পুঁজিবাজারে ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটের কোম্পানি ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েজের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা ও আর্থিক অবস্থার উন্নয়নে কোম্পানিটিতে ৫ জন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে কমিশন। এর ফলে ১১ বছর পর কোম্পানিতে আটকে থাকা বিনিয়োগ ফিরে পাওয়ার আশার আলো দেখছেন বিনিয়োগকারীরা।
ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েজে মনোনীত স্বতন্ত্র পরিচালকরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শেখ রফিক হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. সুমন দাস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিনহাজ ফেরদৌস, সাবেক ব্যাংকার (ন্যাশনাল ব্যাংক) এ কে এম দেলোয়ার হোসেন মালদার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সেজুতি রহমান।
এছাড়া, ন্যূনতম দুই জন বা তার বেশি শেয়ারহোল্ডার পরিচালক মনোনয়নের জন্য কোম্পানিকে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।
সম্প্রতি ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েজের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ অন্য পরিচালকদের কাছে এই সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠিয়েছে বিএসইসি। একইসঙ্গে বিষয়টি ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ ও সেন্ট্রার ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) জানানো হয়েছে।
নতুন স্বতন্ত্র পরিচালক ও শেয়ারহোল্ডার পরিচালকরা কোম্পানির আর্থিক অবস্থার উন্নয়নে কাজ করবেন। কোম্পানিটি গতি ফিলে পেলে বিনিয়োগকারীরা তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে মনে করছে কমিশন।
বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ এ বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘পুঁজিবাজারে উন্নয়ন ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনা করে বিভিন্ন দুর্বল কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। বর্তমানে উৎপাদন কার্যক্রম নেই, এমন কোম্পানিগুলোতেও পর্যায়ক্রমে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হবে।’
ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েজ ১৯৯৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানিটি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে শেয়ার ছেড়ে শেয়ারবাজার থেকে ৫ কোটি ২৯ লাখ ৭০ হাজার সংগ্রহ করে। পরবর্তী সময়ে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের নিয়মিত লভ্যাংশ না দেওয়ায় ২০০৯ সালের ওটিসি মার্কেটে স্থানান্তরিত হয়। এরপর দীর্ঘ ১১ বছরের বেশি সময় ধরে কোম্পানিটির ব্যবসায়িক কার্যক্রমে উন্নতি হয়নি। স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত থাকার পরও সিকিউরিটিজ আইন যথাযথভাবে পরিপালন করছে না কোম্পানিটি। বরং প্রতিনিয়তই আইন লঙ্ঘন করে যাচ্ছে। দীর্ষ এ সময়ের মধ্যে আর্থিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ার পেছনে কোম্পানিটির স্বতন্ত্র পরিচালকসহ পরিচালনা পর্ষদ সদস্যদের ব্যর্থতা রয়েছে বলে মনে করে বিএসইসি।
এছাড়া, কোম্পানিটির ১০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের মাত্র ৮ শতাংশ রয়েছে একজন উদ্যোক্তা পরিচালক কামরুন নেছার হাতে। এছাড়া একজন বিদেশি উদ্যোক্তা পরিচালকের হাতে ২৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। তবে দীর্ঘ দিন ধরে ওই উদ্যোক্তার কোম্পানি পরিচালনায় কোনো ভূমিকা নেই। আর দীর্ঘ ৯ বছর ধরে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করছে না কোম্পানিটি। কোম্পানিটির ৯২ শতাংশ শেয়ারধারণ করা বিনিয়োগকারীরা গত ২১ বছরে কোনো ধরনের মুনাফা (রিটার্ন) পাননি।
এরই ধরাবাহিকতায় কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বিএসইসি কর্তৃক মনোনীত স্বতন্ত্র পরিচালক ছাড়াও ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েজের ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের নির্দেশনা পরিপালনের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে থেকে নূন্যতম ২ শতাংশ বা তার অধিক শেয়ার ধারণকারীদের নিয়ে পর্ষদ পুনর্গঠন করতে হবে। সেক্ষেত্রে শেয়ারহোল্ডার পরিচালকের সংখ্যা ন্যূনতম দুই জন বা তার অধিক হতে পারবে।
ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েজের পুনর্গঠিত পর্ষদকে বিগত দিনের বার্ষিক সাধারণ সভাগুলো (এজিএম) সম্পন্ন করা জন্য আইনগত উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বিএসইসি।
আর কোম্পানিটির পুনর্গঠিত পর্ষদ স্টক এক্সচেঞ্জের এসএমই প্ল্যাটফর্মে লেননেদেন শুরু করা জন্য প্রয়োজন পদক্ষেপ নেবে। প্রয়োজনবোধে এসএমই প্ল্যাটফর্ম থেকে তহবিল সংগ্রহ করার জন্য প্রস্তাব দিতে পারে। পুনর্গঠিত পর্ষদ কমিশনের অনুমোদন ছাড়া কোম্পানির কোনো সম্পদ বিক্রি, হস্তান্তর বা নিষ্পত্তি করতে পারবে না। একইসঙ্গে তারা ঋণ বা অন্য কোনো দায়ের জন্য ব্যক্তিগত গ্যারান্টি দেবেন না। তারা এসব কোম্পানির জন্য ঋণখেলাপি হবেন না।
এছাড়া, সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ না হওয়া পর্যন্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের শেয়ার অবরোধমুক্ত রাখা হবে। আলোচ্য বিষয়গুলো পরিপালন সাপেক্ষে পুনর্গঠিত পর্ষদকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে বিএসইসিতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েজের উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে ৩১ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হতে ৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ, ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৬১ দশমিক ৩১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। কোম্পানিটির শেয়ার সর্বশেষ ৫ টাকায় লেনদেন হয়েছে।