সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের (এসবিএসিবি) চেয়ারম্যান এসএম আমজাদ হোসেন, তার স্ত্রী বেগম সুফিয়া আমজাদ ও মেয়ে তাজরি শেয়ার বিক্রির চেষ্টা করছেন গোপনে। তবে তাদের নামে থাকা শেয়ার বিক্রি ও হস্তান্তরে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) নিষেধাজ্ঞা জারির অনুরোধ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গত ৫ জানুয়ারি মঙ্গলবার বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল-ইসলামের কাছে পাঠানো দুদক উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ অনুরোধ করা হয়।
তদন্ত কর্মকর্তা ওই চিঠিতে বলেন, আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে ঋণ জালিয়াতি, অন্যান্য ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। অনুসন্ধানকালে তার বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। পরে তিনি বিশেষ প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে কমিশনে আবেদন করেছিলেন। এরপর কমিশন একবার বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়। অনুমতি পেয়ে তিনি বিদেশ গমন করে আজ পর্যন্ত দেশে ফিরে আসেননি।
চিঠিতে আরও বলা হয়, গোপন সূত্রে দুদক জানতে পেরেছে আমজাদ হোসেন, তার স্ত্রী, মেয়ে বিদেশে পাচারের উদ্দেশ্যে তাদের নামে থাকা সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের (এসবিএসিবি) শেয়ারসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রি করার চেষ্টা করছেন।
চিঠির বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় ব্যাংকের চেয়ারম্যান এসএম আমজাদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘প্রায় এক মাস হলো দেশে এসেছি। তবে দুদকের দেয়া এ চিঠির ব্যাপারে কিছু জানা নেই। চিঠি না পেলে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্যও করব না।’
দেশে ফেরার পর আমজাদ হোসেনকে দুদকে রিপোর্ট করার কথা বলা হয়েছিল। সেই বিষয়ে দুদককে জানিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যথাযথ কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে অবহিত করেছি।’ যদিও দুদক বলছে, তিনি দেশে ফিরেছেন এটা তাদের জানা নেই।
আমজাদ হোসেনের দেশে ফেরা সম্পর্কে তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ারকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমজাদ হোসেন দেশে ফিরেছেন বলে তিনি জানেন না। এ বিষয়ে তদন্ত চলমান বলে তিনি আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এদিকে দুদকের চিঠি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত বলেন, ‘দুদক যদি কোনো কাজ করতে বলে তবে অবশ্যই সেই কাজ করার চেষ্টা করবে বিএসইসি। সরকারি এক প্রতিষ্ঠান আরেক প্রতিষ্ঠানকে সহযোগিতা করবে এটাই স্বাভাবিক। যদি কোথাও কোনো শেয়ার থেকে থাকে তবে তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে বিএসইসি।’
প্রসঙ্গত, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের (এসবিএসি) চেয়ারম্যান এসএম আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে ৫৭ কোটি ২০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। আলফা এক্সেসরিজ অ্যান্ড এগ্রো এক্সপোর্ট লিমিটেড নামে কোম্পানি গঠনের দুই মাসের মধ্যে নিজের ব্যাংকে প্রভাব খাটিয়ে তিনি ঋণ নিয়েছিলেন। মোট ঋণের ১০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা নিয়েছিলেন বোর্ড ও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই। ঋণের মর্টগেজের জমি ১৪ গুণ বেশি দর দেখানো হয় আলোচিত ঋণটিতে। প্রকল্পের জন্য মেশিনারিজ ক্রয়ে এলসিতে জালিয়াতি করা হয়। এমনকি এলসি জালিয়াতির মাধ্যমে বিদেশে ১৮ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের খুলনা কার্যালয়ের তদন্তে উঠে আসে। ব্যাংকটিতে তদন্ত করতে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা এই ঋণ হিসাবের সব অনিয়ম চিহ্নিত করে প্রধান কার্যালয়ের কাছে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেন। এর ভিত্তিতেই দুদক আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর জানুয়ারি মাসে আমজাদ হোসেন, তার স্ত্রী বেগম সুফিয়া আমজাদ ও মেয়ে তাজরির বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয় দুদক।