পুঁজিবাজার বন্ধ করে দিয়েছে রাশিয়া। রুবলের রেকর্ড পতন ও নগদ অর্থ উঠাতে সাধারণ নাগরিকদের দৌঁড়ঝাপ চলছে। ইউক্রেনে হামলার জেরে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার ফলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
সোমবার ডলারের বিপরীতে রুবলের মান রেকর্ড পতন হয়েছে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে রুবলের মানে এই পতন ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে সুদহার বাড়িয়ে দ্বিগুণ করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সোমবার ব্যাংক অব রাশিয়া জানায়, সুদহার ৯.৫০ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। রুবলের মান পতনের ফলে দ্রব্যমূল্যে যে প্রভাব পড়েছে তা ঠেকাতে এই পদক্ষেপ নিয়েছে রুশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকটি।
একই সঙ্গে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে শেয়ারবাজার। বর্তমান পরিস্থিতির আরো অবনমন ঠেকাতে এবং বিদেশীদের রুশ সিকিউরিটিজ বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের অংশ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এপি ও ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, ইউক্রেনে হামলার জেরে পশ্চিমা দেশগুলোর একের পর এক নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছে রাশিয়া। দেশটির মুদ্রা রুবলের মান বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৫.২৭। অর্থাৎ ১ ডলারে ১০৫.২৭ রুবল। গত শুক্রবারও ডলারের বিপরীতে রুবলের এই মান ছিল ৮৪। পশ্চিমা দেশগুলোর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার ফলে ডলারের বিপরীতে রুবলের মানে এই রেকর্ড অবমূল্যায়ন হয়েছে।
ব্যাংক অব রাশিয়া সোমবার জানায়, মস্কো এক্সচেঞ্জ আপাতত বন্ধ থাকছে। পাশাপাশি ডেরিভেটিভস মার্কেটও বন্ধ থাকছে। পরে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
বৈশ্বিক লেনদেন ব্যবস্থা সুইফটে রাশিয়ার ব্যাংকগুলোকে ব্লক করার ফলে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কী পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার মধ্যে জরুরি আমদানি-রফতানি চালু রাখতে দেশটির ৬৪ হাজার কোটি ডলারের রিজার্ভ রয়েছে।
পশ্চিমা দেশগুলোর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার ফলে ডলারের বিপরীতে দরপতন রুবলের ক্রয়ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। পাশাপাশি সাধারণ নাগরিকদের সঞ্চয়ের ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে। গ্রাহকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যেতে পারে বা এটিএম বুথ থেকে অর্থ তোলার পরিমাণ সীমিত করে দিতে পারে, এই আশঙ্কায় অনেক রুশকে বুথের সামনে ভিড় জমাতে দেখা গেছে। এটিএম বুথের সামনে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে গতকাল অর্থ তুলেছে অনেক রুশ নাগরিক।
সুইফট থেকে বেশ কয়েকটি রুশ ব্যাংককে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া মস্কোর বিরুদ্ধে ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। এছাড়া রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদও জব্দ করা হয়েছে। ব্যাংকগুলোর ওপর আরো নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে, এ আশঙ্কার মধ্যে সম্প্রতি সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকটি। যদিও সুইফট মেসেজিং ব্যবস্থা ব্লক করায় রাশিয়ার আর্থিক কাঠামো বেশ ঝুঁকিতে পড়েছে। জ্বালানি তেল ও গ্যাস রফতানিতে সুইফটের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল রাশিয়া। যদিও রাশিয়া বলছে, এসব নিষেধাজ্ঞার যথাযথ জবাব তারা দেবে।
অন্যদিকে রুবলের দাম রেকর্ড কমার পাশাপাশি গতকাল পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার কারণে বেড়ে গেছে তেলের দাম। অন্যদিকে ইউরোপীয় পুঁজিবাজার ১.৫০ শতাংশ কমেছে। ইউরোপীয় পুঁজিবাজারের সূচক স্টক্স ৬০০ কমেছে ১.৫০ শতাংশ। এ সূচক কমার প্রভাব পড়েছে ইউরোপের বড় বড় ব্যাংকের শেয়ারদরেও। অস্ট্রিয়ার রাইফেইসেন ব্যাংক, ইউনিক্রেডিট ও সোসিয়েতে জেনারেল ব্যাংকের শেয়ারদরও কমতে দেখা গেছে। পাশাপাশি এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ও নাসডাক সূচকও প্রায় ১.৫০ শতাংশ হারে কমেছে।
সাক্সো ব্যাংকের হেড অব ইকুইটি স্ট্র্যাটেজি পিটার গার্নি বলেন, লেনদেনের পরিবেশ এখন বেশ শক্তিশালী। তবে আমরা একটি আত্মরক্ষামূলক অবস্থান বজায় রাখতে চাই, যাতে পরিস্থিতি আরো খারাপ হলেও নিজেদের রক্ষা করা যায়।
গত রোববার ভ্লাদিমির পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র সতর্ক অবস্থায় রাখার নির্দেশ দেয়ার পর বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদক দেশ থেকে সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কার প্রভাব গিয়ে পড়ে বাজারে। রাশিয়া বিশ্বের ১১তম বড় অর্থনীতির দেশ। দেশটিকে নিষেধাজ্ঞা দিলে কেবল তেলের বাজারেই নয়, গোটা বিশ্বের বাণিজ্যপ্রবাহেই বড় বাধার সৃষ্টি হয় বলে মনে করছেন বিনিয়োগবিষয়ক পরামর্শক হোমিন লি। তিনি বলেন, বিশ্বের জ্বালানি, শিল্প ও কৃষি খাতের সরবরাহ চেইনে রাশিয়া ও ইউক্রেন দুটি দেশই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ফলে এ সংঘাত দীর্ঘস্থায়ী হলে বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।