পণ্যের অস্বাভাবিকভাবে মূল্য বাড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীল করার অভিযোগে ৯ মামলায় ইউনিলিভার বাংলাদেশসহ সাত কোম্পানি ও ব্যবসায়ীর বক্তব্য নিয়েছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন। গতকাল শুনানির দিন তাদের বক্তব্য গ্রহণ করা হয়। আজ আটটি ও আগামীকাল বৃহস্পতিবার আরও আটটি মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে গত সোমবার শুনানির প্রথম দিন ডিম ও মুরগির জন্য দুই মামলায় কাজী ফার্মসের প্রতিনিধি অংশ নেন।
প্রতিযোগিতা কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা শেখ রুবেল জানিয়েছেন, গতকালের শুনানিতে চালের জন্য রশিদ এগ্রো ফুডের স্বত্বাধিকারী আব্দুর রশিদ, নওগাঁর বেলকন গ্রুপের স্বত্বাধিকারী বেলাল হোসেন, সিটি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ডাকা হয়। সিটি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে একই দিন আটা-ময়দার জন্যও শুনানিতে অংশ নিতে হয়েছে। ডিমের জন্য প্যারাগন পোলট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালক, তেজগাঁওয়ের ডিম ব্যবসায়ী আড়তদার বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি আমানত উল্লাহ এবং মুরগির জন্য প্যারাগন পোলট্রি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে শুনানিতে ডাকা হয়। এসব মামলার শুনানি কমিশনের এজলাসে গ্রহণ করা হয়েছে। এ সময় কমিশনের চাওয়া তথ্যাদি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত তারিখে দাখিলের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আজ আরও আটটি প্রতিষ্ঠানকে শুনানির জন্য ডাকা হয়েছে। চালের জন্য এরফান গ্রুপের এরফান আলী, মজুমদার অটোরাইস মিলের ব্রজেন মজুমদার, করপোরেট চালের জন্য স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড, বসুন্ধরা গ্রুপ, আদা-ময়দার জন্য বসুন্ধরা গ্রুপ, ডিমের জন্য ডায়মন্ড এগ লিমিটেড, মুরগির জন্য নারিশ পোলট্রি ও হ্যাচারি লিমিটেড এবং টয়লেট্রিজ পণ্যের জন্য স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডকে শুনানিতে ডাকা হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার আরও আটটি প্রতিষ্ঠানকে শুনানির জন্য ডাকা হয়েছে। চালের জন্য জহুরা অটোরাইস মিলের আবদুল হান্নান, আলাল এগ্রো ফুড প্রডাক্ট লিমিটেডের আলাল আহমেদ, করপোরেট চালের ও আটা-ময়দার জন্য এসিআই লিমিটেডের চেয়ারম্যান, ডিমের জন্য পিপলস ফিড, মুরগির জন্য সাধুনা ফুড অ্যান্ড ফিডস বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড ও আলাল পোলট্রি অ্যান্ড ফিশ ফিড লিমিটেড এবং টয়লেট্রিজ পণ্যের এসিআই লিমিটেডের চেয়ারম্যানকে ডাকা হয়েছে।
প্রতিযোগিতা কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নোটিসে বলা হয়, বর্তমান দেশের বাজারে চাল, আটা-ময়দা, ডিম, বয়লার মুরগি, টয়লেট্রিজ (সাবান, সুগন্ধি সাবান, গুঁড়া সাবান) ইত্যাদির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি বা কৃত্রিম সংকটের ফলে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, তা দূরীকরণে এসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা করেছে। পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে বাজার ‘অস্থিতিশীল’ করার অভিযোগে নিত্যপণ্য প্রস্তুতকারক ও সরবরাহকারী কোম্পানি ও ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে গত বৃহস্পতিবার ৪৪টি মামলা করে প্রতিযোগিতা কমিশন।
প্রতিযোগিতা কমিশন আইনে কমিশনেই চাল, তেল, সাবান, আটা, ডিম ও মুরগি উৎপাদন ও সরবরাহ খাতের এসব কোম্পানি ও ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে দাম বাড়ানোসহ আরও কিছু অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় পৃথকভাবে এসব মামলা করা হয়। পর্যায়ক্রমে এসব মামলার শুনানি হবে কমিশনে, যা শুরু হয় কাজী ফার্মসকে দিয়ে। গত সোম ও গতকাল মঙ্গলবারের প্রথম দুই দিনের শুনানির জন্য ডাকা হলো ৮ কোম্পানি ও ব্যবসায়ীকে।
প্রতিযোগিতা কমিশন বৃহস্পতিবার যেসব কোম্পানি ও ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ৪৪টি মামলা করেছিল, সেটির তালিকা বৃহস্পতিবার জানিয়েছে। পর্যায়ক্রমে এসব কোম্পানি ও ব্যক্তিকে মামলার বিষয়ে শুনানি করা হবে।
মামলা খাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হলোÑচালের ব্যবসায় যুক্ত স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, এসিআই লিমিটেড, ব্র্যাক সিড অ্যান্ড এগ্রো, প্রাণ ফুড, দিনাজপুরের জহুরা অটোরাইস মিল, চাঁপাইনবাবগঞ্জের এরফান গ্রুপের মো. এরফান আলী, বগুড়ার কিবরিয়া এগ্রোর গোলাম কিবরিয়া বাহার, নওগাঁর মফিজ অটোমেটিক রাইসমিলের তৌফিকুল ইসলাম বাবু, বগুড়ার আলাল এগ্রোর আলাল আহমেদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নূরজাহান এগ্রো ফুডের স্বত্বাধিকারী জহিরুল ইসলাম, বগুড়ার খান অটোরাইস মিলের পুটু মিয়া, কুষ্টিয়ার দাদা রাইস মিলের আরশাদ আলী, নওগাঁর মজুমদার অটোরাইস মিলের ব্রজেন মজুমদার, নারায়ণগঞ্জের সিটি অটোরাইস অ্যান্ড ডাল মিল, ম্যাবকো হাইটেক রাইসের চেয়ারম্যান অথবা ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
আটা-ময়দার বিপণনে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির জন্য মেঘনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আকিজ গ্রুপের চেয়ারম্যান, বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এসিআই, টিকে গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, নূরজাহান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এস আলম রিফাইন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নামে মামলা করা হয়েছে। ডিমের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত সিপি বাংলাদেশের সিইও, ডায়মন্ড এগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পিপলস ফিডের প্রোপাইটরের নামে মামলা করা হয়েছে।
মুরগির ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত সাগুনা ফুড অ্যান্ড ফিডের পরিচালক, আলার পোলট্রি অ্যান্ড ফিশ ফিডের এমডি, নারিশ পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারির পরিচালক, সিপি বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টের নামে মামলা করা হয়েছে।
টয়লেট্রিজ বা সাবান, সুগন্ধি সাবান, গুড়া সাবানের বিপণনে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির জন্য এসিআই লিমিটেডের চেয়ারম্যান, স্কয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান অথবা ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কোহিনূর কেমিক্যাল ও কেয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান কিংবা ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নামে মামলা করা হয়েছে।