বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল- ইসলাম বলেছেন, জোর করে নয় বরং বুঝিয়ে ভালো কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আনতে হবে। আমরা সেই চেষ্টাটাই করছি। যার ফলশ্রুতিতে শিগগিরই শেয়ারবাজারে ভালো ভালো কোম্পানি দেখা যাবে।
রবিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিজনেস আওয়ার টোয়েন্টিফোর ডটকম’র উদ্যোগে “শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানির তালিকাভুক্তির প্রতিবন্ধকতা ও সমাধানের উপায়” শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ ছায়েদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দি ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি) এর প্রেসিডেন্ট মো: মামুনুর রশীদ (এফসিএমএ)। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিজনেস আওয়ার টোয়েন্টিফোর ডটকমের উপদেষ্টা আকতার হোসেন সান্নামাত (এফসিএ) এবং অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক ও প্রকাশক আমিরুল ইসলাম নয়ন।
শিগগির পুঁজিবাজারে ভালো ভালো কোম্পানির আইপিও আসবে জানিয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, তিনটা ভালো কোম্পানি আইপিওতে আসার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। নেক্সট কোয়াটার থেকেই আপনারা দেখতে শুরু করবেন যাদেরকে আপনারা চাচ্ছে, তারা আস্তে আস্তে আসতে শুরু করেছে। ভালো সুস্থ্য একটা পরিবেশ যখন পাওয়া যাবে, তখন অন্যরাও উৎসাহিত হবে। চেকলিস্ট অনুযায়ী কাগজপত্র ঠিকমত জমা দিলে আমরা ভালো কোম্পানির আইপিও সাতদিন থেকে সর্বোচ্চ চার সপ্তাহের মধ্যে অনুমোদন দিয়ে দেব। অনেকগুলো কোম্পানির আইপিও আমরা দুই থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে অনুমোদন দিয়েছি।
বিএসইসির চেয়্যারম্যান বলেন, ৫০ বছর আগে যদি আমার এসএমই খাতকে গুরুত্ব দিতাম, তাহলে প্রতিষ্ঠানগুলো মিডিয়াম থেকে লার্জ হতো। এখন আমরা এসএমই’র জন্য আলাদা একটা প্লাটফর্ম করে দিয়েছি। এখানে লিস্টিং হওয়ার মাধ্যমে তারা কর্পোরেট আচার-আচারন শিখতে পারছে। পরবর্তীতে ভালো পারফরমেন্স দেখিয়ে এখান থেকেই মূল মার্কেটে আসতে পারবে। আমরা এখনই তাদেরকে এই সুযোগটা দিচ্ছি।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালকদের এককভাবে দুই শতাংশ এবং সম্মেলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারন করতেই হবে বলে জানিয়েছেন বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তিনি বলেন, শেয়ার ধারণের ক্ষেত্রে দুই শতাংশ ও ৩০ শতাংশের ক্ষেত্রে আমরা অটল। এটা ঠিক রাখতেই হবে। আপনি একটি কোম্পানির পরিচালক হবেন, কোম্পানি চালাবেন। কিন্তু দুই শতাংশ শেয়ার রাখবেন না, এটা কেমন কথা। তাহলে আপনার ইন্টারেস্ট কি? খালি বেতন-ভাতা নেয়া, সুবিধা নেয়া। আপনার যদি সেটার পার্ট না হন, তাহলে অন্যদের স্বার্থ রক্ষা করবেন কিভাবে? দুই শতাংশ শেয়ার ধারন, সেটা করতেই হবে।
তিনি বলেন, কোম্পানির পরিচালকদের সম্মেলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধানের বিষয়টি অনেকে ঠিক না বলে। কিন্তু আমরা সেটার বিষয়ে একমত না। ৩০ শতাংশ থাকতেই হবে, না থাকলে ৭০ শতাংশ যারা আছে তারা তো জড়িত না। তাদের স্বার্থ রক্ষা কিভাবে হবে? আমাদের সবার স্বার্থ দেখতে হবে। একদিক দেখলে তো হয় না।
শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম বলেন, আমাদের পুঁজিবাজারের ৬০ বছর হয়ে গেছে। এই ৬০ বছরে কিছু হয়নি কেন? ৬০ বছরে আমরা মানুষের মাইন্ডসেট চেঞ্জ করে পারিনি কেন? ৬০ বছরে কেন সবাই মানিমার্কেট মুখী ছিল? তাই হঠাৎ করে অনেক কিছু চেঞ্জ করতে গিয়ে আমাদের আনেক রকমের সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জগুলো আমরা খুবই সহজভাবে নিয়েছি এবং ভালো রেজাল্ট পাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে বর্তমানে যে জনসংখ্যা, এখানে কর্মসংস্থান হচ্ছে আমাদের একমাত্র অগ্রাধিকার। ব্যবসা-বাণিজ্যে কিন্তু ভালোও হবে লসও হবে। লাভ-লস যাই হোক সেটা আমাদের দেশেই থাকে। কারো লাভ, কারো লস। কিন্তু কর্মসংস্থান সব থেকে বেশি জরুরি। এটার জন্য আমাদের এখন সিএমএসএমই-কে এখন সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিতে হচ্ছে। আমরা আমাদের এসএমই খাতকে গুরুত্ব দেয়নি। এসএমই খাতকে ৫০ বছর আগে গুরুত্ব দিলে এই প্রতিষ্ঠানগুলো আজকে মিডিয়াম থেকে লার্জ হতো।
এ সময় ব্যাংক খাতের ঋণ পদ্ধতি নিয়েও কথা বলেন বিএসইসির চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, দেশের নন পারফর্মিং লোন কেন এতো? লোন প্রভিশনিং সিস্টেম যদি ব্যাংকিং সিস্টেমে না রাখতাম বা লোন প্রভিশনিং যদি বলতাম একবারের বেশি করা যাবে না, আজকে বাংলাদেশে কতোগুলো ব্যাংক বন্ধ হয়ে যেত? সেদিন একটা ব্যাংকের দেখলাম ৫০-৯০ শতাংশ পর্যন্ত ক্লাসিফাইড। যদি সত্যিই রিসিডিউল করার সুযোগ না থাকতো, তাহলে আরও কতোগুলো ব্যাংকের এ অবস্থা হতো।
তিনি বলেন, ক্লাসিফিকেশন লোনটা আমাদের দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য ব্যবসা বান্ধব না। ব্যবসা করতে সবাই তো আর নিয়ত খারাপ করে আসে না। ব্যবসায় লাভ-ক্ষতি আছে। কিন্তু সে আর পারে না। তখন সে নিজেও বিপদে পড়ে, ব্যাংকেও বিপদে ফেলে। আলটিমেটলি ক্লাসিফিকেশন লোনের কারণে তার জেল, জরিমানা, ব্যবসা বন্ধ, সবাইকে নিয়ে সমস্যায় পড়া এগুলোই হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, হয় তো আমি একটা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত আছি, যেটার সঙ্গে আমার ম্যানেজমেন্টের কোন সম্পর্ক নেই, আমি হয় তো একজন পরিচালক। সেই প্রতিষ্ঠান ক্লাসিফাইড হলে আমার ভালো ১০টা প্রতিষ্ঠান লাভজনক, সেগুলোও কিন্তু ক্লাসিফাইড। এসব কারণে দেশের মানিমার্কেটে বড় ধরনের একটা অরাজকাত হয়ে.. নিজেরাও বিপদে পড়েছে, ব্যাংকিং সিস্টেমকেও বিপদে ফেলেছে। আমাদের অনেক আগেই উচিত ছিল বিনিয়োগকারীদের শিক্ষা দেয়া।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, আইপিও বাণিজ্য, প্লেসমেন্ট বাণিজ্য এগুলো বহুত হয়েছে দেশে। এখন আমরা এটাকে মোটামুটি একটা অবস্থানে নিয়ে আসছি। কেউ আইপিও বাণিজ্য করে বিনিয়োগকারীদের ঠকিয়ে টাকা নিয়ে চলে যাবে এটা মোটামুটি আমরা বন্ধ করতে পেরেছি। সেই সঙ্গে কোন অডিটর এখন সাহস পাবে না ভ্রান্ত ভুল রিপোর্ট দিয়ে আইপিওতে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করে টাকা নিয়ে চলে যাবে। যেসব চাটার্ড একাউন্টেন্ট এসব অপকর্মে লিপ্ত থাকে তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।