1. [email protected] : ইকোনোমিক বিডি প্রতিবেদক : ইকোনোমিক বিডি প্রতিবেদক
  2. [email protected] : ইকোনোমিক বিডি : ইকোনোমিক বিডি
আইএমএফের তৃতীয় কিস্তির ঋণ অনুমোদন
বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৪ অপরাহ্ন

আইএমএফের তৃতীয় কিস্তির ঋণ অনুমোদন

  • পোস্ট হয়েছে : মঙ্গলবার, ২৫ জুন, ২০২৪

বাংলাদেশকে দেওয়া ঋণের তৃতীয় কিস্তি অনুমোদন করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ)। তৃতীয় কিস্তিতে বাংলাদেশ পাবে ১ দশমিক ১১ বিলিয়ন বা ১১১ কোটি ৫০ লাখ ডলার। আজ সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে সংস্থাটির নির্বাহী পর্ষদের সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আগামী দুই দিনের মধ্যে বাংলাদেশের রিজার্ভে এ অর্থ যোগ হবে বলে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক।

তিনি বলেন, আইএমএফের নির্বাহী সদস্যদের বৈঠকে ঋণ অনুমোদন হয়েছে। আগামী দুই দিনের মধ্যে এই ঋণের অর্থ রিজার্ভ যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। আজকে পর্যন্ত দেশের রিজার্ভ আছে ২৪ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফের ঋণ যুক্ত হলে তা বেড়ে প্রায় ২৬ বিলিয়নের কাছাকাছি হবে।

বিদেশি ঋণগুলো আশা শুরু হওয়া দেশের বিদেশি রিজার্ভে ক্ষয় কমবে বলেও জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই শীর্ষ কর্তা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেবে আজ সোমবার পর্যন্ত দেশের রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার। যদিও এই হিসাবটি গ্রহণ করে না আন্তর্জাতিক কোন সংস্থা। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিপিএম ৬ অনুযায়ী দেশের গ্রস রিজার্ভ ১৯ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার।

ঋণের কিস্তির শর্ত অনুযায়ী, আইএমএফকে দেশের রিজার্ভের নিট হিসাব দিতে হয়। অর্থাৎ বিপিএম-৬ থেকে চলতি দায় বাদ দিলে ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ দাঁড়ায় সাড়ে ১৩ বিলিয়ন ডলারেরও কম। তবে আইএমএফের ঋণের ১১১ কোটি ৫০ লাখ ডলার রিজার্ভে যুক্ত হলে নিট রিজার্ভ সাড়ে ১৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে। আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রিজার্ভে লক্ষ্যমাত্রা ১৪ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলার রাখার কথা রয়েছে।
এর আগে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় আইএমএফ গত বছরের জানুয়ারিতে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করে।

একই বছরের ফেব্রুয়ারির শুরুতেই প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার ছাড় হয়। গত ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ৯৮ ডলার ছাড় করে সংস্থাটি। সাত কিস্তিতে ৪২ মাসে পুরো ঋণ পাওয়ার কথা রয়েছে। ঋণের গড় সুদের হার ২ দশমিক ২ শতাংশ। আলোচ্য প্যাকেজে দুই ধরনের ঋণ রয়েছে। এর মধ্যে বর্ধিত ঋণ সহায়তা বা বর্ধিত তহবিল (ইসিএফ অ্যান্ড ইএফএফ) থেকে পাওয়া যাবে ৩৩০ কোটি ডলার। রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) আওতায় পাওয়া যাবে ১৪০ কোটি ডলার। ২০২৬ সাল পর্যন্ত এ ঋণ কর্মসূচি চলাকালে বাংলাদেশকে বিভিন্ন ধরনের শর্ত পরিপালন ও সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে।

ঋণের তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে বাংলাদেশকে দেওয়া ঋণের শর্ত পূরণের কাজ পর্যালোচনা বা রিভিউ করতে গত ২৩ এপ্রিল আইএমএফের ১০ সদস্যের একটি দল আসে বাংলাদেশে। ৮ মে ঋণের বিষয়ে দুই সপ্তাহব্যাপী দ্বিতীয় পর্যালোচনা শেষে আইএমএফের গবেষণা বিভাগের উন্নয়ন সামষ্টিক অর্থনীতি শাখার প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন।

ওই সংবাদ সম্মেলনে ক্রিস পাপাজর্জিও বলেছিলেন, ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হতে বাংলাদেশকে বাণিজ্য বহুমুখীকরণে যেতে হবে; সেই সঙ্গে আরো বেশি প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ, ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নতি ও সুশাসনে নজর দিতে হবে। কর সংগ্রহে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং সে জন্য প্রয়োজনীয় কৌশল প্রণয়নের পরামর্শও দেন তিনি।

এদিকে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৪ শতাংশ হবে বলে জানিয়ে গেছে আইএমএফ। সংস্থাটির মতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে। কারণ হিসেবে তারা বলেছে, সামষ্টিক অর্থনীতি ধীরে ধীরে টেকসই হবে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের চাপও কমবে। বাড়বে আমদানি।

অনেক শর্ত পূরণ করার পথে থাকলেও ঋণ কর্মসূচি শুরুর পর আইএমএফের বেঁধে দেওয়া রিজার্ভের ত্রৈমাসিক কোনো লক্ষ্যমাত্রাই পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। বারবার ব্যর্থ হওয়ার পর আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল, তৃতীয় কিস্তির অর্থ পাওয়া যায় কি না। যদিও বাংলাদেশের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে আইএমএফের দল চলতি মাসে রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে দেয়।

আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য আইএমএফের দেওয়া নিট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ১১ কোটি মার্কিন ডলার। এ লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আইএমএফ ১ হাজার ৪৭৫ কোটি ডলারে নামিয়েছে; সেই হিসাবে লক্ষ্যমাত্রা কমেছে ৫৩৬ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৪ শতাংশ হলেও আগামী অর্থবছরে তা ৭ দশমিক ২ শতাংশে নামতে পারে বলে প্রক্ষেপণ করেছে আইএমএফ।

এ বিষয় বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, রিজার্ভের নতুন লক্ষ্যমাত্রা ১৪ দশমিক ৮০ বিলিযন হলেও তার পূরণ করা কঠিন। কারণ, দেশের রিজার্ভে বৈদেশিক মুদ্রা যেসব উত্স থেকে আসে ও ব্যয় হয়, সেখানে ভারসাম্য নেই। ফলে রিজার্ভ ধরে রাখা যাচ্ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে ঋণের তৃতীয় কিস্তি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে আইএমএফের অন্যান্য শর্ত পূরণে অগ্রগতি থাকায় ঋণে ইতিবাচক মনোভাব দেখাতে পারে বোর্ড।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২১ সালের আগস্ট মাসে মোট রিজার্ভের রেকর্ড ছিল ৪৮ দশমিক শূণ্য ৬ বিলয়ন ডলার। যা কমতে মাত্র ৩৪ মাসে এসে নেমেছে ২৪ বিলিয়নের ঘরে। আর ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১৩ বিলিয়ন ডলারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আইএমএফের বাধা সত্ত্বেও রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি অর্থবছরের ৯ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৩ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন। এবং ২০২১-২২ বছরে ছিল ৭ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার। এই তিন অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ৩০ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছে। অপরদিকে আইএমএফের আপত্তির মুখে চলতি অর্থবছরে সোয়াপ পদ্ধতিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ৪ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

জানা গেছে, আইএমএফের ৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭৬ দশমিক ২৭ মিলিয়ন ডলার এসেছে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে। আর দ্বিতীয় কিস্তি হিসেবে প্রায় ৬৮১ মিলিয়ন ডলারের আসে গত বচরের ডিসেম্বরে। আর তৃতীয় কিস্তি ছাড়ে বোর্ডে উঠতে যাচ্ছে আগামী ২৪ জুন।

শেয়ার দিয়ে সাথেই থাকুন..

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ