যুদ্ধ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করার পরও ইউক্রেনে জাহাজ পাঠিয়ে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি) বড় গাফিলতি করেছে। এই ঘটনার তদন্ত দাবি করেছে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএমওএ)।
শুক্রবার সকালে চট্টগ্রামের বারিক বিল্ডিং এলাকায় অ্যাসোসিয়েশন কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজে নিহত প্রকৌশলী হাদিসুর রহমানকে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানোর পাশাপাশি জীবিত ২৮ নাবিককে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানান তারা।
বক্তারা বলেন, জাহাজটি যুদ্ধ কবলিত এলাকায় আটকে যাবার পরও নাবিকদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনতে কৃর্তপক্ষের কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। আর এসব বিষয় তদন্তে একটি উচ্চ পদস্থ তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানান তারা।
সম্মেলনে বলা হয়, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনকে যুদ্ধকবলিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা দেয় জয়েন্ট ওয়ার কমিটি। জাহাজটি ইউক্রেনের বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছায় গত ২২ ফেব্রুয়ারি। যুদ্ধকবলিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার পর সেখানে জাহাজটি পাঠানোর সিদ্ধান্ত প্রশ্নবিদ্ধ। আবার জাহাজটি আটকে যাওয়ার পর নাবিকদের দ্রুত নিরাপদে সরিয়ে আনার পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
তারা অভিযোগ করেন, জাহাজ পরিচালনায় বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের সার্বিক অব্যবস্থাপনার কারণেই নাবিকদের এমন দুর্দশার মুখে পড়তে হয়েছে।
গত বুধবার বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে নয়টার দিকে ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দর জলসীমায় নোঙর করে রাখা এমভি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। এতে জাহাজের তৃতীয় প্রকৌশলী মো. হাদিসুর রহমান নিহত হন। ঘটনার পর জাহাজ থেকে ভিডিও বার্তা দিয়ে বাঁচার আকুতি জানান নাবিকেরা।
হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশি জাহাজটি থেকে ইতিমধ্যে নাবিকদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো দাবি করা হয়, নাবিকদের উদ্ধারের জন্য ইউক্রেনে বসবাসরত বাংলাদেশি একটি ব্যবসায়ী দলের সঙ্গে আমাদের সংগঠনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরীর যোগাযোগ হয়। পরে নৌপরিবহন অধিদপ্তরকে বিষয়টি জানানো হয়। এরপরই গতকাল বৃহস্পতিবার জাহাজ থেকে নাবিকদের উদ্ধার করে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের দলটির নির্ধারিত নিরাপদ জায়গায় নেয়া হয়।
ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সেদেশের বন্দর অলভিয়াতে ২৯ নাবিক নিয়ে আটকা পড়ে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি বাংলার সমৃদ্ধি।
সম্মেলনে জানানো হয়, বুধবার রাতে স্বজনদের সাথে কথা বলার জন্য জাহাজের ছাদে আসেন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান। ওই সময় ব্রিজের উপর রকেট হামলায় মারা যান বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের হাদিসুর।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি এমভি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজটি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দর জলসীমায় নোঙর করে। পরদিন রাশিয়ার হামলা শুরু হলে জাহাজটি আটকা পড়ে।
গত ২৬ জানুয়ারি ভারতের মুম্বাই বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করেছিল বাংলার সমৃদ্ধি। তুরস্কের একটি বন্দরে পণ্য খালাস করে এটি যায় ইউক্রেইনে।
২২ ফেব্রুয়ারি ওলভিয়া বন্দরে পৌঁছায় জাহাজটি। কয়েকদিন পরেই সিমেন্ট ক্লে নিয়ে এটির ইতালির রোভেনা বন্দরের উদ্দেশে যাত্রার কথা ছিল। তবে যুদ্ধের কারণে পরিস্থিতি বদলে যায়। সমুদ্রগামী জাহাজ বাংলার সমৃদ্ধি ২০১৮ সালে বিএসসির বহরে যুক্ত হয়।