আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে শেয়ারবাজারে কারসাজি ও অনিয়মে রাঘব-বোয়ালদের বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আইনী ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে শেয়ারবাজারের আলোচিত কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণও করা হয়েছে।
এসব ব্যক্তিদের ইন্ধনেই শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের ব্যানারে কিছু বিনিয়োগকারী বিএসইসি’র বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছে। বিএসইসি’র অফিস গেটে তালা দিয়ে কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করেছে।
গত রোববার (০৬ অক্টোবর) অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে (এফআইডি) এমন অভিযোগ করে বিএসইসি একটি চিঠি দিয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সংস্কার কার্যক্রমের বিরোধী, যারা চায় না কারসাজির হোতাদের শাস্তি হোক এবং যারা ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত নতুন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে– তারাই শেয়ারবাজারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
চিঠিতে কমিশন জানিয়েছে, দৃশ্যত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী ব্যক্তিদের কার্যক্রম দুরভিসন্ধিমূলক। ‘এজিএম পার্টি’সহ শেয়ারবাজারে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন ব্যক্তি যারা চলমান সংস্কার কার্যক্রম ও কারসাজির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিরোধী, তারা এ ধরনের বিক্ষোভে মদদ জোগাচ্ছে বলে বিএসইসির নিজস্ব অনুসন্ধান ও পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে।
বিএসইসি মনে করে, শেয়ারবাজারে সংঘটিত সাম্প্রতিক আন্দোলন কর্মসূচির ঘটনায় উপস্থিত অনেকেই শেয়ারবাজারের প্রকৃত বিনিয়োগকারী নন। গত ২৮ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলনে এবং পরবর্তী সময়ে মতিঝিলে মানববন্ধন কর্মসূচিসহ বিভিন্ন কর্মসূচির পেছনে থাকা ব্যক্তিরা স্পষ্টভাবে শেয়ারবাজারের অনিয়মের সঙ্গে জড়িত স্বার্থান্বেষী মহলের আশীর্বাদপুষ্ট। কিছু অনলাইন পোর্টাল নানা গুজব ও অসত্য তথ্য প্রকাশ করে শেয়ারবাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। এসব পোর্টালের পেছনের ব্যক্তি কারা, বিগত সময়ে পোর্টালগুলোর কী ভূমিকা ছিল এবং তারা কাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে, এগুলো ভালোভাবে বিশ্লেষণ করলে পরিষ্কারভাবে বোঝা যাবে।
বিএসইসি চিঠিতে আরও বলেছে, বিগত দেড় দশকের স্বৈরশাসন ও স্বেচ্ছাচারিতায় আর্থিক খাত বিপর্যস্ত অবস্থায়। এ সময়ে দেশের শেয়ারবাজারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ছিল না। বিভিন্ন প্রভাবশালী গোষ্ঠী শেয়ারবাজারকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।
বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর গত দেড় মাসে বিভিন্ন কার্যক্রম অবহিত করে চিঠিতে বলা হয়েছে, এরই মধ্যে বিগত দিনের অনিয়ম অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠীকে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে রেকর্ড জরিমানা করা হয়েছে। তিন অডিট প্রতিষ্ঠানকে বিএসইসির প্যানেল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানির নতুন শেয়ার ইস্যুর প্রস্তাব বাতিল করা হয়েছে। যেসব কোম্পানি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঘোষিত লভ্যাংশ দেয়নি, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বিনিয়োগকারীদের জমা অর্থ সিসিএ হিসাবে না থাকায় একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের মালিক ও শীর্ষ ব্যক্তিদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়েছে এবং কিছু পরিচালক ও এমডির বিও হিসাব জব্দ করা হয়েছে। তালিকাভুক্ত রহিমা ফুডের শেয়ার অনিয়ম, ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি, ইনভেস্ট এশিয়া, স্ট্র্যাটেজিক ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত চলছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বর্তমান কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর অন্তত ২৫ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া ৬০টি বিও অ্যাকাউন্ট জব্দ, অন্তত ২৪টি কোম্পানির অনিয়ম ও দর বৃদ্ধি নিয়ে তদন্ত এবং বিগত সরকারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও বাংলাদেশের আর্থিক খাতে অনিয়মের সঙ্গে প্রভাবশালী গোষ্ঠীর মালিকানাধীন কোম্পানি নিয়ে তদন্ত কার্যক্রম চলমান।
জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের নাম উল্লেখ না করে বিএসইসি মন্ত্রণালয়কে লিখেছে, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত একজন ক্রিকেটার যিনি ব্যবসায়ী, রাজনীতিক– ইত্যাদি নানা ভূমিকায় বহুল আলোচিত ও সমালোচিত, তাঁকে বিএসইসির শুভেচ্ছাদূত থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কারসাজির অভিযোগে তাঁকে বড় অঙ্কের জরিমানা করা হয়েছে। একই ঘটনায় সরকারি কর্মকর্তা আবুল খায়ের হিরু ও তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকেও জরিমানা করা হয়েছে।
বিএসইসি চিঠিতে জানিয়েছে, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে একটি সুষ্ঠু বাজার গড়তে এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবু কিছু অযৌক্তিক দাবিকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে কিছু ব্যক্তি।