শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত আমান ফিড কোম্পানির আর্থিক সক্ষমতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে সশরীরে পরিদর্শনের অনুমতি পায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই ও সিএসই) কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যে কয়েকটি কোম্পানির বিষয়ে অসংগতি পেয়েছে দুই স্টক এক্সচেঞ্জ গঠিত তদন্ত কমিটি। এরমধ্যে আমান ফিড কোম্পানির কারখানা ও আর্থিক হিসাবে বড় গড়মিল পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এ প্রসঙ্গে কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমান ফিড কারখানা ও আর্থিক হিসাবে কোন মিল নেই। এ কারণেই এবি ব্যাংক প্রতিষ্ঠানটিকে নিলামে তুলছে।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুমতি নিয়ে সশরীরে কারখানা পরিদর্শন, আর্থিক সক্ষমতার পাশপাশি কোম্পানিগুলোর উৎপাদন ও বিপণন কার্যক্রম যাচাই করে কমিটি। আমান ফিড ছাড়াও নূরানি ডাইং অ্যান্ড সোয়েটার, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ, মোজাফফর হোসেন স্পিনিং মিলস, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড ও কাট্টালি টেক্সটাইল কোম্পানি নিয়েও তদন্ত করছে এ কমিটি। আমান ফিড ছাড়া বাকী ৬ কোম্পানির প্রতিবেদন এখনও চুড়ান্ত হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৭টি কোম্পানির ফ্যাক্টরি বা অফিস সশরীরে পরিদর্শনের অনুমতি দেওয়া হয়। দুই স্টক এক্সচেঞ্জের প্রতিবেদন নিয়ে কমিশন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
তিনি আরো বলেন, ‘আমান ফিডের বিরুদ্ধে বিএসইসিও তদন্ত কমিটি গঠন করে । কমিটি কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অসঙ্গতি আছে কি না, তা খতিয়ে দেখে। প্রতিবেদন আলোকে কমিশন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে’।
উল্লেখ্য এর আগে আমান ফিডের আর্থিক প্রতিবেদনে কারসাজি ও করপোরেট গভর্নেন্স পরিপালনে অসঙ্গতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিএসইসি। এ কমিটি কোম্পানিটির ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত আর্থিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা তথ্যের সত্যতা যাচাই করে অসংগতি পায়।
তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন—বিএসইসির সার্ভিল্যান্স বিভাগের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ শামসুর রহমান, করপোরেট ফাইন্যান্স বিভাগের উপ-পরিচালক মো. ইকবাল হোসেন ও ক্যাপিটাল ইস্যু বিভাগের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আসিফ ইকবাল।
ওই কমিটির প্রতিবেদন ও চূড়ান্ত হয়ে রয়েছে।স্টক এক্সচেঞ্জের প্রতিবেদন নেয়ার এ কোম্পানির ব্যাপারে শাইস্তমূলক ব্যবস্থা নিবে কমিশন।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত আমান ফিডের সব আর্থিক প্রতিবেদন খতিয়ে দেখে তদন্ত কমিটি। কোম্পানিটি হিসাব কারসাজির মাধ্যমে মুনাফা বাড়িয়ে দেখায় এবং আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষায় ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএএস) এবং ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএফআরএস) অনুসরণ না করার প্রমাণ পায়।
এবি ব্যাংকের ২৫০ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ না করা এবং ঋণ আদায়ে আমান ফিডের সম্পদ নিলামে বিক্রির বিষয়টিও খতিয়ে দেখে তদন্ত কমিটি। তদন্তে আমান ফিড কোম্পানির অনিয়ম আর্থিক গড়মিলের প্রমাণ পায়। এ সময়ে কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট অডিটরের অডিট আপত্তি নিয়ে তদন্ত করা হয়।
এ বিষয়ে আমান ফিডের কোম্পানি সচিব মনিরুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ জানিয়েছেন, কোম্পানিগুলো যেন আর্থিক প্রতিবেদন ম্যানুপুলেট করার সাহস না পায়, সেজন্য বিএসইসিকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
এর আগে চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে সংগৃহীত অর্থ যথাযথভাবে ব্যবহার না করার পাশাপাশি কমিশনের কাছে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার কারণে আমান ফিডের প্রত্যেক পরিচালককে (স্বতন্ত্র ও মনোনীত পরিচালক বাদে) ২৫ লাখ টাকা করে জরিমানা করে বিএসইসি।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে আইপিওর মাধ্যমে ১০ টাকা ফেসভ্যালুর সঙ্গে অতিরিক্ত ২৬ টাকা প্রিমিয়াম নিয়ে মোট ৩৬ টাকা দরে শেয়ার ছেড়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় আমান ফিড। আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ৭০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে কোম্পানিটি। তবে আর্থিক প্রতিবেদনে অনেক মুনাফা দেখিয়েও কোম্পানিটি এবি ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করেনি। পরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অর্থঋণ আদালতের আওতায় আমান ফিডের স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পদ নিলামে বিক্রির উদ্যোগ নেয়। পরে আদালত বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংককে সমাধানের দায়িত্ব দেয়।