প্রভাতি ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার যোগসাজশের মাধ্যমে কারসাজি করে দাম বাড়ানোর অভিযোগে তিন ব্যক্তিকে জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) অনুসন্ধানে শেয়ার কারসাজির বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রভাতি ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির অভিযোগে ওই তিন ব্যক্তিকে মোট ৭৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
সম্প্রতি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।
প্রভাতি ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজিতে জড়িত থাকা তিন বিনিয়োগকারীর মধ্যে রয়েছে- এসবিএল ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের বিনিয়োগকারী ও শিক্ষিত বেকার কেন্দ্রীয় সঞ্চয় ঋণদান সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন শেখ, সিটি ব্রোকারেজের বিনিয়োগকারী মো. এ জি মাহমুদ এবং মো. সাইফ উল্লাহ।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, প্রভাতি ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে মো. জসিম উদ্দিন শেখ ও তার সহযোগীরা মোট ৪ কোটি ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৭২৫ টাকা রিয়েলাইজড গেইন করেছেন। ফলে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ২২ এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩ এর ধারা ১৮ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ জরিমানা ধার্য করা হয়েছে। এ আদেশ জারি করার ৩০ দিনের মধ্যে অভিযুক্তদের বিএসইসির অনুকূলে দণ্ডিত অর্থ ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডারের মধ্যে বিএসইসিতে জমা দিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে সিকিউরিটিজ আইন মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে কমিশন। অভিযুক্ত প্রত্যেকেই সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই)(৫) এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ার অর্জন, অধিগ্রহণ ও কর্তৃত্ব গ্রহণ) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৪(১) লঙ্ঘন করেছে।
তথ্য মতে, ২০২০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে প্রভাতি ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার লেনদেন সংক্রান্ত তদন্ত করে ডিএসই। তদন্তে আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার ২৯.৪০ টাকা থেকে কারসাজি করে বাড়িয়ে ৬৭.৪০ টাকায় বা ১২৯.২৫ শতাংশে উন্নীত করা হয় বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। অধিক পরিমাণ শেয়ার কেনাবেচার মাধ্যমে মো. জসিম উদ্দিন শেখ এবং তার দুই সহযোগী এ.জি. মাহমুদ ও মো. সাইফ উল্লাহ একে অপরের সহযোগিতায় কোম্পানিটির শেয়ার দাম কৃত্রিমভাবে বাড়িয়েছেন।
আলোচ্য সময়ে মো. এ জি মাহমুদ প্রভাতি ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কিনেন ২৫ লাখ ৫৮ হাজার ৭১১টি। আর ওই সময়ে তিনি সংশ্লিষ্ট কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রি করেন ৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩০৬টি। একইভাবে মো. সাইফ উল্লাহ কোম্পানিটির শেয়ার কিনেন ১৩ লাখ ৯৭ হাজার ৪৮৯টি। ওই সময়ে তিনি সংশ্লিষ্ট কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রি করেন ৪ লাখ ৬০ হাজার ৮৯১টি। এছাড়া শিক্ষিত বেকার কেন্দ্রীয় সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির নামে কোম্পানিটির শেয়ার কেনা হয় ১২ লাখ ৭১ হাজার ১১৮টি। ওই সময় প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে প্রভাতি ইন্স্যুরেন্সের ১৩ লাখ ২৬ হাজার ১১৮টি শেয়ার বিক্রি করা হয়।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ার অর্জন, অধিগ্রহণ ও কর্তৃত্ব গ্রহণ) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৪(১) এ উল্লেখ রয়েছে, কোনও কোম্পানির ধারণকৃত শেয়ারের পরিমাণ যদি ১০ শতাংশ বা তার অধিক পর্যায়ে উন্নীত হয় অথবা ১০ শতাংশ বা তার অধিক কোনও শেয়ার ধারণ বা ধারকগণ এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে ওই কোম্পানিটির আরও শেয়ার অর্জন বা অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে তফসিল-১ এ বর্ণিত পদ্ধতিতে একটি ঘোষণা কোম্পানিটি যে এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত সেই এক্সচেঞ্জের সংশ্লিষ্ট অধিগ্রহণকারী স্টক ব্রোকার বা মার্চেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে দাখিল করবে। কিন্তু জসিম উদ্দিন শেখ এবং তার দুই সহযোগী এ জি. মাহমুদ ও মো. সাইফ উল্লাহর সহযোগীরা প্রভাতি ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার ধারণের সময় তা পরিপালন করেননি। ফলে সিকিউরিটিজ আইন ও বিধি-বিধান পরিপালনে ব্যর্থতার জন্য এ জি. মাহমুদ, মো. সাইফ উল্লাহ ও মো. জসিম উদ্দিন শেখকে জরিমানা করা হয়েছে।