দেশের পুঁজিবাজারে দরপতন চলেছে। পতন ধারা আজ টানা পঞ্চম দিনে গড়িয়েছে। তবে পতন দিয়ে লেনদেন শেষ হলেও এর তীব্রতা অনেক কমেছে। আগের দিনের মতো বিক্রির চাপ না থাকায় লেনদেনও কমেছে বাজারে। সব মিলিয়ে দূরে একটা আলোর রেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, অন্ধকার সুড়ঙ্গের প্রায় শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেছে বাজার। সামনে আলোর আভা। শিগগিরই হয়তো এই আলোর ঝলকানি দেখা যাবে বাজারে।
গত দু’মাস ধরে পুঁজিবাজার কিছুটা নিম্নমুখী। ধীরে ধীরে সূচক কমছে। কমছে শেয়ারের দাম। তবে এর মধ্যেও উঠা-নামার মধ্য দিয়েই এগিয়েছে বাজার। কিন্তু গত কয়েকদিনে বাজার পরিস্থিতির বেশ কিছুটা অবনতি হয়েছে। বিশেষ করে গত ১০ মে থেকে বাজারের অবস্থা বেশ নাজুক। তখন থেকে টানা দর পতন চলছে বাজারে। গতকাল পর্যন্ত ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৪ শতাংশের বেশি কমেছে।
ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি, বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে টান,ডলারের মূল্য বৃদ্ধি, বিশ্ব পুঁজিবাজারে বড় দরপতন ও শ্রীলংকার অর্থনৈতিক সঙ্কটে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ায় বাজারে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এছাড়া কিছুটা তারল্য সঙ্কটও রয়েছে বাজারে। এমন নাজুক সময়ে ঋণের কিস্তি শোধ ও কিছু প্রতিষ্ঠানের মেয়াদী আমানতের (এফডিআর) মেয়াদ পূর্তিতে তাদের টাকা ফেরত দেওয়ার চাপ থাকায় বাজারের সবচেয়ে বড় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী আইসিবি বাজারে শেয়ার বিক্রি করে টাকা সংগ্রহের চেষ্টা করায় পরিস্থিতির অনেক অবনতি ঘটে। এ বাস্তবতায় গতকাল সোমবার আইসিবি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে এফডিআর নবায়নের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠায়। এছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিও এ বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করে। তাতে আইসিবির উপর থেকে চাপ কিছুটা কমেছে।
আইসিবি ও বিএসইসির নানা উদ্যোগে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ক কিছুটা কমে আসে। নতুন আশাবাদে আজ মঙ্গলবার (১৭ মে) সকাল থেকে তারা নতুন বিনিয়োগে সক্রিয় হয়। তাতে লেনদেন শুরুর ৭ মিনিটের মধ্যে ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ৫২ পয়েন্ট বেড়ে যায়। কিন্তু এর পর থেকেই বাজারের গতি বিপরীত দিকে ঘুরতে থাকে। কমতে থাকে সূচক। এক পর্যায়ে ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ১১২ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৩১৮ পয়েন্ট নেমে আসে। আরও বড় পতনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। তবে নাটকীয়ভাবে কিছু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর সক্রিয়তায় বাজারে সূচক পুনরুদ্ধার শুরু হয়। এক পর্যায়ে ডিএসইএক্স ৬ হাজার ৪১৯ পয়েন্টে উঠে আসে, যা আগের দিনের চেয়ে মাত্র ১১ পয়েন্ট কম। তবে শেষ পর্যন্ত সূচকটি ৬ হাজার ৪০৩ পয়েন্টে এসে স্থির হয়, যা আগের দিনের চেয়ে ২৭ দশমিক ৪২ পয়েন্ট কম।
আজ বাজারে ৩৭৯টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়। এর মধ্যে দাম কমেছে ২৪৫টির, যা লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর ৬৫ শতাংশ। আগের দিন ৯১ শতাংশ কোম্পানি শেয়ারের দর হারিয়েছিল।
এদিকে বিশ্ব পুঁজিবাজারে তীব্র পতনের ধাক্কা সামলে বেশ ভালভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বাজারে আজসহ টানা দু’দিন সূচক বেড়েছে। প্রায় এক মাসের টানা দর পতন শেষে বাঁক বদল করেছে ভারতের পুঁজিবাজার। আজ দেশটির প্রধান দুই স্টক এক্সচেঞ্জের মূল্যসূচকে বড় উত্থান হয়েছে। গত তিন মাসে এতটা সূচক বাড়েনি। সব মিলিয়ে বিশ্ব পুঁজিবাজারে যে ইতিবাচক ধারা এসেছে, তার একটি মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে আমাদের বাজারেও।
আজকের বাজার আচরণ আভাস দিচ্ছে, ঝড়ের তীব্রতা শেষ। রেশ হিসেবে কিছুটা দমকা বাতাস রয়ে গেছে। সেটিও ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাবে। স্বাভাবিক আলোকিত দিনে ফিরে আসবে পুঁজিবাজার।