দেশের পুঁজিবাজারে গত সপ্তাহে সার্বিকভাবে ঊর্ধ্বমুখিতা পরিলক্ষিত হয়েছে। আলোচ্য সপ্তাহে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সব সূচক ও গড় লেনদেন বেড়েছে। এ সময়ে এক্সচেঞ্জটিতে কেবল মিউচুয়াল ফান্ড ও টেলিযোগাযোগ খাত বাদে সব খাত থেকেই ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে। দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) গত সপ্তাহে সব সূচক ও গড় লেনদেন বেড়েছে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ডলার কেনাবেচার ক্ষেত্রে ব্যবধান এক টাকা নির্ধারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগ ও আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমার কারণে গত সপ্তাহে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। পাশাপাশি বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে স্থানীয় বাজারে জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ করার ঘোষণাও ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। এসব কারণে গত সপ্তাহে শেয়ার বিক্রির পাশাপাশি কেনার প্রবণতাও বেড়েছে। এর আগের সপ্তাহে যেখানে কেবল শেয়ার বিক্রির চাপ দেখা গিয়েছিল।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহে ডিএসইর সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স আগের সপ্তাহের তুলনায় ৯২ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৫১ শতাংশ কমেছে। সূচকটির বর্তমান অবস্থান ৬ হাজার ২৪১ পয়েন্টে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ৬ হাজার ১৪৯ পয়েন্টে। সূচকের উত্থানে গত সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, বেক্সিমকো লিমিটেড, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস ও সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের শেয়ারের।
ডিএসইর অন্য সূচকের মধ্যে নির্বাচিত কোম্পানির সূচক ডিএস-৩০ সপ্তাহের ব্যবধানে ২৫ দশমিক ৬৬ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ১৭ শতাংশ কমে ২ হাজার ২২০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ২ হাজার ১৯৪ পয়েন্টে। শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ২০ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ কমে ১ হাজার ৩৬৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ১ হাজার ৩৪৬ পয়েন্টে। ডিএসইতে গত সপ্তাহে মোট ৩৯৫টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২৫৭টির, কমেছে ৪২টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৮৯টির। এছাড়া লেনদেন হয়নি ৭টির।
ডিএসইতে গত সপ্তাহের তিন কার্যদিবসে ২ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যেখানে আগের সপ্তাহের চার কার্যদিবসে লেনদেন ছিল ৩ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা। সে হিসাবে সাপ্তাহিক লেনদেন কমেছে ৭৪৫ কোটি টাকার বেশি বা ২০ দশমিক ৮০ শতাংশ। তবে গত সপ্তাহে এক্সচেঞ্জটির গড় লেনদেন বেড়েছে ৫০ কোটি টাকার বেশি বা ৫ দশমিক ৬১ শতাংশ। গত সপ্তাহে ডিএসইতে দৈনিক গড়ে ৯৪৬ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যেখানে আগের সপ্তাহে দৈনিক গড় লেনদেন ছিল ৮৯৬ কোটি টাকা।
গত সপ্তাহে এক্সচেঞ্জটির খাতভিত্তিক লেনদেনে শীর্ষে রয়েছে বস্ত্র খাত। ডিএসইর মোট লেনদেনের ২০ শতাংশ ছিল খাতটির দখলে। ১৪ দশমিক ২০ শতাংশ নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বিবিধ খাত। তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাত। এ খাতের দখলে রয়েছে গত সপ্তাহের মোট লেনদেনের ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ। ৯ দশমিক ৩০ শতাংশ নিয়ে তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে প্রকৌশল খাত। পরের অবস্থানে থাকা খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের দখলে রয়েছে মোট লেনদেনের ৭ শতাংশ।
ডিএসইতে গত সপ্তাহে কেবল মিউচুয়াল ফান্ড খাতে দশমিক ২ শতাংশ ও টেলিযোগযোগ খাতে দশমিক ১ শতাংশ নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে। এছাড়া বাকি সব খাত থেকেই ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে সিমেন্ট খাত থেকে, ৬ দশমিক ৩০ শতাংশ। ৫ দশমিক ৮০ শতাংশ ইতিবাচক রিটার্ন নিয়ে পরের অবস্থানে রয়েছে সেবা ও আবাসন খাত। গত সপ্তাহে তৃতীয় সর্বোচ্চ ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে ভ্রমণ খাত থেকে। এ খাত থেকে ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে ৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। পরের অবস্থানে থাকা সিমেন্ট খাত থেকে গত সপ্তাহে ৪ দশমিক ৩০ শতাংশ ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে। পঞ্চম অবস্থানের তথ্য ও প্রযুক্তি খাত থেকে আলোচ্য সপ্তাহে ৩ দশমিক ৮০ শতাংশ ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে।
গত সপ্তাহ শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৮ হাজার ১০৯ কোটি টাকায়। যেখানে সপ্তাহের শুরুতে বাজার মূলধন ছিল ৫ লাখ ৩ হাজার ২৬৬ কোটি টাকায়। সে হিসাবে আলোচ্য সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ৪ হাজার ৮৪২ কোটি টাকার বেশি বা দশমিক ৯৬ শতাংশ।
অন্যদিকে সিএসইতে গত সপ্তাহে সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেড়ে প্রায় ১৮ হাজার ৩৭০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহে যা ছিল ১৮ হাজার ১২৮ পয়েন্টে। সিএসসিএক্স সূচকটি গত সপ্তাহ শেষে ১ দশমিক ৩৪৬ শতাংশ বেড়ে ১১ হাজার ৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের সপ্তাহ শেষে সূচকটির অবস্থান ছিল ১০ হাজার ৮৬০ পয়েন্টে। সিএসইতে গত সপ্তাহের তিন কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছে ৫৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহের চার কার্যদিবসে যেখানে লেনদেন হয়েছিল ৭৪ কোটি ২২ লাখ টাকা। আলোচ্য সময়ে সিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩২৫টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৮৪টির, কমেছে ৫৪টির, অপরিবর্তিত রয়েছে ৮৭টির।