পুঁজিবাজার দেশের শিল্পোন্নায়নে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের প্রধান উৎস হওয়ার কথা থাকলেও, সেই অবস্থানে যেতে পারছে না। দেশে মূল অর্থায়ন হয় ব্যাংকের মাধ্যমে, ব্যাংক স্বল্পমেয়াদে আমানত সংগ্রহ করে শিল্পখাতে দীর্ঘমেয়াদে ঋণ প্রদান করে। যার ফলে কিছু অমিল লক্ষ্য করা যায়। আমরা যারা পুঁজিবাজারের সাথে জড়িত, তাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে পুঁজিবাজারকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের মূল উৎসে পরিণত করা। পুঁজিবাজারকে অর্থনীতির মূল উৎসে রূপান্তরের জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। আমরাও বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতা প্রদান করছি। এছাড়া আইপিও প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও সুন্দর হওয়া জরুরি।
গত ২৯ নভেম্বর ডিএসই ট্রেনিং একাডেমি আয়োজিত ২ দিনব্যাপী “ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিংস (আইপিও): প্রসেসেস অ্যান্ড প্রসিডিউরস” শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনকালে ডিএসই’র চেয়ারম্যান মোঃ ইউনুসুর রহমান এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বয়স ৫১ বছর হলেও এর মধ্যে প্রথম ৩৮ বছর দেশ পরিচালিত হয় এডহক ভিত্তিতে৷ ২০০৯-১০ সাল থেকে স্ট্র্যাটেজিক প্লানিং শুরু হয় এবং ভিশন ২০২১, ২০৩০ ও ২০৪১ সালে দেশ কোথায় যাবে সে অনুযায়ী কাজ শুরু করে। তারপর থেকেই উন্নয়ন দৃশ্যমান হয়। আর যখন থেকে বাংলাদেশের উন্নয়ন দৃশ্যমান হয়েছে, তখন থেকেই বিভিন্নমুখী সমালোচনার মধ্যে ফিনান্সিয়াল সেক্টরে সমালোচনাটা বেশি হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে আরো কিছু সমালোচনা যোগ হয়েছে যার কোনো ভিত্তি নেই। সব মিলিয়ে আর্থিক খাত একটা চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে।
আইপিও প্রসেস অ্যান্ড প্রসিডিউরস বিষয়ে ইউনুসুর রহমান বলেন, দীর্ঘমেয়াদি পুঁজি উওোলনের নিরাপদ ও টেকসই উৎস হবে দেশের পুঁজিবাজার৷ সেইজন্য আইপিও প্রক্রিয়াটা আরও স্বচ্ছ ও সুন্দর হওয়া জরুরি৷ ফাইনান্সিয়াল স্টেটমেন্টের ভিত্তিতে আইপিও নির্ধারিত হয়৷ কাজেই ফাইনান্সিয়াল স্টেটমেন্টগুলো যেন অধিকতর স্বচ্ছ হয়, সে বিষয়ে ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল কাজ করছে৷ আগামি দিনগুলোতে চার্টার্ড একাউন্টিং ফার্মসমূহ আরও আন্তরিকতার সাথে বিষয়গুলো পরিচালনা করবেন, তখন স্টেটমেন্টগুলোর সঠিকতা নিয়ে যে অভিযোগগুলো রয়েছে সেগুলো দূরীভূত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি আরও বলেন, বিগত নয়-দশ বছরে দেশে শতাধিক কোম্পানির মতো আইপিও এসেছে, এর মধ্যে অনেকগুলো বতমানে ফেসভ্যালুর নিচে অবস্থান করছে। এখানে সেসব ভুলভান্তি রয়েছে তা নির্ধারণপূর্বক সংশোধনীমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এসব সমস্যা উত্তরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আপনারা আইপিও’র প্রসেস ও প্রসিডিউর সম্পর্কে হাতে কলমে শিখবেন এবং ব্যক্তি জীবনে কাজে লাগাবেন। আপনারা আপনাদের এটিচুডকে পজিটিভ করলেই দেশ উপকৃত হবে এবং আমাদের মূল লক্ষ্য পুঁজিবাজারকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের মূল উৎসে পরিণত করা সম্ভব হবে।
তার আগে ডিএসই’র ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. সাইফুর রহমান মজুমদার, এফসিএ, এফসিএমএ বলেন, আইপিও’র প্রসেস, প্রসিডিউর এবং বিধি ও প্রবিধানসমূহ সবই জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত আছে। তারপরও এই প্রশিক্ষণের বিশেষত্ব হলো প্রশিক্ষক যারা রয়েছেন তাদের প্রয়োগিক অভিজ্ঞতা শেয়ার করার মাধ্যমে প্রশিক্ষনার্থীদের জ্ঞ্যানভান্ডার সমৃদ্ধ করা৷ যেসব কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে বা তালিকাভুক্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে সেসব কোম্পানিতে যারা কাজ করছেন এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তারা তাদের কোম্পানির জন্য ভ্যালু এড করতে পারবেন। যারা প্রশিক্ষক হিসেবে থাকবেন তারা সবাই আইপিওর কাজের সাথে জড়িত। তাই বিধি প্রবিধান ছাড়াও আপনারা প্রায়োগিক যেসব সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন এবং কোম্পানিগুলোর যেধরনের সীমাবদ্ধতা এবং যেধরনের সমর্থন থাকলে এই প্রসেসকে এগিয়ে নেয়া যায় তা বুঝতে পারবেন। অনেক কর্পোরেট হাউজ রয়েছে আমাদের দেশে যাদের আইপিওর মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহের যথেষ্ট সুযোগ থাকা স্বত্ত্বেও শুধু নলেজ গ্যাপ থাকার কারণে সেটা ধীরগতিতে এগুচ্ছে। অবশেষে, এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যে নলেজ গ্যাপ রয়েছে তার ঘাটতি পূরণ ও নলেজ লেভেল সমৃদ্ধ হবে এবং মত বিনিময়েরও সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশা ব্যক্ত করে উনি উনার বক্তব্য শেষে করেন।
প্রশিক্ষণ কর্মশালার পাবলিক অফারিং এর প্রয়োজনীয়তা, আইপিও ব্যবস্থাপনা ইস্যুতে ইস্যু ম্যানেজার/আন্ডাররাইটার/রেজিস্টার এর ভূমিকা, ইলেক্ট্রনিক সাবসক্রিপশন সিস্টেম, আইপিওর আবেদন প্রক্রিয়া ও শেয়ার বরাদ্দ, ডিরেক্ট লিস্টিং এবং পাবলিক অফারের ডকুমেন্ট প্রসপেক্টাসের অনুমোদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়। প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনকালে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএসই’র উপ-মহাব্যবস্থাপক ও ডিএসই ট্রেনিং একাডেমির প্রধান সৈয়দ আল আমিন রহমান এবং লঙ্কাবাংলা ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইফতেখার আলম।