1. [email protected] : ইকোনোমিক বিডি প্রতিবেদক : ইকোনোমিক বিডি প্রতিবেদক
  2. [email protected] : ইকোনোমিক বিডি : ইকোনোমিক বিডি
৩৫.২৬ শতাংশ নারী বিও কমেছে ছয় বছরে
শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২৯ অপরাহ্ন

৩৫.২৬ শতাংশ নারী বিও কমেছে ছয় বছরে

  • পোস্ট হয়েছে : মঙ্গলবার, ৮ মার্চ, ২০২২

বৈশ্বয়িক মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যেও নিজেদের আয় বাড়াতে ভারতে অনেক নারী পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে নারী বিনিয়োগকারীরা বেশ পিছিয়ে রয়েছেন। পরিসংখ‌্যান বলছে, গত ছয় বছরে দেশের পুঁজিবাজারে নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের সংখ্যা কমেছে ৩৫.২৬ শতাংশ।

পুঁজিবাজারের তথ্যভান্ডার হিসবে পরিচিত সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিনিয়োগ শিক্ষার বিষয়ে প্রচার-প্রচারণা না থাকা পুঁজিবাজারে নারীরা পিছিয়ে রয়েছেন। একইসঙ্গে বাজারে ধারাবাহিক মন্দা পরিস্থিতি নারীদের এ খাতে বিনিয়োগ ভীতি বাড়ছে। দেশের পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা বজায় না থাকায়, নারীরা তাদের সঞ্চয় এখানে বিনিযোগে ঝুঁকি নিতে চান না। এছাড়া বিনিয়োগ শিক্ষার বিষয়ে প্রচারণা নেই বললেই চলে। এ বিষয়টির ওপর পুঁজিবাজারের স্টেহোল্ডাররাও খুব বেশি গুরুত্ব দেন না। তাই এ সেক্টরে নারীদের অনীহা বেড়েই চলেছে। ভারতের তুলনায় দেশের পুঁজিবাজারে নারীদের আকৃষ্ট করতে তেমন কোনো প্রচার নেই। এক্ষেত্রে নারীদের গচ্ছিত সঞ্চয় বাজারে বিনিয়োগ হিসেবে আনতে হলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকারেজ হাউজসহ সব স্টেকহোল্ডারা এ বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া পাশাপাশি বছরজুড়ে নারীদের বিনিয়োগ শিক্ষার বিষয়ে ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ বা কর্মশালা আয়োজনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। এছাড়া প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে নারীরা যে ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগ করতে বিষয়টি প্রচারের মাধ্যমে তুলে ধরতে হবে। একইসঙ্গে সেকেন্ডারি মার্কেটে বন্ড ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা অপেক্ষাকৃত নিরাপদ-এ ধারণা নারীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। এতে নারীরা বিনিয়োগে উৎসাহী হবেন।

সিডিবিএল সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে নারী নিয়োগকারীর সংখ্যা ৮ লাখ ছাড়িয়ে ছিল। পরবর্তীতে ধসের পর এখন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন প্রায় ২ লাখ নারী বিনিয়োগকারী। ধীরে ধীরে পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসায় বাজারে নারীদের অংশগ্রহণ কিছুটা বাড়ে, তবে তা ২০১০ সালে মতো নয়। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের পুঁজিবাজারে নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ৭ লাখ ৯৪ হাজার ৪২৪টি। ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব কমে দাঁড়ায় ৭ লাখ ২১ হাজার ৬০২টিতে। ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নারী বিও হিসাব কিছুটা বেড়ে ৭ লাখ ৩৯ হাজার ২১২টিতে দাঁড়ায়। তবে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ বিও হিসাবের সংখ্যা অনেক কমে দাঁড়ায় ৬ লাখ ৮৫ হাজার ৯৬৪টিতে। আর তারপর থেকেই কমতে থাকে নারী বিও হিসাবের সংখ্যা। ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর নারী বিও হিসাবের সংখ্যা দাঁড়ায় ৬ লাখ ৬০ হাজার ৩৬৪টিতে। ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত নারী বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ৭ হাজার ৩১৫টি। আর চলতি বছরের ৬ মার্চ (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত নারী বিও হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ১৪ হাজার ২৯০টিতে। সে হিসেবে গত ছয় বছরের দেশের পুঁজি বাজারে নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের সংখ্যা কমেছে ২ লাখ ৮০ হাজার ১৩৪টি বা ৩৫.২৬ শতাংশ।

বর্তমানে ৬ মার্চ পর্যন্ত দেশের শেয়ারবাজারে পুরুষ ও নারীর মোট বিও হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৫০ হাজার ৩৮টিতে। এর মধ্যে পুরুষ বিও হিসাবের সংখ্যা ১৫ লাখ ৩৫ হাজার ৭৭৯টি। সে হিসেবে নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের পরিমাণ ২৫.০৯ শতাংশ। ফলে পুঁজিবাজারে মোট বিও হিসাবের মধ্যে এক-চতুর্থাংশই এখন নারী বিনিয়োগকারী।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক পরিচালক ও মডার্ন সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খুজিস্তা নূর-ই-নাহারীন রাইজিংবিডিকে বলেন, বর্তমানে আইপিওতে অনেক কারেকশন এসেছে। আর নারী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কাগজে কলমে যা রয়েছে, আসলে প্রকৃতপক্ষে তত নয়। কারণ নারীদের নামে বিও হিসাব থাকলেও, তা পরিচালনা করতেন পুরুষরা। তবে আইপিও সিস্টেম পরিবর্তন হওয়ার কারণে নারী বিও হিসাবের সংখ্যা কম দেখাচ্ছে। এটার কারণে ২ লাখ নারী বিনিয়োগকারী ঘাটতি দেখাচ্ছে, যারা ছিলেন আইপিও ক্লায়েন্ট। আর গত কয়েক বছর ধরে পুঁজিবাজার ধারাবাহিক ভাবে উন্নতি হচ্ছে না। ২০২১ সালের শুরুতে মার্কেট ভালো ছিল। এখন আবার নিম্নমুখি প্রবণতায় বিরাজ করছে। তাই আমি মনে করি পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়ালেই নারী বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়বে।

সদ্য ট্রেক সনদ প্রাপ্ত ব্রোকারেজ হাউজ আরএকে ক্যাপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শায়লিন জামান আকবর রাইজিংবিডিকে বলেন, নারীদেরকে বিশ্বাস করা এবং সুযোগ দেওয়া উচিত। অনেকেই মনে করেন, নারীরা পুঁজিবাজারে তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে না। কিন্তু নারীরা পারে। একইসঙ্গে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী করে তুলতে নারীদেরকে পারিবারিকভাবে সাপোর্ট দেওয়া উচিত। নারীদের সুযোগ দিলে অবশ্যই তারা চ্যালেঞ্জ নিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী হবে। এক্ষেত্রে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের এগিয়ে আসতে হবে।

এদিকে, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেটের (বিআইসিএম) নির্বাহী প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. মাহমুদা আক্তার রাইজিংবিডিকে বলেন, পুঁজি বাজারে বিনিয়োগের বিষয়ে নারীদের কীভাবে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তোলা যায়, সে বিষয়টি নিয়ে আমরা চিন্তা করছি। বিআইসিএম ইতোমধ্যে নারী বিনিয়োগকারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য কিছু মডিউল তৈরি করেছে। তবে করোনা মহামারির কারণে আমরা সেভাবে এগোতে পারি নাই। তবে করোনার মধ্যে ভার্চুয়ালি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আশা করছি মার্চের মধ্যেই বিনিয়োগ শিক্ষার ওপর নারীদের নিয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালা আয়োজন করবে বিআইসিএম।

শেয়ার দিয়ে সাথেই থাকুন..

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ