দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সব ধরনের সূচক পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। দুই স্টকে কমেছে লেনদেন পরিমাণ।
ডিএসইর লেনদেন চারশ কোটি টাকার ঘরে। আর সিএসইর লেনদেন সাড়ে ৫ কোটি টাকার ঘরে রয়েছে। ডিএসইতে ১৩৭টি কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে। ২৭টির বেড়েছে। সিএসইতে ৬০টি কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে। ১৭টির বেড়েছে। উভয় শেয়ারবাজারে রয়েছে বিক্রির চাপের হিড়িক। ডিএসইতে কোম্পানির শেয়ার দর উত্থান চেয়ে পতন পাঁচগুন বেশি।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, বুধবার ডিএসইতে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার দর অপরিবর্তিত ছিল। বিক্রেতার চাপ বহুগুন বেশি ছিল। ডিএসইতে কোম্পানির শেয়ার দর উত্থান তুলনায় পতন ৫ দশমিক শূন্য ৭ গুন বেশি। অপরদিকে সিএসইতেও কোম্পানির শেয়ার দর উত্থান তুলনায় পতন ৩ দশমিক ৫৩ গুন বেশি।
আরও বলেন, সরকারের নতুন সময় সূচির প্রথম কার্যদিবস ডিএসইতে গত ২৪ আগস্ট পতন হয়েছিল। যা আগের টানা ছয় কার্যদিবস উত্থানের পর এই মন্দা। পতন পরের দুই কার্যদিবস (বৃহস্পতিবার ও রবিবার) উত্থানে ছিল পুঁজিবাজার। ওইসময় লেনদেন দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছিলো। পরের দিন সোমবার লেনদেনে ভাটা পড়ে। সেখান থেকে পরের দুই কার্যদিবস লেনদেন কিছুটা বাড়ে।
পরেরদিন লেনদেন আবারো কমে। এরপরের কার্যদিবস লেনদেন বেড়ে ২৩শ কোটি টাকায় ওঠেছিল। পরে জোয়ার-ভাটায় চলে পুঁজিবাজারের লেনদেন। গত ২০ সেপ্টেম্বর লেনদেন বছরের সেরা রেকর্ড করেছিলো। ওইদিন লেনদেন ২৮শ কোটি টাকা এসেছিলো। পরে ফের জোয়ার-ভাটায় পড়ে লেনদেন। এরই ধারায় বুধবার ভাটা পড়ে লেনদেন। ফলে আগের কার্যদিবস থেকে কমে লেনদেন ৪৩১ কোটি টাকায় এসেছে।
চলতি বছরের শুরুতে লেনদেন মন্দা ছিল জানিয়ে রয়েল ক্যাপিটাল হাউজের বিনিয়োগকারী আমান বলেন, বছরের শুরুতে সূচকে পতন ছিল। সময়ে পালাক্রমে সামান্য উত্থান হয় সূচক। কিন্তু পরবর্তীতে ফের পতন। একই অবস্থা লেনদেনে। বছরের শুরুর ডিএসইর দেড়শ কোটি টাকার লেনদেন বর্তমানে ৪শ কোটি টাকায় এসেছে। কিন্তু এই সময়ের মাঝে লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছিল।
পতন আশঙ্কা রয়েছি জানিয়ে আরও বলেন, বর্তমান লেনদেনে শেয়ার বিক্রি প্রভনতাই বেশি। এই বিক্রিতে অধিকাংশ কোম্পানির দর কমেছে। সামনে আরও মন্দা হবে। এখন কি করবো, লসে শেয়ার বিক্রিতে ঝুঁকছি।
স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্র মতে, বুধবার ডিএসইতে ৪৩১ কোটি ৪৯ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবস মঙ্গলবার ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ৪৩৩ কোটি ১০ লাখ টাকার শেয়ার। এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১১ দশমিক ১৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৪৫ দশমিকশূন্য ২ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই-৩০ সূচক ৪ দশমিক ৬৩ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস সূচক ১ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ২ হাজার ২২২ দশমিক শুন্য ২ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ৩৬৬ দশমিক ৮৪ পয়েন্টে।
এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩১০টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ২৭টি এবং কমেছে ১৩৭টির। শেয়ার পরিবর্তন হয়নি ১৪৬টির। এদিন ডিএসইতে সোনালী পেপারের শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। ফলে লেনদেন শীর্ষে কোম্পানিটির শেয়ার স্থান পায়। এদিন সোনালী পেপার ৩৭ কোটি ৩ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।
লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা এদিন অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে জেনেক্স ইনফোসিস ২২ কোটি ৩ লাখ টাকা, শাইনপুকুর সিরামিকস ২০ কোটি ৭ লাখ টাকা, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন ১৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা, বিডি ল্যাম্পস ১৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা, সী পার্ল বিচ ১৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা, এপেক্স ফুটওয়্যার ১৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা, আমরা নেটওয়ার্ক ১২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, জেমিনি সী ১২ কোটি ৬২ লাখ টাকা এবং ওরিয়ন ইনফিউশনের ১২ কোটি ৬ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।
অপরদিকে, সিএসইতে বুধবার লেনদেন হয়েছে ৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা শেয়ার। আগের কার্যদিবস মঙ্গলবার ১২ কোটি ৬১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ১৩২টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ১৭টি, কমেছে ৬০টি এবং পরিবর্তন হয়নি ৫৫টির।
এদিন সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ২৭ দশমিক ১৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৪৩৪ দশমিক ৯৪ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসই-৫০ সূচক দশমিক ৭৭ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ৩৫ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স সূচক ১৬ দশমিক ৪২ পয়েন্ট এবং সিএসআই সূচক দশমিক ৩৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৩২৬ দশমিক ৮৬ পয়েন্টে, ১৩ হাজার ৩১৫ দশমিক শূন্য ৮ পয়েন্টে, ১১ হাজার ৫০ দশমিক ৯৬ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ১৬৭ পয়েন্টে।
এদিন সিএসইতে পাইওনিয়র ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। ফলে লেনদেন শীর্ষে কোম্পানিটির শেয়ার স্থান পায়। এদিন পাইওনিয়র ইন্স্যুরেন্স ১ কোটি ২৬ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা এদিন অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে সী পার্ল বিচ ৬৪ লাখ টাকা, শাইনপুকুর ৩০ লাখ টাকা, বেঙ্গল ইউন্ডসর ২৯ লাখ টাকা, বিএসআরএম স্টিল ২৩ লাখ টাকা, জেনেক্স ইনফোসিস ১৮ লাখ টাকা, বসুন্ধরা পেপার ১৮ লাখ টাকা, প্রান ১৬ লাখ টাকা, খান ব্রাদার্স ১৫ লাখ টাকা এবং ইস্টার্ন হাউজিংয়ের ১৫ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।