দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল অপারেটর রবির শেয়ার পুঁজিবাজারে আসার পর ১৫ দিনের লেনদেনে দাম বেড়েছে ৬০১ শতাংশ, এর মধ্যে ১৪ দিনই দাম বৃদ্ধির দৈনিক সীমা স্পর্শ করেছে এ শেয়ার। আইপিওতে রবি তাদের প্রতিটি শেয়ার ১০ টাকায় বিক্রি করেছিল। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, প্রথম দুদিনের লেনদেনে নতুন শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ বাড়তে পারে। ২৪ ডিসেম্বর লেনদেন শুরুর পর প্রথম দুই দিনই সেই সীমা স্পর্শ করে রবির শেয়ার। দাম বেড়ে হয় ২০ টাকা।
নিয়ম অনুযায়ী, এরপর প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ দাম বাড়ার সুযোগ ছিল। রবির শেয়ার লেনদেনের বাকি ১৩ দিনের মধ্যে ১২ দিনই সেই সীমা স্পর্শ করেছে।
বৃহস্পতিবার দিন শেষে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের এ শেয়ারের দাম বেড়ে ৭০ টাকা ১০ পয়সায় পৌঁছেছে। সে হিসেবে ১৫ দিনের লেনদেনে শেয়ারটির দাম বেড়েছে ৬০১ শতাংশ।
সর্বশেষ নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী রবির শেয়ারের পিই রেশিও ২ হাজার ৩৩৭। অর্থাত্ রবির শেয়ারে এক টাকা মুনাফার জন্য বিনিয়োগকারীদের খরচ করতে হচ্ছে ২ হাজার ৩৩৭ টাকা।
সর্বশেষ নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের পিই ধরলে বর্তমানে ঢাকার পুঁজিবাজারে রবির মূল্য আর আয়ের অনুপাতই সবচেয়ে বেশি।
অবশ্য অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী রবির শেয়ারের বর্তামন পিই ২৩৯ পয়েন্ট। তারপরও তা বাজারের অধিকাংশ শেয়ারের চেয়ে বেশি।
পুঁজিবাজারে একই খাতের অন্য কোম্পানি গ্রামীণফোনের শেয়ারের বর্তামন পিই সর্বশেষ নীরিক্ষত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৪ দশমিক ৬৩ এবং সর্বশেষ অনীরিক্ষত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৪ দশমিক ১০।
কোনো কোম্পানির শেয়ারের পিই রেশিও ১৫ থেকে ২০ এর মধ্যে হলে তাকে ‘ভালো’ হিসেবে বিবেচনা করেন বাজার বিশ্লেষকরা। অবশ্য যেসব কোম্পানির সামনে ভালো করার সম্ভাবনা আছেম তাদের পিই আরো বেশি হতে পারে।
তবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বর্তমান নিয়মে কোনো শেয়ারের পিই রেশিও ৪০ এর বেশি হলে তা মার্জিন ঋণের জন্য অযোগ্য বিবেচিত হয়।
রবির শেয়ারের ১৫ দিনের লেনদেনের মধ্যে কেবল বুধবারই এর দাম দৈনিক বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করেনি। সেদিন এ শেয়ারের দাম বেড়েছিল ৬০ পয়সা বা এক শাতাংশের মত।
গত এক মাসে যেসব শেয়ারের দর ৫০ শতাংশের বেশি বেড়েছে, সেসব কোম্পানির বিষয়ে গত মঙ্গলবার তদন্ত করার ঘোষণা দিয়েছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। ওই খবরে বুধবার পুঁজিবাজারে দর ও সূচক পতন ঘটে।
এক দিনের মাথায় বিএসইসি তদন্তের সিদ্ধান্ত স্থগিত করলে বৃহস্পাতিবার ডিএসই সূচক ২৩ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছায়, রবির শেয়ারও আবার দৈনিক দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করে।
শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমরান হাসান বলেন, “শেয়ারের দাম বাড়ার তদন্তের খবরে বিনিয়োগকারীরা ভয় পেয়ে গিয়েছিল। নির্দেশনা স্থগিত করায় আবার আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে।”
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের অধ্যাপক মোহাম্মদ মুসা বলেন, “অনেক বিনিয়োগকারী মুনাফায় ছিলেন, তারা মনে করেছিলেন, শেয়ারের দাম আরো বাড়বে। তাদের কেউ কেউ আজ শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে মুনাফা তুলে নিয়েছেন।
“এছাড়া শেয়ারের দাম বাড়া নিয়ে তদন্ত শুরুর খবরে কেউ কেউ ভয় পেয়ে শেয়ার ছেড়ে দিয়েছেন, ফলে শেয়ারের দাম কমে গেলেও লেনদেন বেড়ে গেছে।”
বৃহস্পতিবার রবির মোট ১ কোটি ৩৯ লাখ ৪ হাজার ৬৩৬টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। টাকার হিসেবে রবির এই শেয়ারের মোট মূল্য ৯৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। ঢাকার পুঁজিবাজারে এটাই এদিন কোনো শেয়ারের সর্বোচ্চ লেনদেন।
রবি আইপিও থেকে মোট ৫২৩ কোটি ৭৯ লাখ ৩৩ হাজার ৩৪০ টাকা তহবিল সংগ্রহ করতে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের ৫২ কোটি ৩৭ লাখ ৯৩ হাজার ৩৩৪টি শেয়ার ছাড়ে।
এর মধ্যে রবি কর্মীদের কাছে ১৩ কোটি ৬০ লাখ ৫০ হাজার ৯৩৪টি শেয়ার বিক্রি করে ১৩৬ কোটি ৫ লাখ ৯ হাজার ৩৪০ টাকা তুলেছে।
বাকি ৩৮৭ কোটি ৭৪ লাখ ২৪ হাজার টাকার মধ্যে ১৫৫ কোটি ৯৬ লাখ ৯ হাজার ৬০০ টাকা বরাদ্দ ছিল যোগ্য বিনিয়োগকারীদের জন্য। বাকিটা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য।
২০১৯ অর্থবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুয়ায়ী রবির সম্পদ মূল্য ১৭ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা।
গতবছর তারা মুনাফা করেছে ১৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এ সময়ে তাদের শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য ১২ টাকা ৬৪ পয়সা আর শেয়ার প্রতি মুনাফা ৪ পয়সা।
২০১৯ সালের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী রবির মোট সম্পদ ১৭ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। রিটার্ন অন অ্যাসেট দশমিক ১০ শতাংশ। এর অর্থ ১০০ টাকার সম্পদ ব্যবহার করে ১০ পয়সা মুনাফা হয়েছে।
পুঁজিবাজারে রবির ৫২৩ কোটি ৭৯ লাখ ৩৩ হাজার ৩৩৫টি শেয়ার আছে। এর মধ্যে ৯০ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ আছে পরিচালকদের হাতে।
এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২ দশমিক ৪২ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ শেয়ার আছে।
রবির বাজার মূলধন ৩৩ হাজার ১০৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৫ হাজার ২৩৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা; রিজার্ভের পরিমাণ ১ হাজার ২৩৬ কোটি ২ লাখ টাকা।