দেশের পুঁজিবাজার ভালো অবস্থানে উঠে এলে সবাই লাভবান হবে, ব্যাংকগুলোর ব্যবসাও আরো উন্নয়নের মুখ দেখবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। তিনি বলেন, এখন উদ্যোক্তারা স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি সব ধরনের পুঁজি সংগ্রহ করে থাকেন ব্যাংকঋণের মাধ্যমে। পুঁজিবাজারের উন্নয়ন হলে উদ্যোক্তারা দীর্ঘমেয়াদি পুঁজির জন্য পুঁজিবাজারের সহায়তা নিতে পারবেন। যার ফলে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে ব্যাংকনির্ভরতা কমবে এবং ব্যাংক লোনের ওপর নন-পারফরমিং ঋণের যে ঝুঁকি তা হ্রাস পাবে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বএসইসির মাল্টিপারপাস হলে আয়োজিত ‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গতকাল প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন আব্দুর রউফ তালুকদার। সংস্থার চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গতকালের অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ।
আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, আমরা বাংলাদেশের মুদ্রাবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। দেশের পুঁজিবাজারের কল্যাণে যা কিছু সহযোগিতা প্রয়োজন আমরা সেটা করব। আমাদের দেশে শুধু ইকুইটি বা শেয়ার মার্কেটটাই বেড়ে উঠেছে কিন্তু ডেবট বা বন্ড মার্কেট বেড়ে ওঠেনি। সরকারি সিকিউরিটিজগুলো শিগগিরই বিও হিসাবের মাধ্যমে স্টক এক্সচেঞ্জ প্লাটফর্মে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হবে। পুঁজিবাজারসহ বন্ড মার্কেটের উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ বলেন, পুঁজিবাজারে মূল হলো মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস। ১৯৯৬ ও ২০১০ সালের বাজার ধসের কারণে মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস চলে গিয়েছে। এ অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে যে পুঁজিবাজারের গলদটা কোথায়। সে গলদগুলোকে খুঁজে বের করে পুঁজিবাজারকে ঠিক করার উদ্যোগ নিতে হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হতে গেলে আমাদের পুঁজিবাজারকে আরো বড় করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, জাপান, ভারতের সঙ্গে তুলনা করলে আমাদের জিডিপির তুলনায় বাজার মূলধন অনেক কম। করপোরেট বন্ড, ব্যাংকঋণ, পুঁজিবাজার ও প্রাইভেট ইকুইটি এ চার খাত থেকে আমাদের বিনিয়োগ আসে। উন্নত দেশে বন্ডের আকার পুঁজিবাজারের চেয়ে বড়। অথচ আমাদের এখানে বন্ডের চেয়ে পুঁজিবাজার বড়। বন্ডে বিনিয়োগকে ব্যাংকের এক্সপোজারের আওতাবহির্ভূত রাখার জন্য আমরা কাজ করছি। সবাইকে নিয়ে আমরা সম্মিলিতভাবে বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন করতে চাই।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, পুঁজিবাজার স্থিতিশীল করতে আমরা ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড গঠন করেছি, যা পুঁজিবাজারের তারল্য বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। এছাড়া এ ফান্ডের কল্যাণে অতীতে যারা বিভিন্ন কারণে লভ্যাংশ পায়নি, তাদের এখন লভ্যাংশ পরিশোধ করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্যে বিএসইসি কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগকে নিরাপদ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এজন্য বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রশিক্ষণ, কর্মশালাসহ বিভিন্ন ধরনের সচেতনতামূলক কার্যক্রম ও উদ্যোগ নিয়েছি। বিনিয়োগ শিক্ষাকে জাতীয় পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্তকরণের মাধ্যমে আমরা সবার দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নিচ্ছি।
ফেয়ার কানাডার নির্বাহী পরিচালক জিন-পল ব্যুরোড ভার্চুয়ালি উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। পরে কমিশনের নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমানের সঞ্চালনায় প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন কমিশনের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট মো. ছায়েদুর রহমান, ডিবিএর প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ডি’রোজারিও এবং বিএপিএলসির সেক্রেটারি জেনারেল মো. আমজাদ হোসেন।