দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে (রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার) লেনদেনের পরিমাণ আগের সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছে। গেল সপ্তায় লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা। যার মোট লেনদেনের ৪০ শতাংশই দশ কোম্পানির দখলে রয়েছে। ওই দশ কোম্পানি একাই লেনদেন হয়েছে ৭২৯ কোটি টাকা। শেয়াবাজারে মূলধন পরিমাণ ৮৮৮ কোটি টাকা বেড়েছে। একটি বাদে বাকী দুই ধরনের সূচক বেড়েছে। বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে। ডিএসইতে কোম্পানির শেয়ার দর উত্থানের তুলনায় পতন দ্বিগুন ছিল।
স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্র মতে, গত ১০ অক্টোবর পুঁজিবাজারে সরকারি বন্ডের লেনদেন শুরু হয়। এরপরের ৪ কার্যদিবস ডিএসইতে ২৫০ বন্ডের লেনদেন হয়। এতে ডিএসইর বাজার মূলধন ২ লাখ ৫২ হাজার ২৬৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা বেড়ে ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৯৩৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছিল। এরপর গত ২৭ অক্টোবর বাজার মূলধন কমে দাঁড়িয়েছিল ৭ লাখ ৬৯ হাজার ৪৬৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৭ লাখ ৬৩ হাজার ১১৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকায়। এর আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছিল ৭ লাখ ৬২ হাজার ২২৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকায়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে ৮৮৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা।
সূত্র মতে, গেল সপ্তায় ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৭৮৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৯২ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ৭০১ কোটি ৪২ লাখ টাকা বা ৬৪ দশমিক ২০ শতাংশ। ডিএসইতে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৩৫৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে গড়ে লেনদেন হয়েছিল ২৭৩ কোটি ১২ লাখ টাকা। গেল সপ্তাহে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৪০০টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৫৬টির, দর কমেছে ১১১টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ২০৫টি কোম্পানির। লেনদন হয়নি ২৮টি কোম্পানির শেয়ার।
সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স উত্থানে লেনদেন শেষ হয়। এক সপ্তাহে ব্যবধানে ডিএসইএক্স ৮ দশমিক ৬৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার ২১৩ দশমিক ৭৪ পয়েন্টে। শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ১ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৩৫৭ দশমিক ২৯ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই৩০ সূচক ৫ দশমিক শূন্য ৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ২ হাজার ২১৬ দশমিক ২৯ পয়েন্টে।
এদিকে গেল সপ্তাহের শেষে ডিএসইর পিই রেশিও অবস্থান করে ১৪ দশমিক ৩২ পয়েন্টে। যা আগের সপ্তাহের শেষে একই ছিল। মানে পরিবর্তন হয়নি। পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারে কোনো কোম্পানির মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ১৫ পয়েন্ট ছাড়ালেই তা বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) মার্জিন ঋণের যোগ্যতা হিসেবে সর্বোচ্চ ৪০ পিই রেশিও বেঁধে দিয়েছে। এ হিসেবে ৪০ পর্যন্ত পিইধারীর শেয়ার বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ বলে জানায় বিএসইসি। সেই হিসেবে গত বৃহস্পতিবার ডিএসইর পিই দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৩২ পয়েন্টে। পিই রেশিও হিসাবে বিনিয়োগ নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে।
গেল সপ্তাহে এ ক্যাটাগরির ৭০ ভাগ কোম্পানির শেয়ার টপটেন লেনদেনে অবস্থান করেছে। এছাড়া বি ক্যাটাগরির ৩০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর টপটেন লেনদেনে রয়েছে। সপ্তাহটিতে মোট লেনদেনের ৪০ দশমিক ৬৫ শতাংশ শেয়ার ১০ কোম্পানির দখলে রয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে জেনেক্স ইনফোসিস (এ ক্যাটাগরি) শেয়ারে। একাই মোট শেয়ারের ৬ দশমিক ৩০ শতাংশ লেনদেন করেছে।
এছাড়া বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (এ ক্যাটাগরি) ৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ, এডিএন টেলিকম (এ ক্যাটাগরি) ৫ দশমিক ১৪ শতাংশ, সী পাল বিচ (এ ক্যাটাগরি) ৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ, শাইনপুকুর সিরামিক (বি ক্যাটাগরি) ৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ, জেমিনি সী ফুড (বি ক্যাটাগরি) ৩ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ, আমরা নেটওয়ার্কস (এ ক্যাটাগরি) ৩ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ (এ ক্যাটাগরি) ২ দশমিক ৯১ শতাংশ, আল-হাজ্ব টেক্সটাইল (বি ক্যাটাগরি) ২ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং ওরিয়ন ইনফিউশন (এ ক্যাটাগরি) ২ দশমিক ৪৪ শতাংশের শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারের এ ক্যাটাগরির শেয়ার বি ও জেড ক্যাটাগরির থেকে তুলনামূলক ভালো কোম্পানি। নিয়ম অনুসারে, যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ থেকে তার ঊর্ধ্বে লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারাই এ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার। যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নিচে থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারা বি-ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার। যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ নিচে থেকে শুরু জিরো লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারাই জেড ক্যাটাগরি কোম্পানির শেয়ার। এছাড়া এন ক্যাটাগরি নতুন কোম্পানির শেয়ার। যেগুলোর পুঁজিবাজারের লেনদেন শুরু হয়েছে কিন্তু বছর পার হয়নি, সেইগুলো এন ক্যাটাগরিতে রয়েছে।