বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার ড. মিজানুর রহমান বলেছেন, দেশের মিউচুয়াল ফান্ডে স্বচ্ছতা বাড়ছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা এই খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট অ্যাসেট ম্যানেজার, ট্রাস্টি, কাস্টোডিয়ান, অডিটর এবং স্পন্সরদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা বাড়ানোর জন্য কাজ করছে।
আজ মঙ্গলবার(২০ সেপ্টেম্বর) ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড (সিএমএসএফ) আয়োজিত ‘রিং দ্যা বেল সিরিমনি অফ আইসিবি এএমসিএল সিএমএসএফ গোল্ডেন জুবিলী মিউচুয়াল ফান্ড’ ও ‘ইনভেস্টরস’ ক্লেইম সেটেলমেন্ট প্রোগ্রাম’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএসইসি চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
সিএমএসএফ চেয়ারম্যান ও সাবেক মূখ্য সচিব মোহাম্মদ নজিবুর রহমানের সভাপতিত্ত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসইসি কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ, বিএসইসি কমিশনার ড. মিজানুর রহমান এবং ডিএসইর চেয়ারম্যান মো. ইউনুসুর রহমান।
অনুষ্ঠানে আলোচিত অতিথিবৃন্দ ছাড়াও বক্তব্য রাখেন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কমিটির আহ্বায়ক শ্যামল দত্ত, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা এম সাইফুর রহমান মজুমদার এফসিএমএ, আইসিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মোহাম্মদ আহমেদুর রহমান, ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের চিফ অব অপারেশন মনোয়ার হোসেন এফসিএ, এফসিএমএ।
অনুষ্ঠানে ড. মিজান বলেন, কয়েক বছর আগেও মিউচুয়াল ফান্ড খাতের অবস্থা ছিল বেশ নাজুক। ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর তারিখে ২৭টি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির অধীনে ৯৩টি মিউচুয়াল ফান্ড ছিল। আর এসব ফান্ডের মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ২৪৯ কোটি টাকা। বাস্তবে এসব ফান্ডের সম্পদের প্রকৃত মূল্য ছিল তাদের বুক ভ্যালুর দুই তৃতীয়াংশ। ওই সময়ে ফান্ডগুলোর সঞ্চিতির ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা। ইউনিট প্রতি আয় বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে। অনেক সম্পদ ব্যবস্থাপক বছরের পর বছর কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি। এমনকি লভ্যাংশ ঘোষণায়ও অনিয়ম হয়েছে। অনেক সম্পদ ব্যবস্থাপক ফান্ডের যে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, তা তার প্রকৃত মুনাফার বিপরীতে ঘোষণা করেনি; করেছে কৃত্রিমভাবে দেখানো মুনাফার উপর ভিত্তি করে।
তিনি বলেন, একটি সময় পর্যন্ত মিউচুয়াল ফান্ডের টাকায় মন্দ বিনিয়োগ ছিল সাধারণ ঘটনা। যদিও সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো আয় করতে পারেনি, তবু ছিল উচ্চ পরিচালন ব্যয়।
তিনি বলেন, কমিশন মিউচুয়াল ফান্ড খাতে গুণগত পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছে। তবে এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। অদক্ষ ম্যানেজমেন্ট পুঁজিবাজারের ঝুঁকিপূর্ণ ইনস্ট্রুমেন্টে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সম্পদ বরাদ্দ সঠিকভাবে করতে পারে না। ফান্ড পরিচালনার ব্যয় অনেক বেশি। ফান্ডের আয় অনেক কম। লভ্যাংশ দেওয়ার ধারাবাহিকতা নেই।
ওপেন-ইন্ড ফান্ডের বিনিয়োগকারীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যৌক্তিক দামে তাদের ইউনিট সমর্পণ করতে পারেন না।
ড. মিজানুর রহমান বলেন, মিউচুয়াল ফান্ডের এই নাজুক অবস্থার পেছনে প্রধান ভূমিকা ছিল আর্থিক প্রতিবেদনে স্বচ্ছতার অভাব এবং অ্যাসেট ম্যানেজার, ট্রাস্টি, অডিটরস ও কাস্টোডিয়ানের উপর পর্যাপ্ত নজরদারির ঘাটতি। কমিশন এসব বিষয়ে মনোযোগ দিয়েছে। তাতে সুফলও পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে কোনো ফান্ডে সঞ্চিতির ঘাটতি নেই। ফান্ডগুলো ভাল লভ্যাংশ দিচ্ছে। আর তা দিচ্ছে তাদের মুনাফা থেকে; মূলধন থেকে নয়।