1. [email protected] : ইকোনোমিক বিডি প্রতিবেদক : ইকোনোমিক বিডি প্রতিবেদক
  2. [email protected] : ইকোনোমিক বিডি : ইকোনোমিক বিডি
রিজেন্ট টেক্সটাইলের বিরুদ্ধে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেওয়ার অভিযোগ
শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৯ অপরাহ্ন

রিজেন্ট টেক্সটাইলের বিরুদ্ধে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেওয়ার অভিযোগ

  • পোস্ট হয়েছে : শনিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২০
Regent-Textile-Mills-ltd

বিনিয়োগকারীদের টাকায় ব্যবসা করে কোম্পানি লাভে থাকলেও পর্যাপ্ত ডিভিডেন্ড দিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে  শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি রিজেন্ট টেক্সটাইলের বিরুদ্ধে। রিজেন্ট টেক্সটাইলের শেয়ার ক্রয় করা একাধিক বিনিয়োগকারী এই অভিযোগ করেন।

বস্ত্র খাতের এই কোম্পানিটি ২০১৫ সালে আইপিওর মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে ১২৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল রিজেন্ট টেক্সটাইল। কারখানা আধুনিকায়ন, পুনর্বাসন ও সম্প্রসারণের (বিএমআরই) জন্য এবং নতুন তৈরি পোশাক কারখানা গঠনের জন্য ১২৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল কোম্পানিটি। সেই টাকা থেকে ৭৯ কোটি টাকা তারা বিনিয়োগ করে। বাকি ৪৫ কোটি টাকা কোনো খাতেই খরচ করতে পারেনি কোম্পানিটি।

শেয়ারবাজার থেকে উত্তোলিত টাকা ব্যবহারের জন্য এরই মধ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থার থেকে সময়সীমা চারবার বাড়িয়ে নিয়েছে কোম্পানিটি। যদিও কোম্পানিটি বিএমআরই প্রকল্প ১২ মাসের মধ্যে এবং আরএমজি প্রকল্পটি ১৮ মাসে সম্পন্ন করতে চেয়েছিল। এই কাজের প্রাথমিক সময়সীমা ২০১৬ সালের ১৯ ডিসেম্বর এ শেষ হয়েছে। এরপর রিজেন্ট টেক্সটাইল প্রথমবারের জন্য সময়সীমা ৩১ অক্টোবর ২০১৭, তারপর দ্বিতীয়বারের জন্য ৩০ জুন ২০১৮, তৃতীয়বার ৩১ অক্টোবর ২০১৮ এবং শেষবারের মতো ৩০ জুন ২০১৯-এ বাড়ানোর আবেদন করলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা তা অনুমোদন করে।

কোম্পানিটি এই সময়ের মধ্যে মোট আইপিও অর্থের মোট ৭৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যবহার করেছে, যা মোট আইপিও ফান্ডের ৬৪ শতাংশ। বাকি টাকা কোম্পানিটি ব্যবহার করতে পারেনি। সেই টাকা ব্যাংকে রাখার ফলে গত পাঁচ বছরে লভ্যাংশসহ কোম্পানিটির মোট এফডিআরের পরিমাণ দাঁড়ায় ৮০ কোটি টাকার বেশি।

অব্যবহত ৪৫ কোটি টাকা তারা কয়েকটি ব্যাংকে এফডিআর করে রাখে, যার লভ্যাংশসহ এখন প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। প্রতি বছর ব্যবসা করে লাভে থাকলেও তাদের দেয়া ডিভিডেন্ডের হার খুব বেশি নয়। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পরের বছর ২০১৬ সালে তারা ডিভিডেন্ড দেয় ১০ শতাংশ নগদ এবং পাঁচ শতাংশ বোনাস। এর পরের বছর ২০১৭ সালে তা কমে আসে ১০ শতাংশ নগদ ডিভিডেন্ডে। পরবর্তী বছর ২০১৮ সালে ডিভিডেন্ড দেয় পাঁচ শতাংশ বোনাস। ২০১৯ সালেও পাঁচ শতাংশ বোনাস ঘোষণা করে প্রতিষ্ঠানটি। আর চলতি বছর তা এসে দাঁড়ায় এক শতাংশ নগদ ও এক শতাংশ বোনাস। অথচ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কোম্পানিটি কর-পরবর্তী মুনাফা করে ১২ কোটি ৯৮ লাখ টাকার বেশি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কর-পরবর্তী মুনাফা করে ১১ কোটি ৯৩ লাখ টাকারও বেশি। কোম্পানিটি এত মুনাফা করার পরও তাদের দেয়া ডিভিডেন্ড সন্তোষজনক নয় বলে অভিযোগ করেন বিনিয়োগকারীরা।

হেলালুদ্দিন নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, কোম্পানি প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মুনাফা করে থাকে। এত মুনাফা করলেও তারা বিনিয়োগকারীদের ঠিক সেভাবে প্রতিদান দিচ্ছেন না। এতে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহ হারাবে সাধারণ মানুষ বলেও জানান তিনি।

এ ব্যাপারে বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, লভ্যাংশ দেয়ার ব্যাপারটি কোম্পানির ইচ্ছাধীন। কোম্পানি চাইলে তার  ইচ্ছামতো লভ্যাংশ দিতে পারে। এখানে কমিশনের আসলে কিছু করার নেই। কিন্তু কোম্পানি যেহেতু বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ব্যবসা করছে এবং মুনাফা করছে, সে কারণে বিনিয়োগকারীরা আশা করে কোম্পানি তাদের ভালো মানের লভ্যাংশ দেবে। বিনিয়োগকারীরা টাকা বিনিয়োগ করে লাভ করার জন্য। সেদিক থেকে দেখলে কোম্পানির উচিত বিনিয়োগকারীদের একটি ভালো পরিমাণ লভ্যাংশ দেয়া।

অপরদিকে শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত এই প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) টাকা দিয়ে সহযোগী কোম্পানি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে কোম্পানি সূত্রে। আইপিও’র টাকা এফডিআর করে রাখার পর তা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়, যা দিয়ে সহযোগী কোম্পানি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা যায়। আইপিওর টাকা দিয়ে নিজেদের সহযোগী কোম্পানি কেনার বিষয়টি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিএসইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ অক্টোবর রিজেন্ট টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ আইপিওর টাকা দিয়ে লিগ্যাসি ফ্যাশনকে কিনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কোম্পানিটি লিগ্যাসি ফ্যাশনের ৯৯ শতাংশ কিনে নেয়ার কথা জানায়। লিগ্যাসি ফ্যাশনকে কিনতে ব্যয় হবে ৮৩ কোটি এক লাখ ১৫ হাজার টাকা। এই টাকার মধ্যে ৮০ কোটি টাকা দেবে রিজেন্ট টেক্সটাইল প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) টাকা থেকে। বাকি টাকা পরিশোধ করা হবে কোম্পানির নিজস্ব ফান্ড থেকে।

কিন্তু সিকিউরিটিজ আইনে বলা আছে, কোনো কোম্পানি তার সাবসিডিয়ারি/ অ্যাসোসিয়েট/ সিস্টার কনসার্ন/ হোল্ডিং কোম্পানি/ প্যারেন্ট কোম্পানিতে আইপিওর মাধ্যমে উত্তোলিত টাকা ব্যবহার করতে পারবে না। আইনে আরও বলা হয়েছে, কোম্পানিকে তার সাবসিডিয়ারি/ অ্যাসোসিয়েট/ সিস্টার কনসার্ন/ হোল্ডিং কোম্পানি/ প্যারেন্ট কোম্পানির জন্য আলাদাভাবে আইপিওর আবেদন করতে হবে। এ ব্যাপারে ক্যাপিটাল ইস্যু বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

আইপিওর অব্যবহƒত সেই টাকা দিয়েই কোম্পানিটি তার সহযোগী প্রতিষ্ঠান লিগ্যাসি ফ্যাশনকে কিনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোম্পানিটি যখন তার আইপিওর টাকা ব্যবহার করতে পারছিল না, তখন বিএসইসি থেকে চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়, ব্যাংকে রাখা আইপিওর ৪৫ কোটি টাকা ব্যবহার করতে পারবে, লভ্যাংশ ব্যবহার করতে পারবে না। কিন্তু কোম্পানিটি ব্যাংকে থাকা সব টাকাই আইপিওর টাকা বলে তার সহযোগী কোম্পানি লিগ্যাসি ফ্যাশনকে কিনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এ ব্যাপারে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. রেজাউল করিম বলেন, রিজেন্ট টেক্সটাইল মিলস আইপিও’র টাকা দিয়ে লিগ্যাসি ফ্যাশন নামে একটি কোম্পানিকে ক্রয় করেছে। ক্রয় করা কোম্পানিটি রিজেন্ট টেক্সটাইলের সহযোগী প্রতিষ্ঠান কি না, সে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখছে বিএসইসি।

তিনি বলেন, আইনে বলা আছে, কোনো কোম্পানি তার সহযোগী কোনো প্রতিষ্ঠান ক্রয় করতে পারবে না। যদি লিগ্যাসি ফ্যাশন এবং রিজেন্ট টেক্সটাইল মিলস একই গ্রুপের হয়, তাহলে কোম্পানিটিকে ক্রয়ের বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ বিষয়ে রিজেন্ট টেক্সটাইলের কোম্পানি সচিব রেজাউল হক শিকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

শেয়ার দিয়ে সাথেই থাকুন..

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ