ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন দামে আটকে রয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। ক্রেতার অভাবে দিনের পর দিন লেনদেন হচ্ছে না এসব সিকিউরিটিজের। কমে এসেছে লেনদেনও। প্রাতিষ্ঠানিক ও বড় বিনিয়োগকারীদের একটি অংশও বাজারে নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। সরকারবিরোধী একটি চক্রের পাঁয়তারায় এসব বিনিয়োগকারী নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে। সব কিছু মিলে এক ধরনের চাপের মধ্যে রয়েছে পুঁজিবাজার।
অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠান ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকায় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরাও রয়েছেন বিপদে। ক্রেতা না থাকায় প্রয়োজনের সময়ও শেয়ার বিক্রি করে টাকা তুলতে পারছেন না তারা। প্রতিদিন ফ্লোর প্রাইস লেনদেন শুরুর সঙ্গে সঙ্গে লাখ লাখ শেয়ার ও ইউনিটের বিক্রির আদেশ আসছে। কিন্তু ক্রেতা না পাওয়ায় বিক্রির আদেশ দেওয়া বিনিয়োগকারীরা হতাশ হচ্ছেন প্রতিদিন।
এছাড়া গত সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে প্রধান পুঁজিবাজারে লেনদেন নেমে আসে ২০০ কোটি টাকার ঘরে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলছে, পুঁজিবাজার ভালো করার চেষ্টা করছে বিএসইসি। সংশ্লিষ্টদের মতে, করোনা মহামারির সময়েও দেশের শেয়ারবাজার খুব ভালো অবস্থানে ছিল। তবে বর্তমান পুঁজিবাজারকে কোনভাবেই ভালো বলা যায় না। পুঁজিবাজারের গভীরতা বৃদ্ধি করতে সরকারের পলিসি সাপোর্ট প্রয়োজন বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
তবে এ পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারে গতি ফেরাতে নানামুখী প্রচেষ্টা চালাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এর অংশ হিসেবে ২৬টি বিমা কোম্পানিকে ইক্যুইটির কমপক্ষে ২০ শতাংশ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের যে শর্ত দেওয়া হয়েছে, তার তদারকি বাড়ানো হচ্ছে। একই সঙ্গে যেসব ব্যাংকের বিনিয়োগ আইনিসীমার নিচে রয়েছে, শেয়ারবাজারে তাদের বিনিয়োগ বাড়ানোর চেষ্টা করছে বিএসইসি।
চলতি বছরের জুলাই মাসের প্রথম কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ‘ডিএসই এক্স’ ছিল ৬ হাজার ৩৫৯ পয়েন্টে। রোববার (১১ ডিসেম্বর) সূচকটি ১২০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৬ হাজার ২৩৯ পয়েন্টে। সেসময় ডিএসইতে দৈনিক গড় লেনদেন ছিল ৬০০ কোটি টাকার ঘরে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে ২৮ জুলাই শেয়ারবাজারে পুনরায় ফ্লোর প্রাইস চালু করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
বিএসইসির পুনরায় ফ্লোর প্রাইস জারির সিদ্ধান্তে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মনে আস্থার সৃষ্টি হয়। ফলে আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকে শেয়ারবাজারে লেনদেন বৃদ্ধি পেতে থাকে। আগস্টের শেষ সপ্তাহে ডিএসইতে ডিএসইতে দৈনিক গড় লেনদেন দাঁড়ায় ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকায়। গত ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে একদিনেই লেনদেন হয় ২ হাজার ৮৩২ কোটি টাকা। তবে এরপর এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেনের পরিমাণ কমতে থাকে।
গত ১০ নভেম্বর ডিএসইতে লেনদেন নেমে আসে ১ হাজার কোটি টাকার নিচে। এরপর আর হাজার কোটির ঘর পার হতে পারেনি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেন। এর মধ্যে চলতি ডিসেম্বর মাসের ৬ তারিখ ডিএসইতে লেনদেন হয় মাত্র ২৭১ কোটি টাকার শেয়ার, যা ছিল গত ১৯ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা। অথচ সেপ্টেম্বরে এক দিনেই লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মো. ইউনুসুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থা স্বাভাবিক নয়। তবে তাঁর প্রত্যাশা শীঘ্রই পুঁজিবাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাবে। বর্তমানে পুঁজিবাজারের ইনডেক্সও ভালো না, বাজারে ভলিউমও কম। সবমিলিয়ে এখন পুঁজিবাজারকে ভালো বলা যায় না। নিঃসন্দেহে পুঁজিবাজারের পরিস্থিতি খারাপ যাচ্ছে।