1. [email protected] : ইকোনোমিক বিডি প্রতিবেদক : ইকোনোমিক বিডি প্রতিবেদক
  2. [email protected] : ইকোনোমিক বিডি : ইকোনোমিক বিডি
নামমাত্র জামানতে রূপালী ব্যাংকের ৩০৮ কোটি টাকা লুট
সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:১৯ পূর্বাহ্ন

নামমাত্র জামানতে রূপালী ব্যাংকের ৩০৮ কোটি টাকা লুট

  • পোস্ট হয়েছে : বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৪

কুখ্যাত ব্যাংক লুটেরা মো: নুরুল ইসলামের মেয়ের ঘরের নাতি কথিত ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ হোসাইন মাত্র ১০ কোটি টাকার সম্পত্তি জামানাত রেখে রাষ্ট্রায়ত্ব রূপালী ব্যাংক থেকে ৩০৮ কোটি টাকা ঋণ তুলেন নেন। এই ঋণ পেতে ব্যাংকটির অসাদু কর্মকর্তাদের যোগসাজসের অভিযোগ রয়েছে।

জানা যায়, ২০২২ সালে গাজীপুর, শ্রীপুর মৌজায় ১০ কোটি টাকার সম্পত্তি জামানত রেখে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংক ঋণের নামে তুলে নেয়া এই টাকা তুলে নেওয়া হয়। তখন জমির ওপর শেড তুলে সেখানে রাখা হয় নিজেদেরই অন্য ফ্যাক্টরি থেকে আনা অকেজো, পুরোনো কিছু মেশিন। ব্যাংক থেকে পরিদর্শনে গেলে দেখানো হয় এসব মেশিনপত্র। এসব পুরোনো মেশিনারিজের মূল্যও ধরা হয় কয়েকশ’ কোটি টাকা।

এই পরিমাণ অর্থ লোপাটের ঘটনা যখন ঘটে তখন ব্যাংকটির প্রধান নির্বাহী ছিলেন শেখ হাসিনার মাফিয়া সরকারের লুটপাটের অংশীদার আতাউর রহমান প্রধান। শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ‘ব্যবসায়ী’ পরিচয়দানকারী লুটেরাদের সর্বান্তকরণে সহযোগিতা করেন রূপালী ব্যাংকের তৎকালীন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, নোমান স্পিনিং মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচারক আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ হোসাইন ২০১৮ সালে রূপালী ব্যাংক থেকে ৩০৮ কোটি টাকা ঋণ নেন।এর আগে প্রতিষ্ঠানটি বেসরকারি ডাচ-বাংলা ব্যাংক থেকে ১৫০ কোটি টাকা ঋণ নেয়। আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ হোসাইনকে এই ঋণ দেওয়া হয় তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৬ বছর। অর্থাৎ ব্যাংক লোপাটে মো. নূরুল ইসলাম একজন শিশুকে পর্যন্ত ব্যবহার করেন। ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ঋণটি যখন ক্ল্যাসিফায়েড হওয়ার উপক্রম হয় তখন সেটি পরিশোধে আব্দুল্লাহ সাদ শরণাপন্ন হন রূপালী ব্যাংকের। ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ঋণপ্রত্যাশীর ডাচ-বাংলা ব্যাংকের সমুদয় ঋণ অধিগ্রহণ করে। সেই সঙ্গে অধিগ্রহণকৃত ঋণের দ্বিগুণের বেশি অর্থ প্রতিষ্ঠানটির অনুকূলে ঋণ মঞ্জুর করে।

২০১২ সালে আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ ডাচ-বাংলা ব্যাংক থেকে ১৫০ কোটি টাকা ঋণ নেন। তখন সাদ একজন শিশু। শিশুর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটিকে পুনঃঅর্থায়নের বিপরীতে রূপালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানটির ঋণ লাভের উপযুক্তকতাও যাচাই করে দেখেনি। এ ছাড়া জামানত রাখে নামমাত্র মূল্যের একটি সম্পত্তি। বন্ধকী সম্পত্তিটি কয়েকবার বিক্রি করলেও ওই সময়কার বাজারদর অনুযায়ী ১৫০ কোটি টাকা মূল্য নিলামে উঠে আসবে না। নিম্নতর মূল্যের এ সম্পত্তির বিপরীতেই জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে রূপালী ব্যাংক থেকে নেয় আরো ৩০৮ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকটি ‘এক্সপোজার লিমিট’ও অতিক্রম করে।

আরো জানা যায়, ঋণ গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে রূপালী ব্যাংক থেকে ঋণটি পাইয়ে দিতে ১০ কোটি টাকা ঘুষ নিয়ে আবুল কাসেম চৌধুরী ওরফে ‘কমিশন কাসেম’ নামক ব্যক্তি তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান, ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্যাংকটির লোকাল অফিসের জেনারেল ম্যানেজারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরকে তিনি ‘ম্যানেজ’ করেন। নামমাত্র দামের জমি বন্ধক রেখে কিভাবে শত শত কোটি টাকা ঋণ দেয়া হলো? ঋণ গ্রহীতা প্রতিষ্ঠান এবং বন্ধকী সম্পত্তির আদৌ ইন্সপেকশন হয় কিনা, জানতে চাওয়া হয় রূপালী ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধানের সঙ্গে। জবাবে তিনি জানান, আমি এখন দেশের বাইরে রয়েছি। ওই ঋণটির কোনো তথ্য আমার স্মরণে নেই।

ঋণটির বিষয়ে কথা বলেছেন ব্যাংকটির তৎকালীন এজিএম খান মোহাম্মদ ইকবাল (বর্তমানে কৃষি ব্যাংকে কর্মরত)। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটিকে তখন ‘ভালো ক্লায়েন্ট’ মনে হয়েছিল। তাছাড়া এদের ‘করপোরেট গ্যারান্টি’ ছিল। পরবর্তীতে কি হয়েছে আমার জানা নেই।

অনুসন্ধান মতে, ঋণ গ্রহণকালে নোমান স্পিনিং মিলসের ‘ব্যবস্থাপনা পরিচালক’ দেখানো হয়েছে আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ হোসাইনকে। বাস্তবে এটির মালিকানায় সাদ ছাড়াও রয়েছেন আটজন। তারা হলেন- মো. নূরুল ইসলাম, তার পুত্র আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তালহা, মেয়ে নূর-ই-ইয়াসমিন ফাতিমা, মো. আব্দুল কুদ্দুস, এস এম রফিকুল ইসলাম, মো. আব্দুল্লাহ জাবের এবং মো. আব্দুল্লাহ জুবায়ের। সবার ঠিকানা উল্লেখ রয়েছে, বাড়ি-১৯, রোড-৪৪, ব্লক সিডব্লিউএন (বি), গুলশান-২, ঢাকা। এর মধ্যে আব্দুল কুদ্দুস প্রতিষ্ঠানটির একজন বেতনভুক্ত কর্মচারী বলে জানা গেছে।

তথ্য মতে, কথিত ব্যবসায়ী নূরুল ইসলাম রূপালী ব্যাংকের অর্থ লোপাটের ক্ষেত্রে নিজের শিশু নাতিকে যেমন প্রতিষ্ঠানের ‘ব্যবস্থাপনা পরিচালক’ বানিয়েছেন, তেমনকি কর্মচারী কুদ্দুসকে বানিয়েছেন শেয়ার হোল্ডার। যখন যেখানে খুশি যে কারো নাম ব্যবহার করে তিনি ঋণ নেন। ফলে দেখা যাচ্ছে, কোম্পানি প্রতিষ্ঠাকালে হয়তো একজনক ‘পরিচালক’ করা হলো, কিন্তু ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে তাকে হাজির করা হয় ‘ব্যবস্থাপনা পরিচালক’ হিসেবে।

মূলত নোমান গ্রুপ নূরুল ইসলাম এবং তার পরিবার একটি ব্যাংক লুটেরা এবং আপাদমস্তক একটি অপরাধপ্রবণ পরিবার। টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রির ব্যবসার আড়ালে বন্ডের মালামাল চোরাই বাজারে বিক্রি, নামমাত্র সম্পত্তি, বিরোধপূর্ণ সম্পত্তি এমনকি সরকারি সম্পত্তি বন্ধক রেখে শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন, আন্ডার-ইনভয়েস-ওভার ইনভয়েসের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি বিদেশে পাচার, জাল-জালিয়াতি, অর্থের বিনিময়ে ‘জাতীয় রফতানি ট্রফি’ ক্রয়, প্রতিপক্ষকে দমন-পীড়নে ডিবি হারুনসহ পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার, ভুয়া মামলা দায়ের, রিমান্ডের এনে নিরীহ মানুষকে নির্যাতন, মিথ্যা মামলায় একতরফা বিচার করে কারাদণ্ড নিশ্চিত করাসহ বহুমাত্রিক অপরাধের সঙ্গে যুক্ত নূরুল ইসলামের পরিবার। স্থানীয়ভাবে তিনি ‘দানবীর’, ‘শিক্ষানুরাগী’ হিসেবেও পরিচিত।এটি তার বাহ্যিক অবয়ব। কিন্তু তার ভেতরের চেহারা কুৎসিত।

৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পাশাপাশি নূরুল ইসলামও ভোল পাল্টানোর চেষ্টা করছেন। তবে বিএফআইইউ, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে। নূরুল ইসলামের ব্যাংক লুটের মাধ্যমে বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং অর্থ পাচার অনুসন্ধান সম্পকে জানাতে চাওয়া হলে (বুধবার) দুদক মহাপরিচালক মো. আকতার হোসেন বলেন, আজই আমরা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান কামাল এবং তার স্ত্রী-সন্তানদের বিরুদ্ধে পৃথক পাঁচটি মামলা দায়ের করেছি। এর মধ্যে পৌনে ৪০০ টাকা বিদেশে পাচারের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অনেক রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক, ব্যবসায়ী অনেক ব্যক্তির দুর্নীতি নিয়েই কাজ করছি। এখনই নাম উল্লেখ করতে চাই না। শীগগিরই ফলাফল দেখতে পাবেন আশা করছি।

শেয়ার দিয়ে সাথেই থাকুন..

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ