গত সপ্তাহ কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্য দিয়ে পার করেছে দেশের শেয়ারবাজার। এই ঊর্ধ্বমুখী বাজারে সপ্তাহজুড়ে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখিয়েছে নতুন তালিকাভুক্ত নাভানা ফার্মা। গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের কাছে পছন্দের শীর্ষে ছিল কোম্পানিটির শেয়ার। ফলে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দাম বাড়ার শীর্ষ স্থানটি দখল করেছে এই প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার।
গেল সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের প্রতি কার্যদিবসেই নাভানা ফার্মার শেয়ার দাম বেড়েছে। এমনকি এক সপ্তাহেই কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে ১১৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ। টাকার অঙ্কে বেড়েছে ৫৮ টাকা ৫০ পয়সা। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ১০৯ টাকা ৬০ পয়সা, যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৫১ টাকা ১০ পয়সা।
এক সপ্তাহে শেয়ারের এত বেশি দাম বাড়ার কারণ হলো, লভ্যাংশ ঘোষণার কারণে গত সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়ার ক্ষেত্রে কোনো সার্কিট ব্রেকার ছিল না। এতে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসেই ৫১ টাকা ১০ পয়সা থেকে বেড়ে কোম্পানিটির শেয়ার দাম ৯১ টাকা হয়ে যায়। দ্বিতীয় কার্যদিবসে শেয়ার দাম কিছুটা কমলেও পরের তিন কার্যদিবসে আবার বাড়ে। এতেই এক সপ্তাহে একশ শতাংশের বেশি বেড়ে গেছে দাম।
এমন দাম বাড়া কোম্পানিটির শেয়ার গত ১৮ অক্টোবর থেকে শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয়েছে। ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এই ওষুধ কোম্পানিটি বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে শেয়ারবাজার থেকে ৭৫ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে। সারাদেশে মানবদেহের ৪৮৬টি ও ভেটেরিনারি ৪৮টি পণ্য বাজারজাত করা এ কোম্পানিটির সেফেলোস্পেরিন ইউনিটের সংস্কার, উৎপাদন ভবন নিমার্ণ, নতুন ইউটিলিটি ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিল্ডিং নিমার্ণের জন্য শেয়ারবাজার থেকে এ টাকা সংগ্রহ করেছে।
নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড নিজস্ব জমিতে ওষুধ উৎপাদনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করে ১৯৮৬ সালে। ১৯৮৮ সালে সাধারণ উৎপাদন ইউনিট চালু করে কোম্পানিটি। ২০০৩ সালে ভেটেরিনারি প্রোডাকশন ইউনিট শুরু হয়। ২০০৯ সালে সেফালোস্পোরিন ইউনিট শুরু করা হয়, যা একটি উচ্চমানের সেফালোস্পেরিন সুবিধা নিশ্চিত করে এবং ২০১২ সালে শুরু করা হয় এসভপিও ইউনিট। আর ২০১৩ সালে পেনিসিলিন ইউনিটের নতুন সুবিধা শুরু করা হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ৪ হাজারের বেশি জনবল রয়েছে।
শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরুর ৮ কার্যদিবসের মাথায় কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করে। কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ২০২২ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরের জন্য বিনিয়োগকারীদের ১১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বছরটিতে শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ৩ টাকা ৪২ পয়সা। আর ২০২২ সালের ৩০ জুন কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদ (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৪৩ টাকা ৪১ পয়সা।
এদিকে শেয়ার দাম বাড়ার পাশাপাশি গত সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ার মোটা অঙ্কে লেনদেন হয়েছে। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২১২ কোটি ১৪ লাখ ২ হাজার টাকা। আর প্রতি কার্যদিবসে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৪২ কোটি ৪২ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
গত সপ্তাহে দাম বাড়ার শীর্ষ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ছিল বসুন্ধরা পেপার। সপ্তাহজুড়ে এই কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েছে ২৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এর পরের স্থানটিতে রয়েছে এডিএন টেলিকম। সপ্তাহজুড়ে এ কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে ২৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
এছাড়া দাম বাড়ার শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় থাকা আমরা নেটওয়ার্কের ২২ দশমিক ৫৭ শতাংশ, জেনেক্স ইনফোসিসের ২১ দশমিক ৭৩ শতাংশ, লুব-রেফ বাংলাদেশের ২১ দশমিক ৬৬ শতাংশ, আমরা টেকনোলজিসের ২১ দশমিক ৪১ শতাংশ, ইস্টার্ন কেবলসের ২০ দশমিক ১৬ শতাংশ, আইটি কনসালট্যান্টসের ১৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ এবং রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ১৬ দশমিক ২০ শতাংশ দাম বেড়েছে।