দীর্ঘদিন ধরেই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় রয়েছে পুঁজিবাজার। তবে ঊর্ধ্বমুখী পুঁজিবাজারে হঠাৎ করেই ছন্দপতন দেখা দিয়েছে। চার কার্যদিবসের মধ্যে দুদিনই বড় পতন দেখা গেছে। বিষয়টি ভাবাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের। বাজারের স্থিতিশীলতা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দে রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। যার জের ধরে আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি বাড়িয়েছেন তারা। এর ফলে গতকাল এক যোগে কমতে দেখা গেছে তালিকাভুক্ত ৭টি খাতের শতভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর।
তবে পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বাজারে দীর্ঘদিন ধরে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা রয়েছে। যে কারণে বিনিয়োগকারীরা এখন মুনাফা তুলছেন। আর মুনাফা তোলার চাপেই কমেছে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদর। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
গতকাল যে খাতগুলোর একটি প্রতিষ্ঠানেরও শেয়ার বা ইউনিট দর বাড়েনি সেগুলো হচ্ছে সিমেন্ট, সিরামিক, তথ্যপ্রযুক্তি, মিউচুয়াল ফান্ড, কাগজ ও প্রকাশনা, চামড়া এবং ভ্রমণ ও অবকাশ। এর মধ্যে সিমেন্ট খাতের একটি, সিরামিক খাতের দুটি, তথ্য ও প্রযুক্তি খাতের একটি, মিউচুয়াল ফান্ডের পাঁচটি এবং কাগজ ও প্রকাশনা খাতের একটি কোম্পানির শেয়ারদর অপরিবর্তিত ছিল।
বাজারে গতকাল সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিল নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানি রবি। লেনদেন শুরু হওয়ার পর গতকাল প্রথমবারের মতো দর কমতে দেখা যায় এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের। দিন শেষে রবির শেয়ারদর কমে পাঁচ টাকা ৬০ পয়সা। দর স্থির হয় ৬৪ টাকা ৫০ পয়সায়। মূলত ভালো দর থাকায় এ শেয়ার থেকে গতকাল মুনাফা তুলেছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে বিক্রয় চাপে দর কমেছে। গতকাল কোম্পানিটির প্রায় চার কোটি শেয়ার কেনাবেচা হয়। এদিন বাজারে বিক্রয় চাপ থাকার কারণে ডিএসইর সার্ভারে লেনদেন জটিলতা দেখা যায়। বিনিয়োগকারীরা কোনো ক্রয়-বিক্রয় আদেশ দিলে তা কার্যকর হতে বেশ সময় লেগে যায়। যদিও শেষ পর্যন্ত এ সমস্যা ছিল না বলে জানান ব্রোকারেজ হাউস কর্মকর্তারা।
রবির পাশাপাশি অন্যান্য খাতের বেশিরভাগ শেয়ার থেকে গতকাল মুনাফা তোলেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে এসব শেয়ারের দর কিছুটা কমে যায়। বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, শেয়ারদর হ্রাস ও বৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিক ঘটনা। কোনো শেয়ারের দরই কারণ ছাড়া টানা বৃদ্ধি পাওয়া কিংবা হ্রাস পাওয়া স্বাভাবিক নয়। কোনো কারণে শেয়ারদর কমে গেলে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। যে কোনো পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের ধৈর্যধারণ করা উচিত।
গত বছরের মার্চে মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপে নিস্তেজ হয়ে পড়ে দেশের পুঁজিবাজার। তখন দুই মাসেরও বেশি সময় পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ রাখা হয়। পরে লেনদেন শুরু হলে পুঁজিবাজার ফের চাঙা হয়ে ওঠে। ফলে ধারাবাহিকভাবে মূল্যসূচক ও লেনদেন বাড়তে শুরু করে। যার জের ধরে চলতি বছরের প্রথমদিনে ডিএসইর সূচক একদিনেই ২১৬ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়। পরবর্তী সময়ে বেশিরভাগ দিনই বাজার ঊর্ধ্বমুখী দেখা যায়। তবে গত চার কার্যদিবসের মধ্যে দুদিন বাজার পতন হলে বিনিয়োগ নিয়ে দ্বিধাদ্ব›েদ্ব ভোগেন। এর মধ্যে সূচক কমে ৯২ পয়েন্ট। গতকাল সূচক হ্রাসের পরিমাণ ছিল ৫৮ পয়েন্ট।
পুঁজিবাজারে ২০১০ সালে ধসের ১০ বছর পর আবারও বাজারমুখী হচ্ছেন নানা পেশার মানুষ। ধসের পর কয়েক দফা বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও তা দীর্ঘমেয়াদি হয়নি। গত বছর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানসহ সিংহভাগ কমিশনারদের দায়িত্বে রদবদল হওয়ার পর থেকে বাজারে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। যার জের ধরে বাজারের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন সব ধরনের মানুষ। তাই এ সময়ে কোনো ধরনের গুজবে কান না দিয়ে বিনিয়োগকারীদের ধৈর্যধারণ করে পুঁজিবাজারে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা।