সদ্য সমাপ্ত বছরে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে বিডিং সম্পন্ন করা কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর অস্বাভাবিক করার পেছনে যেসব ইলিজিবল ইনভেস্টরদের ভূমিকা ছিল তাদের গায়ে না লাগার মতো হালকা শাস্তির ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
সম্প্রতি নিয়ন্ত্রক সংস্থার জারি করা বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড, মীর আখতার হোসাইন লিমিটেড, লুব-রেফ (বাংলাদেশ) এবং ইনটেক্স এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এই পাঁচ কোম্পানির কাট-অফ প্রাইসের ২০০ শতাংশের অধিক মূল্যে যারা বিডিং করেছেন তাদেরকে পরবর্তী তিনটি আইপিওতে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে।
এছাড়া এই পাঁচ কোম্পানির কাট-অফ প্রাইসের যেসব যোগ্য বিনিয়োগকারী ১৫০ শতাংশ থেকে ২০০ শতাংশের অধিক মূল্যে বিডিং করেছেন তাদের পরবর্তী দুইটি এবং কাট-অফ প্রাইসের ১০০ থেকে ১৫০ শতাংশের অধিক মূল্যে যেসব যোগ্য বিনিয়োগকারী বিডিং করেছেন তাদেরকে পরবর্তী একটি আইপিওতে অংশগ্রহণের জন্য অযোগ্য করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তবে কাট অফ প্রাইসের ১০০ থেকে ১৫০ শতাংশের অধিক মূল্যে বিডিং করা সম্পর্কে পরিস্কার ব্যাখ্যা জানতে চাইলে বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, অধিক মূল্য বলতে বোঝা যাচ্ছে; ধরা যাক কোন কোম্পানির কাট অফ প্রাইস ৬০ টাকা নির্ধারিত হলো। এখন এই ৬০ টাকার ১০০% আরো ৬০ টাকা। তাহলে মোট দাঁড়াল ১২০ টাকা। এই ১২০ টাকার ওপরে যারা বিডিং করেছে মূলত তারাই শাস্তির আওতায় পড়বে।
সে হিসেবে ওয়ালটন থেকে শুরু করে ইনডেক্স এগ্রো পর্যন্ত প্রতিটি কোম্পানির বিডিংয়ের বিস্তারিত তথ্য থেকে যেসব প্রতিষ্ঠান আইপিও আবেদনের নিষিদ্ধ তালিকায় পড়েছে তাদের নাম প্রকাশ করা হলো:
ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড: ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাষ্ট্রিজের কাট অফ প্রাইস নির্ধারিত হয়েছে ৩১৫ টাকা। এর ১০০ শতাংশ অর্থাৎ আরো ৩১৫ টাকা যোগ করে মোট ৬৩০ টাকা এবং ১৫০ শতাংশ ৪৭২ টাকাসহ মোট ৭৮৭ টাকার মধ্যে যারা বিড করেছে অর্থাৎ ৬৩০ টাকা থেকে ৭৮৭ টাকার মধ্যে যারা বিড করেছে তাদের পরবর্তী একটি আইপিওতে অংশগ্রহনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ডিএসই থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ৬৩০ টাকা থেকে ৭৮৭ টাকার মধ্যে বিড করেছে ৪টি ইলিজিবল ইনভেস্টর। এ তালিকায় সর্বোচ্চ ৭৬৫ টাকায় বিড করে পরবর্তী আইপিও’র জন্য নিষিদ্ধ হয়েছে ইসলামী ব্যাংক ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দর প্রস্তাবকারী যোগ্য বিনিয়োগকারী হচ্ছে অ্যাগ্রো গার্ডেন এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড। এই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিটি শেয়ার ৬৮৪ টাকা করে বিড করা হয়।তৃতীয় অবস্থানে থাকা ইউনাইটেড সিকিউরিটিজ থেকে ৬৪১ টাকা করে দর প্রস্তাব করা হয়। ওয়ালটনের অতিরিক্ত শেয়ার দর নির্ধারণে যাদের সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল তাদের মধ্যে ইসলামী ব্যাংক ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট, অ্যাগ্রো গার্ডেন এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড, ইউনাইটেড সিকিউরিটিজ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানগুলো পরবর্তী একটি আইপিও’তে অংশগ্রহন করতে পারবে না।
এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড : এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেডের কাট অফ প্রাইস নির্ধারিত হয়েছে ৩৫ টাকা। এর ১০০ শতাংশ অর্থাৎ আরো ৩৫ টাকা যোগ করে মোট ৭০ টাকা এবং ১৫০ শতাংশ ৫২ টাকাসহ মোট ৮৭ টাকার মধ্যে যারা বিড করেছে অর্থাৎ ৭০ টাকা থেকে ৮৭ টাকার মধ্যে যারা বিড করেছে তাদের পরবর্তী একটি আইপিওতে অংশগ্রহনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ডিএসই থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ৭০ টাকা থেকে ৮৭ টাকার মধ্যে বিড করেছে ২টি ইলিজিবল ইনভেস্টর। এনার্জিপ্যাকের সর্বোচ্চ বিড করা করেছে দ্য একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড ৮৫ টাকায়। এরপরের অবস্থানে রয়েছে অগ্রণী ইক্যুইটি অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ৭৮ টাকায়। এনার্জিপ্যাকের অতিরিক্ত শেয়ার দর নির্ধারণে যাদের সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল তাদের মধ্যে একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং অগ্রণী ইক্যুইটি অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড প্রতিষ্ঠান দুটি পরবর্তী একটি আইপিও’তে অংশগ্রহন করতে পারবে না।
মীর আখতার হোসাইন লিমিটেড : মীর আখতার হোসাইন লিমিটেডের কাট অফ প্রাইস নির্ধারিত হয়েছে ৬০ টাকা। এর ১০০ শতাংশ অর্থাৎ আরো ৬০ টাকা যোগ করে মোট ১২০ টাকা এবং ১৫০ শতাংশ ৯০ টাকাসহ মোট ১৫০ টাকার মধ্যে যারা বিড করেছে অর্থাৎ ১২০ টাকা থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে যারা বিড করেছে তাদের পরবর্তী একটি আইপিওতে অংশগ্রহনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ডিএসই থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, মীর আক্তার হোসেন লিমিটেডের সর্বোচ্চ বিড করেছে এশিয়ার টাইগার ক্যাপিটাল পার্টনার্স ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ৯৮ টাকায়। এরপরের অবস্থানে রয়েছে একুশ ফার্স্ট ইউনিট ফান্ড এবং একুশ ওয়েলথ ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড ৮১ টাকায়। অর্থাৎ মীর আখতারের অতিরিক্ত শেয়ার দর নির্ধারণে যাদের সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল তারাই কেউই শাস্তির আওতায় পড়ছে না।
লুব-রেফ (বাংলাদেশ) : লুব-রেফ (বাংলাদেশ) লিমিটেডের কাট অফ প্রাইস নির্ধারিত হয়েছে ৩০ টাকা। এর ১০০ শতাংশ অর্থাৎ আরো ৩০ টাকা যোগ করে মোট ৬০ টাকা এবং ১৫০ শতাংশ ৪৫ টাকাসহ মোট ৭৫ টাকার মধ্যে যারা বিড করেছে অর্থাৎ ৬০ টাকা থেকে ৭৫ টাকার মধ্যে যারা বিড করেছে তাদের পরবর্তী একটি আইপিওতে অংশগ্রহনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ডিএসই থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, লুব-রেফে সর্বোচ্চ বিড করেছে এশিয়া ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড ৬০ টাকায়। এরপরের অবস্থানে রয়েছে ন্যাশনাল সিকিউরিটিজ অ্যান্ড কনসালট্যান্টস লিমিটেড ৫৮ টাকায়। অর্থাৎ বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী লুব-রেফের বিডিংয়ে অংশগ্রহণকারী কেউই শাস্তির আওতায় পড়ছে না।
ইনডেক্স এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড : ইনডেক্স এগ্রো ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেডের কাট অফ প্রাইস নির্ধারিত হয়েছে ৬২ টাকা। এর ১০০ শতাংশ অর্থাৎ আরো ৬২ টাকা যোগ করে মোট ১২৪ টাকা এবং ১৫০ শতাংশ ৯৩ টাকাসহ মোট ১৫৫ টাকার মধ্যে যারা বিড করেছে অর্থাৎ ১২৪ টাকা থেকে ১৫৫ টাকার মধ্যে যারা বিড করেছে তাদের পরবর্তী একটি আইপিওতে অংশগ্রহনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ডিএসই থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ইনডেক্স এগ্রোর সর্বোচ্চ বিড করেছে বিসিবি আইসিএল গ্রোথ ফান্ড ১০০ টাকায়। এরপরের অবস্থানে রয়েছে মিডওয়ে সিকিউরিটিজ লিমিটেড ৮১ টাকায়। অর্থাৎ অতিরিক্ত শেয়ার দর নির্ধারণে যাদের সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল তারাই কেউই শাস্তির আওতায় পড়ছে না।