দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩১ ব্যাংকের মধ্যে ২০ ব্যাংক চলতি হিসাববছরের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ’২১) আয় প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে ১৫টির আয় গত বছরের তুলনায় বেড়েছে। একটির আয় প্রায় তিন গুণ হয়েছে, একটির হয়েছে দ্বিগুণ। এছাড়া দেড় গুণ হয়েছে আরও বেশ কিছু ব্যাংকের।
মহামারির বছরে গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফার যে খবর গণমাধ্যমে আসে, তাতে দেখা যায়, সিংহভাগ ব্যাংকের আয় অনেক কমে গেছে।
তবে চূড়ান্ত মুনাফার ক্ষেত্রে দেখা যায় উল্টো চিত্র। গত বছরের চেয়ে বেশি আয় করে বিনিয়োগকারীদের বেশি ডিভিডেন্ড দিয়ে চমকে দিয়েছে কোম্পানিগুলো। এবার ডিভিডেন্ডের ক্ষেত্রে ক্যাশে গুরুত্ব দেয়ায় বিনিয়োগকারীরা এবছর আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি ক্যাশ ডিভিডেন্ড পাচ্ছে।
গত ডিসেম্বরের মুনাফা দেশে এবার ব্যাংক নিয়ে আতঙ্ক যে কমেছে, সেটি গত কয়েক দিনের শেয়ার লেনদেনের তথ্যই বলছে। দীর্ঘদিন পর আবার ব্যাংকের শেয়ারে আগ্রহী হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। বাড়ছে দাম।
চলতি বছরও এখন পর্যন্ত ব্যাংকের মুনাফার যে চিত্র, তা বিনিয়োগকারীদের আশান্বিত করছে।
আয় বেড়েছে যেসব ব্যাংকের
প্রাইম ব্যাংক: ব্যাংকটির আয় প্রায় তিন গুণ বেড়েছে বছরের প্রথম প্রান্তিকে। আগের বছর যেখানে আয় ছিল ৪৬ পয়সা, সেখানে এবার আয় বেড়ে হয়েছে ১ টাকা ৩৪ পয়সা।
এই আয় ২০২০ সালে ব্যাংকটির পুরো বছরের আয়ের প্রায় কাছাকাছি। ওই বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ১ টাকা ৫৯ পয়সা।
এবি ব্যাংক: টাকার অঙ্কে মুনাফা খুব বেশি না বাড়লেও শতকরা হিসেবে দ্বিগুণ হয়েছে চাপে থাকা এবি ব্যাংকের। বছরের প্রথম তিন মাসে শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ১৬ পয়সা, আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৮ পয়সা। শতকরা হিসেবে ইপিএস বেড়েছে ১০০ শতাংশ।
ব্র্যাক ব্যাংক: গত বছর মুনাফা কমে যাওয়া ব্র্যাক ব্যাংক চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে আগের বছরের তুলনায় প্রায় দেড় গুণ আয় করেছে। জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৯৩ পয়সা। যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৬৬ পয়সা।
সাউথ ইস্ট: ব্যাংকটির প্রথম প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি আয় বেড়েছে। এই সময়ে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ১ টাকা ২২ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৯৬ পয়সা। ব্যাংকটির ইপিএস বেড়েছে ২৬ পয়সা।
ইস্টার্ন ব্যাংক: জানুয়ারি থেকে মার্চ সময় পর্যন্ত ব্যাংকটির প্রথম প্রান্তিকে আয় করেছে ১ টাকা ২৮ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ১ টাকা ০৩ পয়সা। ব্যাংকটির ইপিএস বেড়েছে ২৫ পয়সা।
সিটি ব্যাংক: ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি আয় প্রথম প্রান্তিকে বেড়েছে ২৩ পয়সা। জানুয়ারি থেকে মার্চ সময়ে ব্যাংকটির ইপিএস প্রকাশ করা হয়েছে ৯৮ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৭৫ পয়সা।
যমুনা ব্যাংক: বছরের প্রথম প্রান্তিকে যমুনা ব্যাংকের আয় হয়েছে ১ টাকা ৬০ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে ইপিএস ছিল ১ টাকা ৪২ পয়সা। ব্যাংকটির ইপিএস বেড়েছে ১৮ পয়সা।
পূবালী ব্যাংক: প্রথম প্রান্তিকে পূবালী ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৯৮ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৮৬ পয়সা। ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি আয় বেড়েছে ১২ পয়সা।
মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক: ২০২০ সালে আগের বছরের চেয়ে আয় কমে যাওয়া মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকও চলতি বছর শুভ সূচনা করেছে। বছরের প্রথম প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৮১ টাকা। গত বছর যা ছিল ৭২ পয়সা। অর্থাৎ আয় বেড়েছে ৯ পয়সা।
মার্কেন্টাইল ব্যাংক: প্রথম প্রান্তিকে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের আগের বছরের তুলনায় শেয়ারপ্রতি আয় বেড়েছে ৯ পয়সা। জানুয়ারি থেকে মার্চ সময়ে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৬৪ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে ছিল দশমিক ৫৫ পয়সা।
ওয়ান ব্যাংক: এই সময়ে ওয়ান ব্যাংকের ইপিএস হয়েছে ৮৪ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে ইপিএস ছিল ৭৯ পয়সা। অর্থাৎ শেয়ারপ্রতি আয় বেড়েছে সাড়ে ৫ পয়সা।
প্রিমিয়ার ব্যাংক: প্রথম প্রান্তিকে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৬০ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৫৫ পয়সা। এ সময়ে ব্যাংকটির ইপিএস বেড়েছে ৫ পয়সা।
শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক: প্রথম প্রান্তিকে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৬৫ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৬১ পয়সা। এই ব্যাংকটিরও বেড়েছে ৪ পয়সা।
আইএফআইসি ব্যাংক: প্রথম প্রান্তিকে আইএফআইসি ব্যাংক আয় করেছে ৪৬ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৪৪ পয়সা।
ইসলামী ব্যাংক: চলতি বছর প্রথম প্রান্তিকে ব্যাংকটি আয় করেছে ৪৫ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে আয় হয়েছিল ৪৩ পয়সা।
আয় কমেছে যেসব ব্যাংকের
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক: ২০২০ সালে শেয়ারপ্রতি প্রায় ৩ টাকা আয় কমে চমকে দেয়া ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের বছরের প্রথম প্রান্তিকে আয় অর্ধেকেরও বেশি কমে গেছে। গত বছর এই সময়ে যেখানে ৬৬ পয়সা আয় করলেও এবার তা কমে ৩২ পয়সা হয়েছে।
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক: একই পরিস্থিতি স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের। জানুয়ারি থেকে মার্চ সময়ে শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ১৭ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে আয় ছিল ৩৬ পয়সা।
উত্তরা ব্যাংক: প্রথম প্রান্তিকে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৮৪ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে আয় ছিল ১ টাকা ৩৪ পয়সা। অর্থাৎ আয় কমেছে ৫০ পয়সা।
এনসিসি ব্যাংক: চলতি হিসাববছরের প্রথম প্রান্তিকে ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি আয় করেছে ৫৫ পয়সা। গত বছর একই সময়ে ছিল ৮২ পয়সা।
ব্যাংক এশিয়া: প্রথম প্রান্তিকে ব্যাংকটির ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ৫ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ১ টাকা ১৬ পয়সা। ব্যাংকটির ইপিএস কমেছে ১১ পয়সা।