দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতের ৭ কোম্পানি পুঁঞ্জিভুত লোকসানে পড়েছে। কোম্পানিগুলো হলো- বিআইএফসি, ফাস ফাইন্যান্স, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, প্রাইম ফাইন্যান্স এবং ইউনিয়ন ক্যাপিটাল। কোম্পানিগুলো দীর্ঘদিন ধরেই পুঁঞ্জিভুত লোকসানে রয়েছে। ধারাবাহিক লোকসানের কারণে বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ডও দিচ্ছেনা কোম্পানিগুলো। এছাড়া কোম্পানিগুলোর শেয়ার দরও তলানীতে অবস্থান করছে দীর্ঘদিন ধরে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৬টির দর ফেসভালুর নিচে অবস্থান করছে ২ বছর ধরে। কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি আটকে থাকায় শেয়ারগুলো নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে।
বিআইএফসি : ২০০৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানিটির বর্তমানে পুঁঞ্জিভুত লোকসানের পরিমাণ ৭৬৯ কোটি ২০ লাখ টাকা। যা মুলধনের ৭ গুণেরও বেশি। কোম্পানিটির অনুমোদিত ও পরিশোধিত মূলধন যথাক্রমে- ৪০০ কোটি টাকা ও ১০০ কোটি ৬৭ লাখ ৯০ হাজার টাকা। গত ২ বছরের মধ্যে কোম্পানিটির সর্বোচ্চ দর ৭ টাকা ২০ পয়সা এবং সর্বনিম্নম দর ২ টাকা।বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার দর ৪ টাকা ১০ পয়সা।
কোম্পানিটির সর্বশেষ ২০১৩ সালে ৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। ২০১৯ এর পর থেকে কোম্পানি কোনো বোর্ড সভা করেনি। এমতাবস্থায় এ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে। এ কোম্পানির ১০ কোটি ৬ লাখ ৭৯ হাজার ৯৪৪টি শেয়ারের মধ্যে ৪০.৫৫ শতাংশ উদ্যোক্তা পরিচালক, ৪১.৬৩ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী এবং ১৭.৮২ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে।
ফাস ফাইন্যান্স : ২০০৮ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া ‘বি’ ক্যাটাগরির কোম্পানিটির বর্তমানে পুঁঞ্জিভুত লোকসানের পরিমাণ ১২০ কোটি ২৮ লাখ টাকা। কোম্পানিটির অনুমোদিত ও পরিশোধিত মূলধন যথাক্রমে- ২১০ কোটি টাকা ও ১৪৯ কোটি ৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা। গত ২ বছরের মধ্যে কোম্পানিটির সর্বোচ্চ দর ১০ টাকা ৮০ পয়সা এবং সর্বনিম্নম দর ৩ টাকা ৪০ পয়সা। ২০১৯ সালের ২০ জুন থেকেই কোম্পানিটির দর ফেসভ্যালুর নিচে অবস্থান করছে।বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার দর ৫ টাকা ৭০ পয়সা।
কোম্পানিটির সর্বশেষ ২০১৮ সালে ৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। কোম্পানিটি চলতি ২০২১ সালে এখনো কোনো বোর্ড সভা করেনি। এমতাবস্থায় এ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে। এ কোম্পানির ১৪ কোটি ৯০ লাখ ৭৭ হাজার ৩৬৪টি শেয়ারের মধ্যে ১৩.২০ শতাংশ উদ্যোক্তা পরিচালক, ১১.১৭ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী এবং ৭৫.৬৩ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে।
ফারইস্ট ফাইন্যান্স : ২০১৩ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানিটির বর্তমানে পুঁঞ্জিভুত লোকসানের পরিমাণ ১১৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। কোম্পানিটির অনুমোদিত ও পরিশোধিত মূলধন যথাক্রমে- ২০০ কোটি টাকা ও ১৬৪ কোটি ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা। গত ২ বছরের মধ্যে কোম্পানিটির সর্বোচ্চ দর ৮ টাকা ৮০ পয়সা এবং সর্বনিম্নম দর ২ টাকা। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার দর ৩ টাকা ৮০ পয়সা।
কোম্পানিটির সর্বশেষ ২০১৬ সালে ৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। কোম্পানিটি চলতি ২০২১ সালে এখনো কোনো বোর্ড সভা করেনি। এমতাবস্থায় এ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে। এ কোম্পানির ১৬ কোটি ৪০ লাখ ৬৩ হাজার ৩৩০টি শেয়ারের মধ্যে ৪১.৮৮ শতাংশ উদ্যোক্তা পরিচালক, ১২.৪২ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, ০.০৫ শতাংশ বিদেশি এবং ৪৫.৬৫ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে।
ফার্স্ট ফাইন্যান্স : ২০০৩ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানিটির বর্তমানে পুঁঞ্জিভুত লোকসানের পরিমাণ ১৯ কোটি ২০ লাখ টাকা। কোম্পানিটির অনুমোদিত ও পরিশোধিত মূলধন যথাক্রমে- ৫০০ কোটি টাকা ও ১১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। গত ২ বছরের মধ্যে কোম্পানিটির সর্বোচ্চ দর ৮ টাকা ৭০ পয়সা এবং সর্বনিম্নম দর ৩ টাকা ১০ পয়সা। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার দর ৬ টাকা ৮০ পয়সা।
কোম্পানিটির সর্বশেষ ২০১৯ সালে ২ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। এর আগে ২০১৫ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত কোানো ডিভিডেন্ড দেয়নি। ২০১৯ সাল থেকে কোম্পানিটি কোনো বোর্ড সভা করেনি। এমতাবস্থায় এ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে। এ কোম্পানির ১১ কোটি ৮৫ লাখ ৫৪ হাজার ৬৬৩টি শেয়ারের মধ্যে ৪১.৩১ শতাংশ উদ্যোক্তা পরিচালক, ২২.৩৩ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী এবং ৩৬.৩৬ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল লিজিং : ২০০৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া ‘বি’ ক্যাটাগরির কোম্পানিটির বর্তমানে পুঁঞ্জিভুত লোকসানের পরিমাণ ২ হাজার ৭৪২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। যা মূলধনের ১০ গুনেরও বেশি। কোম্পানিটির অনুমোদিত ও পরিশোধিত মূলধন যথাক্রমে- ৩০০ কোটি টাকা ও ২১০ কোটি ৮১ লাখ টাকা। ২০১৯ সালের ৭ জুলাই কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৯ টাকা ৭০ পয়সা। এরপর থেকেই কোম্পানির শেয়ার দর ফেসভ্যালুর নিচে অবস্থান করছে। গত ২ বছরের মধ্যে কোম্পানিটির সর্বনিম্নম দর ৩ টাকা ১০ পয়সা। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার দর ৪ টাকা ৮০ পয়সা।
কোম্পানিটির সর্বশেষ ২০১৮ সালে ৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। এর আগে ২০১৫ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত কোানো ডিভিডেন্ড দেয়নি। ২০২০ সালে কোম্পানিটি প্রতিটি প্রান্তিকে ধারাবাহিকভাবে লোকসান দেখিয়েছে। চলতি অর্থবছরে এখনো কোনো বোর্ড সভা করেনি। এমতাবস্থায় এ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে। এ কোম্পানির ২২ কোটি ১৮ লাখ ১০ হাজার ২৪৬টি শেয়ারের মধ্যে ৪১.৫৪ শতাংশ উদ্যোক্তা পরিচালক, ২৪.৮৮ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, ০.১৫ বিদেশি এবং ৩৩.৪৩ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে।
প্রাইম ফাইন্যান্স : ২০০৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া ‘বি’ ক্যাটাগরির কোম্পানিটির বর্তমানে পুঁঞ্জিভুত লোকসানের পরিমাণ ২৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। কোম্পানিটির অনুমোদিত ও পরিশোধিত মূলধন যথাক্রমে- ৩০০ কোটি টাকা ও ২৭২ কোটি ৯১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ২ বছরের মধ্যে কোম্পানিটির সর্বোচ্চ দর ১৫ টাকা এবং সর্বনিম্ন দর ৬ টাকা। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার দর ১২ টাকা ৬০ পয়সা।
কোম্পানিটির সর্বশেষ ২০১৯ সালে ২ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। এর আগে ২০১৫ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত কোানো ডিভিডেন্ড দেয়নি। ২০২০ সালে কোম্পানিটি প্রতিটি প্রান্তিকে ধারাবাহিকভাবে লোকসান দেখিয়েছে। চলতি অর্থবছরে এখনো কোনো বোর্ড সভা করেনি। এমতাবস্থায় এ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে। এ কোম্পানির ২৭ কোটি ২৯ লাখ ১৬ হাজার ৪৮৩টি শেয়ারের মধ্যে ৫৯.১৪ শতাংশ উদ্যোক্তা পরিচালক, ৬.৯৫ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, ০.০১ বিদেশি এবং ৩৩.৯০ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে।
ইউনিয়ন ক্যাপিটাল : ২০০৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া ‘বি’ ক্যাটাগরির কোম্পানিটির বর্তমানে পুঁঞ্জিভুত লোকসানের পরিমাণ ৪৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা। কোম্পানিটির অনুমোদিত ও পরিশোধিত মূলধন যথাক্রমে- ২০০ কোটি টাকা ও ১৭২ কোটি ৫৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ২০১৯ সালে ৯ জুলাই কোম্পানিটির দর ছিল ৯ টাকা ৯০ পয়সা। এরপর থেকেই কোম্পানিটির দর ফেসভ্যালুর নিচে অবস্থান করছে। ২ বছরের মধ্যে কোম্পানিটির সর্বনিম্ন দর ৪ টাকা ৮০ পয়সা। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার দর ৬ টাকা ৯০ পয়সায় লেনদেন হচ্ছে।
কোম্পানিটির সর্বশেষ ২০১৮ সালে ৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। ২০২০ সালে কোম্পানিটি প্রতিটি প্রান্তিকে ধারাবাহিকভাবে লোকসান দেখিয়েছে। ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০ অর্থবছরের জন্যও কোনো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেনি। এমতাবস্থায় এ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে। এ কোম্পানির ১৭ কোটি ২৫ লাখ ৭৩ হাজার ৮৪৩টি শেয়ারের মধ্যে ৩৫.২০ শতাংশ উদ্যোক্তা পরিচালক, ১৮.০৩ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী এবং ৪৬.৭৭ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে।