ছাগলকাণ্ডে আলোচিত রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সদস্য মো. মতিউর রহমানের কোম্পানি এসকে ট্রিমস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান কে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠিয়েছে কোম্পানিটি। একই চিঠি পাঠানো হয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছেও।
ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত এসকে ট্রিমস শতভাগ রপ্তানি নির্ভর প্রতিষ্ঠান হওয়ায় তাদের সকল ধরনের আর্থিক লেনদেন ব্যাংকিং চ্যানেলে সম্পন্ন হয়ে থাকে। তবে চলতি বছরের ২৫ জুন থেকে কোম্পানিটির ব্যাংক হিসাব জব্দ হয়ে যাবার কারণে উৎপাদন চালিয়ে যাওয়া বেশ কঠিন হয়ে পরেছে। ফলে কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ করা হয়েছে।
এদিকে কোরবানির ঈদের আগে ১৫ লাখ টাকায় ছেলের ছাগল কিনতে চাওয়ার ঘটনায় আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য মতিউর রহমানের মালিকানাধীন কোম্পানি এস কে ট্রিমসের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। চলতি বছরের জুন মাসের ২৫ তারিখে ওয়ান ব্যাংকে থাকা এসকে ট্রিমসের ব্যাংক হিসাবটি জব্দ করে বাংলাদেশ ব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। তবে রপ্তানি, রাজস্ব, কর্মকর্তাদের বেতন দেয়াসহ নানা ইস্যুতে কোম্পানিটির অনুরোধে ১০ জুলাই ২০২৪ তারিখে কোম্পানিটির ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ তুলে নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক জব্দের নির্দেশ তুলে নেয়ার একদিন পরেই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সুপারিশের ভিত্তিতে মহানগর দায়রা জজ আদালত ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) নির্দেশে কোম্পানির সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়।
কোম্পানিটির উদ্যোক্তাদের মধ্যে রয়েছে মতিউর রহমানের ভাই এম এ কাইয়ূম হাওলাদার ও মো. নুরুল হুদা, মতিউর রহমানের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোম্পানি গ্লোবাল শুজ ও গ্লোবাল ম্যাক্স প্যাকেজিং। এর মধ্যে এম এ কাইয়ূম হাওলাদার কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন। কোম্পানিটির শেয়ারের বড় অংশই রয়েছে মতিউর রহমানের পরিবারের সদস্যদের হাতে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির আগে কোম্পানিটি প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমেও শেয়ার ইস্যু করে। ওই সময় কোম্পানিটির শেয়ার কিনেছেন মতিউর রহমানের বোন হাওয়া নুর বেগম, প্রথম ঘরের ছেলে আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণব ও মেয়ে ফারজানা রহমান ঈপ্সিতা, দ্বিতীয় স্ত্রী শারমিন আক্তার শিবলী, ভায়রা নাসার উদ্দিন, নিকটাত্মীয় রাশিদুজ্জামান, আতিকুর রহমানসহ আরও অনেকে।
মূলত নামে-বেনামে এস কে ট্রিমসের সিংহভাগ মালিকানায় রয়েছেন মতিউর রহমানের স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও নিকটাত্মীয়রা। এস কে ট্রিমস ছাড়াও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ১৫-২০টি কোম্পানির প্লেসমেন্ট বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মতিউর রহমান ও তাঁর সুবিধাভোগীরা।
গত ঈদুল আজহার সময় মতিউর রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলে মুশফিকুর রহমান ১৫ লাখ টাকার ছাগল কিনতে গিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনায় আসেন। ছেলের বিলাসী জীবনযাপনের সূত্র ধরেই মতিউরের সম্পদের বিষয়টি আলোচনায় আসে। এরপরই বেরিয়ে আসে নামে-বেনামে মতিউর রহমান, তাঁর পরিবার ও নিকটাত্মীয়দের বিপুল সম্পদের হিসাব। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মতিউর রহমানের বিপুল সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধানে নামে দুদক। তারই অংশ হিসেবে আদালতের মাধ্যমে মতিউর রহমানের বেশ কিছু সম্পদ জব্দ করা হয়।
তবে এসকে ট্রিমসের কোম্পানি সচিব মো. রিয়াজ হায়দার স্বাক্ষরিত এই চিঠিতে আরও জানানো হয়েছে ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ তুলে নেয়া হলেই আবারও উৎপাদনে ফিরবে কোম্পানিটি।