শেয়ারবাজারে চলছে টানা দরপতন। লাগামহীন দরপতনে নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা। তাদের মধ্যে হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বর্তমান কমিশনের সময়ে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক কমেছে ৪৫০ পয়েন্ট। এরমধ্যে গত তিনদিনে সূচক কমেছে ২১৫ পয়েন্ট। সোমবার কমেছে ৩৪ পয়েন্ট, মঙ্গলবার কমেছে ৩৮ পয়েন্ট এবং আজ কমেছে ১৩২ পয়েন্ট।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে গত দুই বছরে শেয়ারবাজারে অব্যাহত পতন হয়েছে। এরমধ্যে অনেকদিন পতনের সেঞ্চুরি হয়েছে। হাসিনা সরকারের পতনের আগের দিন ৪ আগস্ট ডিএসইর সূচকের পতন হয়েছিল ১০৪ পয়েন্ট। ওই পতন ছিল গত দুই বছরের মধ্যে অন্যতম বড় দরপতন। আজ সেই পতনকেও ছাড়িয়ে গেছে। আজকের পতনকে বিনিয়োগকারীরা স্বরণকালের মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ দরপতন বলে অভিহিত করছেন।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গতকাল বিএসইসি বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করায় রেকর্ড অর্থ জরিমানা করেছে। এর প্রভাবে আজ বাজারে বড় পতন হয়েছে। তারা বলছেন, বর্তমান কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই কারসাজি ও অনিয়মের জন্য শাস্তি আরোপ করে চলেছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ারবাজারে কারসাজি ও অনিয়মের অবশ্যই শাস্তি হওয়া উচিত। কিন্তু বাজারে এখনো নতুন বড় বিনিয়োগকারীদের সাপোর্ট তৈরি হয়নি। এখনো সালমান রহমান ও শিবলী রুবাইয়াতের প্রেতাত্মাই বড় বিনিয়োগকারী হিসাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে। আর বিএসইসি তাদের উপরই শাস্তি আরোপ করছে।
বাজারে নতুন বিনিয়োগকারীর সাপোর্ট তৈরি না হওয়ায় এবং শাস্তির আওতায় থাকা সালমান রহমান ও শিবলী রুবাইয়াতের প্রেতাত্মারা বাজারে অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে তুলছেন। যে কারণে বাজার অব্যাহতভাবে নিচের দিকেই নামছে। প্রয়োজনীয় সাপোর্ট না থাকায় বাজারের পতন ঠৈকানো যাচ্ছে না।
বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করছেন, বিএসইসি অন্ধ মানুষের মতো কেবল শাস্তিই আরোপ করে যাচ্ছে। কোন কোন হাউজ থেকে অস্বাভাবিক সেল প্রেসার দিয়ে বাজারকে অব্যাহতভাবে নিচে নামাচ্ছে, সেই বিষয়ে কার্যকরভাবে মনিটর করা হচ্ছে না। যার ফলে বাজারে অস্বাভাবিক সেল প্রেসারও থামছে না।
বাজার সংশ্লিষ্টরা দুঃখ করে বলছেন, শেয়ারবাজারে এখন অভিজ্ঞতাসম্পন্ন লোকদের অভাব। যারা আছে, তারা সবাই সালমান রহমান ও শিবলী রুবাইয়াতের গ্রুপের। এছাড়া, বিএসইসি ও ডিএসই-তে যারা বসে আছেন, তারা কেউই বর্তমান কমিশনের পক্ষের লোকজন নয়। যে কারণে শেয়ারবাজার অব্যাহতভাবে নামছেই। তৈরি হচ্ছে নাজুক এক অবস্থার।
বুধবারের বাজার পর্যালোচনা
আজ ডিএসইর প্রধান সূচক ‘ডিএসইএক্স’ ১৩২.২৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪৫৪ পয়েন্টে।
অন্য দুই সূচকের মধ্যে ‘ডিএসইএস’ ৩২.৫১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২১৯ পয়েন্ট এবং ‘ডিএস-৩০’ ৫১.৩২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৮৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
এদিন ডিএসইতে ৪৪০ কোটি ৮৩ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩৮৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকার। আজ লেনদেন বেড়েছে ৫১ কোটি ৩৫ লাখ টাকার বা ১৩ শতাংশ।
ডিএসইতে আজ লেনদেন হওয়া ৩৯৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ২৯টির বা ৭.২৯ শতাংশের, কমেছে ৩৪৭টির বা ৮৭.১৯ শতাংশের এবং পরিবর্তন হয়নি ২২টির বা ৫.৫৩ শতাংশের।
অপর শেয়ারবাজার সিএসই আজ ৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।
এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২১৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ২৪টির, কমেছে ১৭৭টির এবং পরিবর্তন হয়নি১৫ টির।
এদিন সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৩০৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ২৯১ পয়েন্টে।