শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত প্রভাতি ইন্স্যুরেন্স কর্তৃপক্ষ ১টি হসপিটালের পাশাপাশি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের আল-মুনতাহা ট্রেডিং কোম্পানি নামের ব্রোকারেজ হাউজে বিনিয়োগ করতে চায়। এক্ষেত্রে বীমা কোম্পানিটির অর্থ দিয়ে বাজার দরের চেয়ে অনেক বেশিতে ব্রোকারেজ হাউজের মালিকানা কেনার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার মতো অসৎ উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ডিএসইর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ি, প্রভাতি ইন্স্যুরেন্সের অর্থ দিয়ে (যার মালিক পর্ষদসহ সব শেয়ারহোল্ডার) আল-মুনতাহা ট্রেডিং কোম্পানির ৬৩% শেয়ার ২৯ কোটি টাকা দিয়ে কিনতে চায়। এ হিসাবে ডিএসইর সদস্য এই ব্রোকারেজ হাউজটির শতভাগ শেয়ারের দর ৪৬ কোটি ৩ লাখ টাকা।
কিন্তু বর্তমানে সিকিউরিটিজ ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবসার জন্য ১ কোটি টাকা নিবন্ধন ফি ও সঙ্গে ১ লাখ টাকা আবেদন ফি দিয়েই নতুন ট্রেক পাওয়া যায়। এরসঙ্গে জামানত হিসাবে ৩ কোটি টাকা রাখতে হয়। সেখানে প্রভাতি ইন্স্যুরেন্স কর্তৃপক্ষ ৪৬ কোটি টাকার বেশি বাজার দর বিবেচনায় নিম্ন সারির একটি ব্রোকারেজ হাউজের অংশীদারিত্ব কিনতে চায়।
নতুন ট্রেক ছাড়া সর্বশেষ ২০১৩ সালে ডিএসইর একটি মেম্বারশীপ বিক্রি করা হয়েছে ৩২ কোটি টাকায়। এমনকি স্ট্যাটেজিক ইনভেস্টরদের কাছে ২৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রির দর হিসাবে একটি ব্রোকারেজ হাউজের দাম রয়েছে ১৫ কোটিতে।
এই পরিস্থিতিতে নিম্ন সারির একটি ব্রোকারেজ হাউজ বাজার দরের চেয়ে অনেক বেশিতে কিনতে চাওয়াকে স্বাভাবিক হিসাবে দেখছেন না বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, এই ব্রোকারেজ হাউজ কেনার পেছনে বীমা কোম্পানিটির পর্ষদের ব্যক্তিগত স্বার্থ থাকতে পারে।
এ বিষয়ে ডিএসইর এক সাবেক পরিচালক বিজনেস আওয়ারকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনভাবেই আল-মুনতাহার মতো হাউজের দর ৪৬ কোটি টাকা হতে পারে না। এমন না যে ওই হাউজটি অনেক ভালো ব্যবসা করছে, তাই আপনি বেশি দরে কিনবেন। এই বেশি দরে কেনার ঘোষণা দেওয়ার পেছনে দুটি কারন থাকতে পারে। এরমধ্যে প্রভাতি ইন্স্যুরেন্স থেকে বেশি দামে কেনা দেখিয়ে পর্ষদের লোকজন টাকা হাতিয়ে নিতে পারে। আরেকটি নিজেদের কোম্পানির শেয়ার দর বাড়ানোর পায়ঁতারার লক্ষ্যে নতুন কোম্পানি কেনার ঘোষণা দিয়ে থাকতে পারে।
তিনি বলেন, প্রভাতি ইন্স্যুরেন্সের সব সম্পদের মালিক সকল শেয়ারহোল্ডাররা। এখন সেই সম্পদ পর্ষদের কয়েকজন ভোগ বা আত্মসাত করার লক্ষ্যে বেশি দরে কেনার ঘোষণা দিতে পারে। এই বেশি দরে কেনার ঘোষণা দিলেও পরিশোধ করবে কম। এতে করে অতিরিক্ত দরটুকু ব্রোকারেজ হাউজ ও প্রভাতি ইন্স্যুরেন্সের পর্ষদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা হবে।
অপরদিকে শেয়ারবাজারে স্বাভাবিকভাবেই তালিকাভুক্ত কোন কোম্পানি যখন বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়, তখন তার ইতিবাচক প্রভাব শেয়ার দরে পড়ে। এই সুযোগ নেওয়ার জন্যও প্রভাতি ইন্স্যুরেন্স কর্তৃপক্ষ বিনিয়োগের ঘোষণা দিতে পারে। যে স্বার্থ উদ্ধারের পরে বিভিন্ন অজুহাতে বিনিয়োগ করবে না বলে জানাতে পারে।
এ বিষয়ে প্রভাতি ইন্স্যুরেন্সের সচিব মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বিজনেস আওয়ারকে বলেন, একটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সম্পদ, দায়, ব্যবসা ইত্যাদি বিবেচনায় নিতে হয়। সবমিলিয়ে আমাদের পর্ষদ আল-মুনতাহার মালিকানা কিনতে চেয়েছে। এর আগে আরও ২০টির মতো ব্রোকারেজ যাচাই করা হয়েছে।