ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলে গেম্বলারদের সঙ্গে নিয়ে সোনালি পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলসের শেয়ার দর বৃদ্ধিতে মহা পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ। এজন্য তারা শেয়ারবাজারের উর্ধ্বগতি অবস্থায় সোনালি পেপারকে শেয়ার ব্যবসায় নামিয়ে মুনাফায় বড় উত্থান দেখায়। যার উপর ভিত্তি করে স্বল্প মূলধনী এ কোম্পানিটির শেয়ার দরকে গেম্বলারদের নিয়ে আকাশচুম্বি করা হয়। তারপরে এসে চূড়ান্ত বা মূল লক্ষ্য অর্জনে শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিতে শুরু করেছেন পরিচালকেরা। যেখানে মাত্র ৪% শেয়ার বিক্রি করে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ৩.৪২ গুণ টাকা তুলে নিয়ে যাওয়া হবে।
দেখা গেছে, সোনালি পেপারের আগের বছরের একইসময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের ১ম প্রান্তিকে মুনাফা বেড়েছে প্রায় ৯৬০ শতাংশ। যার পুরোটাই এসেছে শেয়ার ব্যবসা থেকে। এই ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা থেকে যেকোন সময় হোচট খাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও শেয়ারটির দর বেড়েই চলেছে।
সোনালি পেপারের চলতি অর্থবছরের ১ম প্রান্তিকে নিট মুনাফা হয়েছে ১২ কোটি ১৯ লাখ টাকা। যে কোম্পানিটি শেয়ার ব্যবসা থেকে মুনাফা করেছে ১১ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। শেয়ারবাজার থেকে এই মুনাফা না করলে, তলানিতে থাকত ইপিএস।
তারপরেও গত কয়েক মাসে সোনালি পেপারের শেয়ারটির দর উঠে গেছে অন্য উচ্চতায়। গত ২৭ জুনের ১৯৭.৪০ টাকার শেয়ারটি ৪ জানুয়ারি লেনদেন শেষে বেড়ে দাড়িঁয়েছে ৮৩৪.৮০ টাকায়। এক্ষেত্রে দর বেড়েছে ৬৩৭.৪০ টাকা বা ৩২৩ শতাংশ। অথচ স্বল্প মূলধনীর কোম্পানিটির ব্যবসা ছোট। এছাড়া মুনাফাও আহামরি কিছু হয় না।
যার সৎ ব্যবহার করার লক্ষ্যে শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিয়েছেন কোম্পানিটির পরিচালক মোহাম্মদ জাভেদ নোমান। ডিএসইর তথ্য অনুযায়ি, মোহাম্মদ জাভেদ নোমান গত ২ জানুয়ারি ৯ লাখ বা ৪.১০% শতাংশ শেয়ার বিক্রি করার ঘোষণা দিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি শেয়ারবাজার থেকে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধনের ৩.৪২ গুণ বা ৩৪২ শতাংশ টাকা তুলে নেবেন।
দেখা গেছে, মোহাম্মদ জাভেদ নোমান কোম্পানিটির মোট ২ কোটি ১৯ লাখ ৬৩ হাজার ৪৬০টি শেয়ারের মধ্যে ৯ লাখ বা ৪.১০% শেয়ার বিক্রি করবেন। যার বর্তমান (০৪ জানুয়ারি) বাজার দর প্রতিটির ৮৩৪.৮০ টাকা করে মোট ৭৫ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। যেখানে কোম্পানিটির বর্তমানে পরিশোধিত মূলধন রয়েছে ২১ কোটি ৯৬ লাখ ৩৪ হাজার ৬০০ টাকা। অর্থাৎ ৪.১০% শেয়ার বিক্রি করেই পরিশোধিত মূলধনের ৩.৪২ গুণ বা ৩৪২% টাকা তুলে নেবেন।
এর আগে গত ১০ নভেম্বর ১ লাখ শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিয়েছিলেন মোহাম্মদ জাভেদ নোমান। যা বিক্রি সম্পন্ন করেন বলে ২৯ নভেম্বর জানান। ওইসময় প্রতিটি শেয়ারের দর ছিল ৫৭৭.৫০ টাকা করে। এ হিসেবে তিনি ওইসময় ৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন।
সোনালি পেপারের মুনাফা বৃদ্ধির মাধ্যমে শেয়ারটিতে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে শেয়ারবাজারে গত বছরের শেষ প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন ২১) বিনিয়োগে শুরু করে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। তারা ওই প্রান্তিকেই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে ৪৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। যা চলতি অর্থবছরের ১ম প্রান্তিকে আরও ১১ কোটি ৬২ লাখ টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে ৩০ সেপ্টেম্বর বেড়ে দাড়িঁয়েছে ৫৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকায়।
এই বিনিয়োগ করতে গিয়ে উচ্চ সুদের মার্জিন ঋণে জড়িঁয়েছে সোনালি পেপার। যে ঋণের কবলে ২০১০ সালের ধসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বিনিয়োগকারীরা। সোনালি পেপারের দুটি বিও হিসাবেই মার্জিন ঋণ নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে এসবিএল ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের পোর্টফোলিওতে ৮ কোটি ৬ লাখ টাকা ও ইবিএল সিকিউরিটিজের পোর্টফোলিওতে ৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকার মার্জিন নেওয়া হয়েছে।
মার্জিন ছাড়াও ১৮ কোটি টাকার সোনালি পেপার আরও প্রায় ৯৪ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণে জর্জরিত। গত ৩০ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির কাছে মধুমতি ব্যাংক ও পূবালি ব্যাংকের কারেন্ট পোরশনসহ দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ দাড়িঁয়েছে ৪৪ কোটি টাকা। এছাড়া ব্যাংক দুটির কাছে স্বল্পমেয়াদি আরও ৫০ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে।