চরম সংকটে থাকা দেশের ৯টি ব্যাংকে পরিদর্শন করবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। তাদের সঙ্গে টাস্কফোর্সে নিয়োগ দেওয়া হবে বিদেশি কয়েকজন পরিদর্শক।
সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) টাস্কফোর্সের দ্বিতীয় বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স রুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
যেসব ব্যাংকে পরিদর্শন করা হবে- ন্যাশনাল ব্যাংক, ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, কমার্স ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ইসলামি ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক।
এদিকে সম্প্রতি দেশের ব্যাংক খাতের সংস্কারে গভর্নরের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ইতোমধ্যেই টাস্কফোর্সের ২ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৪জন কর্মকর্তাকে পরিদর্শনের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি বিদেশি কয়েকজন পরিদর্শক নিয়োগ দিয়েই টাস্কফোর্স কার্যক্রম শুরু করবে।
গভর্নর বলেন, প্রথম ধাপে ইসলামী ব্যাংকসহ ৩টি ব্যাংকের সম্পদ নিরুপন করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তারপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে আরও ৩টি করে ৯ ব্যাংকের এ কার্যক্রম চালানো হবে।
তিনি বলেন, টাস্কফোর্স মূলত ৩টি বিষয়ে কাজ করবে। প্রথমত, ব্যাংকগুলোর ক্ষতিগ্রস্ত সম্পদ নির্ণয় করবে। এরপর ব্যাংকগুলোর সম্পদ কোথায় আছে তা চিহ্নিত করবে। এরপর ওই সম্পদ পুরুদ্ধারে কাজ করবে। এক্ষেত্রে প্রথম ধাপে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ১৪জন কর্মকর্তাকে ৩ ভাগে বিভক্ত করে ওই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে দুই গ্রুপে ৪ জন করে কর্মকর্তা দিবেন। আর অন্য গ্রুপে রয়েছেন ৬ জন। এক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংক বড় ব্যাংক হওয়ায় পরির্দশনের দায়িত্বে থাকবে ৬ জন কর্মকর্তা। পাশাপাশি নিরিক্ষক প্রতিষ্ঠান ও বিদেশি নিরিক্ষকদের যুক্ত করা হবে। উন্নয়ন সহযোগীরা এসব অর্থ দিবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা প্রথমে দেখবো ব্যাংক থেকে নামে বা বেনামে কি পরিমাণ অর্থ বের করে নেওয়া হয়েছে তা দেখবো। এরপর ওই অর্থ যদি দেশের বাইরে চলে যায় তাহলে সেগুলো কিভাবে আন্তর্জাতিক আইন মেনে আনা যায় সে বিষয়ে কাজ করবো। এ ক্ষেত্রে আমরা বড় কেসগুলোকে নিয়ে কাজ করবো। আমাদের যদি ৪ লাখ কোটি টাকার মতো খারাপ সম্পদ থেকে থাকে তার অর্ধেক হয়ে তো অল্প কয়েকজন ব্যক্তির কাছে গেছে। এজন্য তাদের উপর বেশি ফোকাস থাকবে। আর ছোটগুলো সিস্টেমেটিক ওয়েতে তুলে আনা হবে।
গভর্নর বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ১১টি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিয়েছি। আমাদের রেমিট্যান্স প্রভাব বাড়ছে। যদি এসব ব্যাংক রেমিট্যান্স ভালো পায় তাহলে তাদের তারল্য প্রবাহ বাড়ার সহায়তা করবে। রেমিট্যান্স যখন তারা বিক্রি করবে তখন তাদের হাতে টাকা চলে আসবে। এভাবেই তাদের রিকভার করতে পারবে।
তিনি বলেন, একীভূত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক এখানো কোনো সিদ্ধান্তে যায়নি। আমরা চেষ্টা করবো ছোট ছোট ব্যাংকগুলোকে একীভূত করে ফেলা যায় কিনা। এটা করতে পারলে ভালোই হবে। এসব ব্যাংকগুলো যেহেতু মূলধন সহায়তা আমরাই করবো সেক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না। কারণ অনেকগুলো ব্যাংকের আগের মালিকরা অনিয়ম করে তাদের মালিকানা হারিয়েছেন। এখন ওই মালিকানা সরকারের ক্ষেত্রে একীভূত করা সহজ হবে। তবে বাস্তবতা বুঝে আমরা কাজ করবো। তবে কয়েকটি ব্যাংক কমিয়ে ফেলা অবশ্যই ভালো হবে। এক্ষেত্রে ব্যাংক একীভূত হলেও আমানতকারীদের টাকা ফেরৎ দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
গভর্নর বলেন, কিছু ব্যাংক থেকে গ্রাহক টাকা তুলে অন্য ব্যাংকের রাখছে। যেসব ব্যাংক থেকে টাকা তোলা হচ্ছে তারা তারল্য সংকটে পড়ছে। আবার যাদের কাছে রাখা হচ্ছে তাদের তারল্য বেড়ে যাচ্ছে। এজন্য আমরা গ্যারান্টার হয়ে তারল্য বেশি থাকা ব্যাংকগুলো থেকে কম থাকা ব্যাংকগুলোকে টাকা দিবো। এক্ষেত্রে দুর্বল ব্যাংক টাকা না দিতে পারলে ওই টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক পরিশোধ করবে। এখন পর্যন্ত এই স্কিম থেকে কাউকেই টাকা দেওয়া হয়নি। যদি এদের অবস্থা ভালো হয়ে যায় তাহলে কাউকে দিতেও হবে না। প্রয়োজন বোধে দিবো। যার যত টাকা দরকার সেই অনুযায়ী টাকা দেওয়া হবে। তবে এসব ব্যাংকগুলো এখন ক্যাশফ্লো ভালো রয়েছে। গত কয়েকদিনে ব্যাংকগুলোর তারল্য উদ্বৃত্ত আছে ৮১০ কোটি টাকা। আশা করি সমস্যা সমাধান হবে।
তিনি বলেন, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় চলতি সপ্তাহে আবারও নীতি সুদহার (পলিসি রেট) বৃদ্ধি করা হবে। এরপর আগামী মাসে আরও কিছুটা বৃদ্ধি করা হবে। বর্তমানে নীতি সুদহার ৯ শতাংশে রয়েছে। গত বছরের মার্চ থেকে দেশের মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি থাকায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শের সঙ্গে মিল রেখে নীতি সুদহার বাড়ানো হয়।
গভর্নর বলেন, আমি আশাবাদি মূল্যস্ফীতি মার্চ এপ্রিলের মধ্যে একটি ভালো জায়গায় চলে আসবে। কতখানি ভালো যায়গায় আসবে সেটা হয়তো বলা যাবে না। তবে আমরা পলিটি টাইট করবো যাতে মূল্যস্ফীতি কমে আসে। আমাদের এখন বিনিময় হার স্থিতিশীল আছে।
এছাড়া রেমিট্যান্সও বাড়ছে। আশাকরি আগামীতেও বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকবে। যদি এটা ধরে রাখা যায় তাহলে মূল্যস্ফীতি অবশ্যেই কমে আসবে। তাছাড়া আমাদের বাজেটে ব্যাংক থেকে ঋণের যেই লক্ষ্য রাখা হয়েছে তা ৫০ হাজার কোটি টাকা কমানো হতে পারে। এটা হলে বেসরকারি বিনিয়োগও ঠিক হয়ে আসবে। সবমিলিয়ে আমরা যদি মূল্যস্ফীতি ৪-৫ এ নামিয়ে আনতে পারি তাহলে সুদের হার আমরা কমিয়ে আনতে পারবো। সে জন্য সময় দিতে হবে।