শেয়ারবাজারে বেশ কয়েক মাস ধরে হতাশায় নিমজ্জিত বিনিয়োগকারীরা। এরমধ্যে আবার ব্যাংকের শেয়ারে একেবারেই আস্থা নেই বিনিয়োগকারীদের। এই অবস্থার মধ্যেও ঋণ খেলাপি উদ্যোক্তার মিডল্যান্ড ব্যাংক কোটি কোটি টাকা তুলে নিয়ে যাচ্ছে। যে ব্যাংকটিতে রয়েছেন ক্ষমতাধর রাজনৈতিকসহ অন্যান্য খাতের ব্যক্তিরা।
পাবলিক ইস্যু রুলসের ৩ এর ২(এম)-এ বলা আছে, কোন কোম্পানি বা তার কোন পরিচালক এবং ১০% এর বেশি শেয়ারধারন করা কোন শেয়ারহোল্ডার ঋণ খেলাপি হলে আইপিওর আবেদন করতে পারবে না।
কিন্তু ব্যাংকটির উদ্যোক্তা আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইসা বাদশা একজন ঋণ খেলাপি। যার ব্যাংকটিতে ১১ লাখ ৮৮ হাজার শেয়ারের মালিকানা রয়েছে। তারপরেও ব্যাংকটির আইপিওতে কোন বাঁধা পেতে হয়নি।
জানা গেছে, মিডল্যান্ড ব্যাংকের মোহাম্মদ ইসা বাদশার শিপ ব্রেকিংসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ৮টি ব্যাংক থেকে ৫শত কোটি টাকাঋণ নেন। এই ঋণের অর্থ শিল্পোন্নয়নে ব্যয় না করে পাঁচার করেন কানাডায়। সেখানে কিনেছেন বিলাসবহুল বাড়ি। টরেন্টোর লেকশোর এলাকায় কিনেছেন ফ্ল্যাট, গড়েছেন নামে-বেনামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। যেসব ব্যাংক থেকে বাদশাগ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক ৫শত কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন, সেসব ব্যাংকও এখন ঋণের টাকা আদায় করতে পারছে না। এ সংক্রান্ত দায়েরকৃত একাধিক মামলায় তিনি এখন পলাতক।
এমন একটি ঋণ খেলাপির ব্যাংকই এখন শেয়ারবাজারে থেকে টাকা তুলতে যাচ্ছে। যে ব্যাকংটিতে রাজনৈতিক পরিবারের নিয়ন্ত্রন, নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বিনিয়োগে অনীহার মতো ঘটনা রয়েছে।
সবারই জানা শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ন্যাশনাল ব্যাংক কেনো ডুবছে। এটা যে শিকদার পরিবারের একক নিয়ন্ত্রনের কারনে হয়েছে, তা কারও জানতে বাকি নেই। যে কারনে ব্যাংক খাতের সংশ্লিষ্টরা বিতর্কিত এই পরিবার নিয়ন্ত্রিত প্রথা ভেঙ্গে দেওয়ার পক্ষে। কিন্তু তারপরেও এরইমধ্য দিয়ে শেয়ারবাজারে শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে সাধারন বিনিয়োগকারীদের থেকে মিডল্যান্ড ব্যাংককে টাকা উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। যার নেতৃত্ব দিচ্ছে ফরিদপুরের রাজনীতিবীদ কাজী জাফরুল্লাহর পরিবার।
শেয়ারবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহে আগ্রহী হলেও মিডল্যান্ড ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এই বাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী না। এমনকি এই বাজারে যখন মন্দা দেখা দেয়, তখন ব্যাংকগুলোর জন্য ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিলের সুযোগ দেওয়া হলেও, তাতেও আগ্রহ দেখায়নি ব্যাংকটি। সেই ব্যাংকটি এখন শেয়ারবাজার থেকে ৭০ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে চায়। কিন্তু শেয়ারবাজারের প্রয়োজনের সময় বিনিয়োগের মাধ্যমে তারল্য সরবরাহে সহযোগিতার হাত বাড়ায়নি।
এছাড়া মিডল্যান্ড ব্যাংকের উপর নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারিদেরই বিনিয়োগে আগ্রহ নেই। অন্যসব কোম্পানির আইপিওতে যখন সবাই শেয়ার পেতে চায়, সেখানে এই ব্যাংকে আগ্রহ নেই। এর পেছনে অবশ্য নতুন ব্যাংকের শেয়ার কেনা মানেই লোকসান প্রায় নিশ্চিত হয়ে পড়াটা অন্যতম কারন।
শেয়ারবাজারে পাবলিক ইস্যু রুলসে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) ১৫% শেয়ার আইপিওতে আসতে চাওয়া কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী বা অন্যকোন ব্যক্তির মাঝে ইস্যু করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আইপিওতে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির পছন্দের ব্যক্তিদের সুবিধা দিতে এমন বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু অন্যসব খাতের কোম্পানির শেয়ারে সবাই এই সুযোগ নিতে চাইলেও ব্যাংকের ক্ষেত্রে কেউ নিতে চায় না। যা মিডল্যান্ড ব্যাংকের ক্ষেত্রেও ঘটেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের ৮ টি ব্যাংকের কাছে ইসা বাদশা পরিবারের ঋণেরপরিমাণ মোট প্রায় ৫ শত কোটি টাকা। ঋণ নিয়ে তারা এদেশের কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেনি। সমুদয় অর্থ অবৈধ পন্থায় পাচার করেন কানাডা। ঋণের টাকায় সেখানে তারা বিলাসবহুল জীবন যাপন করছেন। ঋণের কাগজপত্রে ইসা-মুসার আবাসিক ঠিকানা চট্টগ্রামের খুলশী থানার ৫ নম্বরসড়কের ১৩, খুলশী হিল। সীতাকুন্ডের মধ্যসোনাই ছড়িতে তাদের জমিসহবিভিন্ন সম্পত্তি রয়েছে। নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত,মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশেও তারা ওভার ইনভয়েসের মাধ্যমে অর্থ পাচারকরেন বলে জানা যায়।