সূচক ও লেনদেনে পতনের মাধ্যমে গত সপ্তাহ পার করেছে দেশের পুঁজিবাজার। এতে গত সপ্তাহে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সব সূচক কমেছে এবং লেনদেন কমেছে প্রায় ২৮ শতাংশ। এদিকে পতনের মধ্যেও গত সপ্তাহে লেনদেনের শীর্ষে রয়েছে বিবিধ খাত। এরপর লেনদেনে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে যথাক্রমে রয়েছে ওষুধ ও রসায়ন এবং প্রকৌশল খাত। আলোচিত তিনটি খাত সপ্তাহটিতে লেনদেনের শীর্ষে অবস্থান করলেও খাতগুলোয় সপ্তাহজুড়ে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির চাপ ছিল। ফলে সপ্তাহ শেষে দেখা যায় তিনটি খাতে শেয়ারদর বেশি কমেছে। এতে খাতগুলোয় শেয়ারদরের পতন হয়েছে।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সপ্তাহে বিবিধ খাতে ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৮ দশমিক ১০ শতাংশ লেনদেন হয়েছে, যা অন্য খাতগুলো থেকে সবচেয়ে বেশি এবং এর ফলে খাতটি লেনদেনের শীর্ষে রয়েছে। কিন্তু খাতটি লেনদেনের শীর্ষে থাকলেও গত সপ্তাহে বিবিধ খাতে বিনিয়োগকারীদের বিক্রির চাপে শেয়ারদর কমেছে দশমিক ৮০ শতাংশ। এই খাতে গত সপ্তাহে মোট ১৪টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়। এর মধ্যে ১১টি শেয়ারেরই দাম কমেছে আর তিনটির দাম বেড়েছে। খাতটিতে সবচেয়ে বেশি দর কমেছে সিনোবাংলা ইন্ডাস্ট্রিজের ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে ইনডেক্স এগ্রোর ২ দশমিক ৫০ শতাংশ।
এর পরের ওষুধ ও রসায়ন খাতে গত সপ্তাহে মোট লেনদেনের ১৬ দশমিক ৬০ শতাংশ হয়েছে, যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। কিন্তু খাতটিতে গত সপ্তাহে শেয়ারদর কমেছে ২ দশমিক ১০ শতাংশ, যা তৃতীয় সর্বোচ্চ শেয়ারদর পতনের খাত। আলোচিত খাতে গত সপ্তাহে ৩২টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়। এর মধ্যে শেয়ারদর বেড়েছে ছয়টির, অপরিববর্তিত রয়েছে ৯টির এবং বাকিগুলোর শেয়ারদর কমেছে। খাতটিতে গত সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি শেয়ারদর কমেছে ওরিয়ন ফার্মার ৭ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং সবচেয়ে বেশি বেড়েছে কেয়া কসমেটিকসের ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ।
এদিকে প্রকৌশল খাতে গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনের ১০ দশমিক ৮০ শতাংশ হয়েছে, যা তৃতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন। কিন্তু এ খাতেও গত সপ্তাহে শেয়ারদর কমেছে দশমিক ২০ শতাংশ। খাতটিতে গত সপ্তাহে মোট ৪২টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে ১৩টি কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে এবং বাকি কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর কমেছে। খাতটিতে লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দর কমেছে মীর আখতারের ৬ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে বিবিএসের ১৭ দশমিক ৬০ শতাংশ।
অন্যদিকে গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের কিনার চাপে শেয়ারদর বেশি বেড়েছে সেবা ও আবাসন খাতে। খাতটিতে ৭ দশমিক ৯০ শতাংশ শেয়ারদরের উত্থান হয়েছে এবং খাতটিতে গত সপ্তাহে লেনদেন হয়েছে ডিএসইর মোট লেনদেনের ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ। এরপর রয়েছে কাগজ ও মুদ্রণ খাত। এ খাতে গত সপ্তাহে ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ শেয়ার বেড়েছে এবং লেনদেন হয়েছে ৪ দশমিক ৭০ শতাংশ। ২ দশমিক ৫০ শতাংশ শেয়ারদর উত্থান নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সিরামিক খাত। খাতটিতে গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনের ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ লেনদেন হয়েছে।
বিদায়ী সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সাত হাজার ৩০৬ কোটি ১৭ লাখ ৬৭ হাজার ১৬৪ টাকার লেনদেন হয়েছে। আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ১০ হাজার ১১০ কোটি ৩৯ লাখ আট হাজার ৭৮৯ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেনে দুই হাজার ৮০৪ কোটি ২১ লাখ ৪১ হাজার ৬২৫ টাকা কমেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫১ দশমিক ১১ পয়েন্ট বা দশমিক ৭৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৫১২ দশমিক ৮৯ পয়েন্টে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক ১৭ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ১৮ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৩৫ দশমিক ২৭ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৪৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৪১৯ দশমিক ৭৩ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ৩৩০ দশমিক ৪২ পয়েন্টে।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৮৬টি প্রতিষ্ঠান শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ৬১টির বা ১৫ দশমিক ৮০ শতাংশের, কমেছে ১৭৩টির বা ৪৪ দশমিক ৮২ শতাংশের এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৫২টির বা ৩৯ দশমিক ৩৮ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিটদর।