অস্থির হয়ে উঠেছে দেশের পুঁজিবাজার। চলছে টানা দরপতন। চারদিনে সূচক কমেছে চার শতাংশের বেশি। বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত। ক্রেতা-শূন্য হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার। অস্থির বাজারে স্বস্তি ফেরাতে তৎপর মরিয়া নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। নেওয়া হয়েছে বেশ কিছু উদ্যোগ। তাতে দুয়েকদিনের মধ্যে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা বিএসইসির।
গত মঙ্গলবার থেকে টানা দর পতন চলছে দেশের পুঁজিবাজারে। প্রথম দিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছিল ৩২ পয়েন্ট। পরের দিন তা বেড়ে হয় ৭৪ পয়েন্ট। সোমবার (১৬ মে) তা বেড়ে ১৩৪ পয়েন্টে উন্নীত হয়। একদিনে সূচক কমে যায় ২ শতাংশের বেশি। এদিন ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৯১ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমে যায়। কম দামেও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছিল না অনেক শেয়ারে। সব মিলিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে প্রবল আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হাহাকার শুরু হয়।
সামগ্রিক অর্থনীতিতে সৃষ্ট চাপ ও শ্রীলংকার সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটের মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবে সম্প্রতি বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়। এটি মূলত এক ধরনের আস্থার সঙ্কট। এ ধরনের পরিস্থিতিতে বাজার কিছুটা সাপোর্ট পেলে, সূচক কিছুটা বাড়লে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ক কেটে যায়। তাদের আস্থা ফিরে আসে। আর এই দায়িত্বটা পালন করতে পারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় মালিকানার বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবি সব সময় এ বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে। কিন্তু এবার ঋণ পরিশোধজনিত চাপের কারণে আইসিবি বাজারকে কোনো সাপোর্ট দিতে পারেনি। উল্টো তারা ঋণ ও ঋণের কিস্তি এবং মেয়াদ পূর্ণ হয়ে যাওয়া এফডিআরের অর্থ পরিশোধ করার জন্য শেয়ার বিক্রি করে টাকা সংগ্রহ করেছে। এতে পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়।
জানা গেছে, আইসিবিকে ওই চাপ থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে বিএসইসি কাজ শুরু করেছে। আইসিবিতে যেসব ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানের মেয়াদী আমানতের (এফডিআর) মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে, সেগুলোকে বিএসইসি অনুরোধ করছে, এফডিআর নবায়ন করার জন্য। আইসিবিকে বাড়তি সময় দেওয়ার জন্য। আইসিবি নিজেও তাদের কাছে সময় চেয়ে আবেদন করেছে। ইতোমধ্যে একটি ব্যাংক ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। অন্যরাও সাড়া দেবে বলে বিএসইসি ও আইসিবি আশা করছে। তাতে আইসিবিকে পাওনা শোধ করার জন্য আর শেয়ার বিক্রি করতে হবে না।
আইসিবি ইতোমধ্যে শেয়ার বিক্রি করে যে টাকা তুলে নিয়েছে, তা এখন কিস্তি শোধ না করে বিনিয়োগে লাগানো হবে। আজ মঙ্গলবার থেকেই চলবে এই বিনিয়োগ।
পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিল থেকে আইসিবিকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য আরও ৫০ কোটি টাকা ছাড় করতে বলেছে বিএসইসি। তাতে আইসিবির বিনিয়োগ সক্ষমতা কিছুটা হলেও বাড়বে।
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে কোনো সমস্যা আছে কি-না তা খতিয়ে দেখছে বিএসইসি। কোথাও কোনো সমস্যা থাকলে দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম অর্থসূচককে বলেন, বাজারে গতি ফেরাতে কমিশন নানাভাবে চেষ্টা করছে। ঋণের কিস্তি পরিশোধ ও এফডিআরের অর্থ ফেরত দেওয়ার জন্য যাতে আইসিবিকে চাপে পড়ে শেয়ার বিক্রি করতে না হয়, সে লক্ষ্যে কমিশন সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করছে। তাদেরকে অনুরোধ করা হচ্ছে, তারা যেন আইসিবিকে বাড়তি সময় দেয়। এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। স্থিতিশীলতা তহবিল থেকে আইসিবিকে ৫০ কোটি টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুঁজিবাজারে ডিলারদের সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। মার্চ মাসের তুলনায় এপ্রিলে তাদের বিনিয়োগ বেড়েছে ২০০ কোটি টাকা। এই বিনিয়োগের পরিমাণ আরও বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করছে কমিশন। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বাঁধা আছে কি-না খতিয়ে দেখা হচ্ছে। থাকলে তা দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, মঙ্গলবার থেকেই বাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়াবে। বাজার নিয়ে অহেতুক আতঙ্কগ্রস্ত না হওয়া এবং গুজবে বিভ্রান্ত হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়ার জন্য বিনিয়োগকারীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।