বড় বিনিয়োগকারীরা যেমন বেশি দরে শেয়ার বিক্রি করার নানা কৌশল অবলম্বন করে থাকেন, তেমনি কম দরে শেয়ার হাতিয়ে নেয়ারও নানা ফন্দি-ফিকির চালান। তেমনি এক ফন্দি-ফিকির দেখা গেল আজ (সোমবার) কম দরে বিডি ফাইন্যান্সের শেয়ার হাতিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে।
আজ সোমবার (৩ মে) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন শুরু হয় ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায়। একইভাবে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় বিডি ফাইন্যান্সের লেনদেনও শুরু হয়। আগেরদিন শেয়ারটির ক্লোজিং দর ছিল ৩২ টাকা ৭০ পয়সায়। আজ শুরুতে ৩২ টাকা ৯০ পয়সায় শেয়ারটির ক্রেতা দেখা যায় এবং বিক্রেতা থাকে ৩৩ টাকা ১০ পয়সায়। লেনদেন শুর ৩৩ টাকা ১০ পয়সায়। এরপর ৩৩ টাকা ৭০ পয়সা পর্যন্ত উঠে। তারপরই শুর হয় ভয় দেখানো সেল প্রেসার। এক পর্যায়ে দেখা যায় ৩৩ টাকায় কোম্পানিটির ১০ লাখ ৭ হাজার ১৪৩টি শেয়ারের সেল অর্ডার এবং ৩২ টাকা ৯০ পয়সায় মাত্র ৬ হাজার ৭০৮টি শেয়ারের বাই অর্ডার। এভাবে পর্যায়ক্রমে বড় বড় সেল প্রেসার দিয়ে অন্যান্য দিনের মতো আজও কোম্পানিটির লেনদেন শেষ করা হয়।
আজ বিডি ফাইন্যান্সের লেনদেন হয়েছে ৭১ লাখ ৩৫ হাজার ৫৩৬টি শেয়ার। গত এক সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪ কোটি ৬০ লাখের বেশি শেয়ার। প্রতিদিনই ডিএসই লেনদেনের শীর্ষ তালিকায় স্থান করে নিয়েছে কোম্পানিটি। আর প্রতিদিনই বড় বড় সেল প্রেসার দেখিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে কোম্পানিটির শেয়ার।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত এক সপ্তাহ যাবত চলছে পুঁজিবাজারে চাঙ্গাভাব। এ সময়ে তালিকাভুক্ত সিংহভাগ কোম্পানিরই শেয়ার দর বেড়েছে। কিন্তু চাঙ্গাভাবের মধ্যেও এক সপ্তাহ যাবত টানা পতনে রয়েছে বিডি ফাইন্যান্সের শেয়ার দর। গত ২০ এপ্রিল কোম্পানিটির দর ৪১ টাকায় উঠে। যদিও সেদিন নেতিবাচক প্রবণতায় শেয়ারটি ক্লোজিং হয় ৩৭ টাকা ৬০ পয়সায়। এরপর টানা পতনে গতকাল (রোববার) নেমে আসে ৩২ টাকা ৭০ পয়সায়। এই সময়ে কোম্পানিটির দর কমেছে ৮ টাকার বেশি বা ২০ শতাংশের বেশি। গত সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ার ডিএসইর দর পতনের শীর্ষ তালিকায় অন্তর্ভূক্ত ছিল।
পুঁজিবাজারের প্রবীণ বিনিয়োগকারী মো. আতাউর রহমান বলেন, কোন কোম্পানির শেয়ার বড় আকারে সেল করতে চাইলে সাধারণত বাই অর্ডার বেশি দেখানো হয়, সেল অর্ডার কম দেখিয়ে সেল করা হয়। বড় আকারে সেল অর্ডার দেখানো মানেই হলো কোন বড় বিনিয়োগকারী শেয়ারটি বাই করতে চান। সেজন্য বড় বড় সেল প্রেসার দেখিয়ে শেয়ারটি সংগ্রহ করছেন।
তিনি বলেন, “সম্প্রতি বিডি ফাইন্যান্স যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানির সঙ্গে বাংলাদেশে অবকাঠামো খাতে ১৭ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের একটি চুক্তি করেছে। এরপর থেকেই বাজারে গুঞ্জন চলছে, কোম্পানির শেয়ার দর অনেক দুর যাবে। চুক্তির খবর আসার পর শেয়ারটির দর ঊর্ধ্বমুখীও হয়। কিন্তু বেশি দুর এগুতে পারেনি। ৪১ টাকা যাওয়ার দিনই আবার নিম্নগামী হয়। প্রতিদিনই কোম্পানিটির ৭০-৮০ লাখ শেয়ার লেনদেন হচ্ছে। শেয়ারটির পেছনে মামুরা না থাকলে প্রতিদিন এতো বড় লেনদেন হতো না। মামুরা হয়তো কম দরে শেয়ারটি গুছিয়ে নিচ্ছে।”
আগামী ৫ মে কোম্পানিটির চলতি হিসাববছরের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ’২১) আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।
আগের হিসাববছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ’২০)কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় ছিল ৩৫ পয়সা।
৩১ ডিসেম্বর ২০২০ সমাপ্ত হিসাববছরের জন্য কোম্পানিটি ৬ শতাংশ ক্যাশ ও ৬ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড দিয়েছে। সমাপ্ত হিসাববছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ১ টাকা ৮০ পয়সা।
সর্বশেষ দর অনুযায়ী কোম্পানিটির মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ১৮.৮৩।