দেশের পুঁজিবাজারে গত সপ্তাহে সার্বিকভাবে নিম্নমুখিতা পরিলক্ষিত হয়েছে। এ সময়ে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচক ও লেনদেন কমার পাশাপাশি অধিকাংশ শেয়ারের দরপতনও হয়েছে। সার্বিক বিবেচনায় গত সপ্তাহে এক্সচেঞ্জটির বেশির ভাগ খাতেই নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে। দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) গত সপ্তাহে সূচক কমার পাশাপাশি লেনদেন হ্রাস পেয়েছে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, গত সপ্তাহ পুঁজিবাজারের জন্য সার্বিকভাবে দর সংশোধনী সপ্তাহ ছিল। এর মধ্যে ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের মূলধনি আয়কে করের আওতায় আনা হবে—এমন গুজবও বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পক্ষ থেকে এ বিষয়ে পরিপএ জারি করে স্পষ্টীকরণ করা হয়েছে, যাতে শেষ কার্যদিবসে বাজারে কিছুটা গতি ফিরে আসে। এছাড়া গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের দ্রুত লাভের জন্য বিশেষ কোনো সেক্টরের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে বিনিয়োগ করতে দেখা যায়নি। মূলত সাম্প্রতিক সময়ে দরপতনের সুযোগ নিয়ে বড় মূলধনি কোম্পানিগুলো থেকে ভবিষ্যতে ভালো রিটার্ন পাওয়ার লক্ষ্যে গত সপ্তাহে এসব শেয়ারে বিনিয়োগ করতে দেখা গিয়েছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহে ডিএসইর সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স আগের সপ্তাহের তুলনায় ৪৫ পয়েন্ট বা দশমিক ৬৯ শতাংশ কমেছে। সূচকটির বর্তমান অবস্থান ৬ হাজার ৫১৫ পয়েন্টে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ৬ হাজার ৫৬০ পয়েন্টে। সূচকের পতনে গত সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস, পূবালী ব্যাংক ও অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ারের।
ডিএসইর অন্য সূচকের মধ্যে নির্বাচিত কোম্পানির সূচক ডিএস-৩০ সপ্তাহের ব্যবধানে ২৯ দশমিক ৮২ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২৫ শতাংশ কমে ২ হাজার ৩৪৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ২ হাজার ৩৭৬ পয়েন্টে। শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ১১ দশমিক ৬৯ পয়েন্ট বা দশমিক ৮১ শতাংশ কমে ১ হাজার ৪৩০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ১ হাজার ৪৪১ পয়েন্টে। ডিএসইতে গত সপ্তাহে মোট ৩৯৫টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৯৬টির, কমেছে ১৮৩টির আর অপরিবর্তিত ছিল ১০৯টির। এছাড়া লেনদেন হয়নি ৭টির।
ডিএসইতে গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে ৭ হাজার ৮২ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যেখানে আগের সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে লেনদেন ছিল ৯ হাজার ৯১ কোটি টাকা। সে হিসাবে সাপ্তাহিক লেনদেন কমেছে ২ হাজার ৮ কোটি টাকার বেশি বা ২২ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। গত সপ্তাহে ডিএসইতে দৈনিক গড়ে ১ হাজার ৪১৬ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যেখানে আগের সপ্তাহে দৈনিক গড় লেনদেন ছিল ১ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা।
গত সপ্তাহে এক্সচেঞ্জটির খাতভিত্তিক লেনদেনে শীর্ষে রয়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাত। ডিএসইর মোট লেনদেনের ২২ দশমিক ২০ শতাংশই ছিল খাতটির দখলে। ২১ দশমিক ৩০ শতাংশ নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বিবিধ খাত। তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে প্রকৌশল খাত। এ খাতের দখলে রয়েছে মোট লেনদেনের ৯ দশমিক ৪০ শতাংশ। ৮ দশমিক ২০ শতাংশ লেনদেন নিয়ে তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে বস্ত্র খাত। পরের অবস্থানে থাকা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের দখলে রয়েছে মোট লেনদেনের ৪ দশমিক ৭০ শতাংশ।
গত সপ্তাহে ডিএসইর অধিকাংশ খাতে নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে। তবে যে কয়টি খাতে ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে তার শীর্ষে রয়েছে পাট খাত। গত সপ্তাহে খাতটিতে ২১ দশমিক ৭০ শতাংশ ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে। পরের অবস্থানে থাকা ভ্রমণ ও অবকাশ খাতে এসেছে ১১ দশমিক ৬০ শতাংশ ইতিবাচক রিটার্ন। এছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি, চামড়া ও জীবন বীমা খাতে ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে। বাকি সব খাত থেকেই গত সপ্তাহে নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে। এর মধ্যে সিমেন্ট খাতে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে, ৪ দশমিক ৭০ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২ দশমিক ২০ শতাংশ নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে বস্ত্র খাতে। তৃতীয় অবস্থানে থাকা কাগজ ও মুদ্রণ খাতে এসেছে ১ দশমিক ৭০ শতাংশ নেতিবাচক রিটার্ন। এছাড়া সেবা ও আবাসন খাতে ১ দশমিক ৫০ শতাংশ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে ১ দশমিক ১০ শতাংশ এবং ওষুধ ও রসায়ন খাতে ১ দশমিক ১০ শতাংশ নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে গত সপ্তাহে।
গত সপ্তাহ শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ২০ হাজার ১২৬ কোটি টাকায়। যেখানে সপ্তাহের শুরুতে বাজার মূলধন ছিল ৫ লাখ ২২ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকায়। সে হিসাবে আলোচ্য সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে প্রায় ২ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা বা দশমিক ৪৯ শতাংশ।
অন্যদিকে সিএসইতে গত সপ্তাহে সার্বিক সূচক সিএএসপিআই দশমিক ৭০ শতাংশ কমে ১৯ হাজার ১৪১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহে যা ছিল ১৯ হাজার ২৭৬ পয়েন্টে। সিএসসিএক্স সূচকটি গত সপ্তাহ শেষে দশমিক ৭১ শতাংশ কমে ১১ হাজার ৪৭৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের সপ্তাহ শেষে সূচকটির অবস্থান ছিল ১১ হাজার ৫৫৫ পয়েন্টে। সিএসইতে গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছে ১৪৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে যেখানে লেনদেন হয়েছিল ১৬০ কোটি ৭ লাখ টাকা। আলোচ্য সময়ে সিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৩৪টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৯১টির, কমেছে ১৫৮টির, অপরিবর্তিত রয়েছে ৮৫টির।