পুঁজিবাজারে গতি ফেরাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা নানামুখী উদ্যোগ নিলেও দরপতন থামছে না কিছুতেই। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল ৭৩ শতাংশের বেশি কোম্পানির দরপতন হয়। দর বেড়েছে মাত্র সাত শতাংশ কোম্পানির। মন্দাবাজারে কোনো খাতই ভালো অবস্থানে আসতে পারেনি। সব খাতেই ছিল দরপতনের আধিক্য। গতকাল বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের বিপরীতে পাট খাত ছাড়া সব খাতেই ছিল নেতিবাচক রিটার্ন।
এদিকে সম্প্রতি প্রতিটি শেয়ারের সর্বনিন্ম মূল্য বা ফ্লোর প্রাইস আরোপ করার পাশাপাশি পুঁজিবাজারে ব্যাংকের এক্সপোজার লিমিট ক্রয়মূল্যে গণনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত হলেও, এমন সংবাদ বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে পারেনি। বরং সম্প্রতি জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগের ফলে টানা তৃতীয় কার্যদিবসে সূচক পতনের ধারা অব্যাহত রয়েছে। একদিকে দেশে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি বা ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়া, অন্যদিকে জ্বালানির দাম বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মুনাফা কমতে পারে বলে বিনিয়োগকারীরা আরও চিন্তিত হয়ে পড়ছেন। ফলে বিনিয়োগকারীরা শঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। আর এই বিক্রয় চাপের প্রভাবে ধারাবাহিকভাবে বাজারে পতন হচ্ছে বলে বাজারসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
এদিকে বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গতকাল কেবলমাত্র পাট খাতে শূন্য দশমিক ৭০ শতাংশ ইতিবাচক রিটার্ন এলেও বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের বিপরীতে বাকি সব খাতে ছিল নেতিবাচক রিটার্ন। গতকাল পাট খাতের তিন কোম্পানির মধ্যে দুটির শেয়ারদর হ্রাস পেতে দেখা গেছে। তবে বাকি একটি কোম্পানি জুট স্পিনার্স লিমিটেডের শেয়ারদর বেড়েছে ৯ দশমিক ৪০ শতাংশ।
এদিন তিন দশমিক ৩০ শতাংশ নেতিবাচক রিটার্নের মাধ্যমে শীর্ষে উঠে আসে ভ্রমণ ও অবকাশ খাত। আর এরপরে নেতিবাচক রিটার্নে ছিল যথাক্রমে সেবা খাতের তিন শতাংশ, বস্ত্র খাতে দুই দশমিক ৮০ শতাংশ, সিমেন্ট খাতে দুই দশমিক ৬০ শতাংশ, সিরামিক খাতে এক দশমিক ৭০ শতাংশ, প্রকৌশল খাতে এক দশমিক ৬০ শতাংশ, বিবিধ খাতে এক দশমিক ৫০ শতাংশ, আর্থিক খাতে এক দশমিক ৪০ শতাংশ, সাধারণ বিমা খাতে এক দশমিক ১০ শতাংশ, মিউচুয়াল ফান্ড খাতে এক দশমিক ১০ শতাংশ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দশমিক ৯০ শতাংশ, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে দশমিক ৮০ শতাংশ, জীবন বিমা খাতে দশমিক ৬০ শতাংশ, আইটি খাতে দশমিক ৫০ শতাংশ, ব্যাংক খাতে দশমিক ৫০ শতাংশ, চামড়া খাতে দশমিক ৪০ শতাংশ, কাগজ খাতে দশমিক ২০ শতাংশ এবং টেলিকম খাতে দশমিক ১০ শতাংশ নেতিবাচক রিটার্ন ছিল।
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসইতে গতকাল একদিনেই এক শতাংশের বেশি কমেছে ডিএসইএক্স। একইসঙ্গে আগের দিনের চেয়ে লেনদেনও কমেছে। গতকাল ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭৮ দশমিক ০৪ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২৪ শতাংশ কমে ৬ হাজার ১৮০ দশমিক ৯০ পয়েন্টে অবস্থান করে। বাকি দুই সূচকও হ্রাস পেয়েছে। ডিএসইতে লেনদেন হয় ৭৯৯ কোটি ৪৮ লাখ ৩৭ হাজার টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল এক হাজার ৮৩ কোটি ৪৬ লাখ ৭ হাজার টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট। এ হিসাবে লেনদেন কমেছে ২৮৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। লেনদেন হওয়া ৩৭৯ কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২৬টির, কমেছে ২৭৯টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৭৪টির দর।