ইতিবাচক ছিল। চলতি অর্থবছর সরকার ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে টাকা তুলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পরিশোধ করছে। ফলে ব্যাংক ঋণ ঋণাত্মক পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েছে।

বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ তুলতে সরকার ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদহার কয়েক দফা বাড়িয়েছে। সর্বশেষ ১৯ ফেব্রুয়ারি ৯১ দিন মেয়াদি সরকারি ট্রেজারি বিলের সুদহার ছিল ১১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। গত ২ অক্টোবর একই মেয়াদের বিলে সর্বোচ্চ সুদ ছিল ৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এছাড়া ১৮২ ও ৩৬৪ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদ ছিল যথাক্রমে ১১ দশমিক ৪৫ ও ১১ দশমিক ৬০ শতাংশ। গত ২ অক্টোবর এসব বিলের সুদহার ছিল যথাক্রমে ৭ দশমিক ৬০ শতাংশ ও ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, গত অর্থবছর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে। তাই চলতি অর্থবছর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে। এ ঋণ আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংককে শোধ করছে। বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকার উচ্চ সুদে ঋণ তুলছে, যার কারণে ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদ বেড়েছে।

শেয়ার দিয়ে সাথেই থাকুন..

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ