পুঁজিবাজার থেকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে মূলধন উত্তোলন করতে চায় বিভিন্ন খাতের ১২ কোম্পানি। আইপিওর মাধ্যমে কোম্পানিগুলো ৩৪২ কোটি ৫০ লাখ টাকা উত্তোলন করতে চায়।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, এর আগে জেএমআই হসপিটাল রিকুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেড, বিডি পেইন্টস লিমিটেড, থ্রি এঙ্গেল মেরিন লিমিটেড ও মাস্টার ফিড এগ্রোটেক লিমিটেডের আইপিও আবেদন বাতিল করা হয়েছিল। এ কোম্পানিগুলো কমিশনের এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করেছে। বিডি থাই ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড, অরিজা এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও অনিক ট্রিমস লিমিটেডের আইপিও আবেদন অপেক্ষমাণ রয়েছে। আর কৃষিবিদ ফিড লিমিটেড, সুব্রা সিস্টেমস লিমিটেড, একমি পেস্টিসাইডস লিমিটেড, কৃষিবিদ সিড লিমিটেড ও নাইলকো অ্যালয়স লিমিটেড নতুন করে বিএসইসির কাছে আইপিও আবেদন করেছে।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, স্মল ক্যাপ প্লাটফর্মের জন্য আবেদন করা দুই কোম্পানির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ফিক্সড পদ্ধতির আইপিওর জন্য নতুন করে আবেদন করা একমি পেস্টিসাইডস ও সুব্রা সিস্টেমসের বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আর যে কোম্পানিগুলো কমিশনের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করেছে সেগুলো পরীক্ষা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া যেগুলো অপেক্ষমাণ অবস্থায় রয়েছে সেক্ষেত্রে কারো কারো প্রয়োজনীয় শর্তপূরণে ঘাটতি রয়েছে আবার কারোর আপডেটেড আর্থিক প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। সব শর্ত পূরণ করে সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদন সংযুক্ত করে আপডেটেড প্রসপেক্টাস জমা দেয়া হলে কমিশন সেগুলো বিবেচনা করে দেখবে। সব শর্ত পূরণ করা সাপেক্ষে ছোট-বড় সব ধরনের কোম্পানিকে আইপিওর অনুমোদন দেয়া হলেও বাজারের গভীরতা বাড়াতে মৌলভিত্তির বড় আকারের কোম্পানির তালিকাভুক্তিকে কমিশন সব সময়ই স্বাগত জানায়।
বুক বিল্ডিং পদ্ধতির আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ৭৫ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহ করতে চায় জেএমআই হসপিটাল রিকুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেড। দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত জেএমআই হসপিটাল রিকুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং বিভিন্ন ধরনের মেডিকেল ডিভাইস উৎপাদন ও আমদানি করে। সম্প্রতি কোম্পানিটি তাদের উৎপাদিত কেএন-৯৫ রেসপিরেটর মাস্ক বাজারে ছেড়েছে। ২০১৮-১৯ হিসাব বছরে কোম্পানিটি ১৩০ কোটি টাকার মেডিকেল ডিভাইস বিক্রি করেছে। গত বছরের জুলাইয়ে বিএসইসি কোম্পানিটির আইপিও আবেদন বাতিল করেছিল। কোম্পানিটি কমিশনের কাছে এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করেছে। কোম্পানিটির ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে জনতা ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।
ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতির আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ২০ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহ করতে চায় বিডি পেইন্টস লিমিটেড। কোম্পানিটি বিভিন্ন ধরনের রং উৎপাদন করে থাকে। ২০১৮-১৯ হিসাব বছরে কোম্পানিটির বিক্রি হয়েছে ৩৬ কোটি টাকা। গত বছরের আগস্টে অনিয়মের কারণে কোম্পানিটির আইপিও বাতিল করা হয়েছিল। কোম্পানিটি কমিশনের কাছে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করেছে। কোম্পানিটির ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে সিএপিএম অ্যাডভাইজরি লিমিটেড, ইবিএল ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড ও মাইডাস ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।
ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতির আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ৩২ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহ করতে চায় থ্রি এঙ্গেল মেরিন লিমিটেড। কোম্পানিটির মূল ব্যবসা জাহাজ নির্মাণ। ২০১৮-১৯ হিসাব বছরে কোম্পানিটির রাজস্ব আয় হয়েছে ১৫৫ কোটি টাকা। বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের কারণে গত বছরের সেপ্টেম্বরে বিএসইসি কোম্পানিটির আইপিও বাতিল করেছিল। কমিশনের এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য কোম্পানিটি আবেদন করেছে। কোম্পানিটির ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে বাঙ্কো ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও জনতা ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।
ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতির আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ৩০ কোটি টাকার মূলধন উত্তোলন করতে চায় মাস্টার ফিড এগ্রোটেক লিমিটেড। পোলট্রি, মাছ ও গবাদি পশুর প্রক্রিয়াজাত খাদ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করে কোম্পানিটি। ২০১৮-১৯ হিসাব বছরে কোম্পানিটির বিক্রি হয়েছে ৯১ কোটি টাকা। গত বছরের নভেম্বরে আইপিও প্রসপেক্টাসে বিভিন্ন ধরনের অসংগতি থাকায় কোম্পানিটির আইপিওর আবেদন বাতিল করেছিল কমিশন। বিএসইসির এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য কোম্পানিটির পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে। কোম্পানিটির ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে এশিয়ান টাইগার ক্যাপিটাল পার্টনার্স ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও এনবিএল ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইকুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড।
ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতির আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ১৫ কোটি টাকার মূলধন উত্তোলন করতে চায় বিডি থাই ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড। বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়াজাত ফলের জুস, কোমল পানীয়, খাবার পানি, হার্ড ক্যান্ডি, সফট ক্যান্ডি, ললিপপ, গাম প্রভৃতি উৎপাদন ও বিক্রি করে থাকে কোম্পানিটি। ২০১৭-১৮ হিসাব বছরে কোম্পানিটির বিক্রি হয়েছে ৭৬ কোটি টাকা। বিডি থাই ফুডের আইপিও আবেদনটি বর্তমানে অপেক্ষমাণ রয়েছে। কোম্পানিটির ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে ইউনিক্যাপ ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বিএলআই ক্যাপিটাল লিমিটেড।
ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতির আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ২৫ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহ করতে চায় অরিজা এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। কোম্পানিটি মাছ ও পোলট্রি ফিড উৎপাদন ও বাজারজাত করে থাকে। ২০১৮-১৯ হিসাব বছরে কোম্পানিটি ১১৭ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করেছে। বর্তমানে কোম্পানিটির আইপিও আবেদন অপেক্ষমাণ রয়েছে। অরিজা এগ্রোর ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে ইমপেরিয়াল ক্যাপিটাল লিমিটেড, ইবিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এবং সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল রিসোর্সেস লিমিটেড।
ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতির আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ৩০ কোটি টাকার মূলধন উত্তোলন করতে চায় অনিক ট্রিমস লিমিটেড। কার্টন, ফটো বক্স, ফটো কার্ড, ফটো ইনলে, ব্ল্যাক বোর্ড, বার কোড, হ্যাংট্যাগ, প্রাইস ট্যাগ, সাইজ ট্যাগ, কেয়ার লেভেল, সাইজ লেভেল, মেইন লেভেল, ইন্টার লিনিং, টিস্যু পেপার, টুইল ট্যাপ প্রভৃতি উৎপাদন করে থাকে কোম্পানিটি। ২০১৮-১৯ হিসাব বছরে কোম্পানিটি ৫০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করেছে। বর্তমানে কোম্পানিটির আইপিও আবেদন অপেক্ষমাণ রয়েছে। কোম্পানিটির ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে ইমপেরিয়াল ক্যাপিটাল লিমিটেড, সিএপিএম অ্যাডভাইজরি লিমিটেড ও রূপালী ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।
ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতির আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ৩০ কোটি টাকা মূলধন সংগ্রহ করতে চায় কৃষিবিদ ফিড লিমিটেড। সব ধরনের পোলট্রি, মাছ ও গবাদি পশুর খাদ্য উৎপাদন করে থাকে কোম্পানিটি। তাছাড়া সব ধরনের কৃষি বীজ উৎপাদন, বিতরণ, রফতানি ও আমদানির সক্ষমতা রয়েছে তাদের। ২০১৯-২০ হিসাব বছরে কোম্পানিটির বিক্রি হয়েছে ৮৫ কোটি টাকা। কোম্পানিটির ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে এমটিবি ক্যাপিটাল লিমিটেড।
ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতির আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ৩০ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহ করতে চায় সুব্রা সিস্টেমস লিমিটেড। ইন্টিগ্রেটেড বিজনেস সফটওয়্যার, ইআরপি সফটওয়্যারসহ গ্রাহকের চাহিদা অনুসারে বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার সেবা দিয়ে থাকে কোম্পানিটি। এছাড়া ওয়েবপেজ ও ডাটা ট্রান্সমিটের কাজও করে সুব্রা সিস্টেমস। ২০১৯-২০ হিসাব বছরে কোম্পানিটির রাজস্ব আয় হয়েছে ১৭ কোটি টাকা। কোম্পানিটির ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে ইমপেরিয়াল ক্যাপিটাল লিমিটেড।
ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতির আইপিওর মাধ্যমে একমি পেস্টিসাইড লিমিটেড পুঁজিবাজার থেকে ৩০ কোটি টাকার মূলধন উত্তোলন করতে চায়। বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক এবং গৃহস্থালি ও টয়লেট্রিজ পণ্য উৎপাদন করে কোম্পানিটি। ২০১৯-২০ হিসাব বছরে কোম্পানিটির বিক্রি হয়েছে ১৫৪ কোটি টাকা। কোম্পানিটির ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে শাহজালাল ইকুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড।
এছাড়া স্মলক্যাপ প্লাটফর্মে তালিকাভুক্তির মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে কৃষিবিদ সিড লিমিটেড ১৮ কোটি টাকা এবং নাইলকো অ্যালয়স লিমিটেড ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার মূলধন উত্তোলন করতে চায়।