দেশের পুঁজিবাজারে গত ২দিন অস্বাভাবিক যে পতন হয়েছে, তার মৌলিক কোন কারণ খুঁজে পায়নি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। পুঁজিবাজারের এই পতন নিয়ে ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সাথে বৈঠকের পরেও কোনো কারণ জানা যায়নি বলে জানিয়েছে কমিশন।
সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের এমন তথ্য জানিয়েছেন বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ।
বৈঠকের সূত্রে জানা যায়, গতকাল রোববার ব্যাংকের লভ্যাংশ ঘোষণা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারিকৃত নির্দেশনা ইতিবাচক বলে মনে করেছে বিএসইসি ও ডিবিএ। এছাড়া কমিশন মনে করছে ডিবিএর কার্যকারিতা আরো বাড়ানো প্রয়োজন। বিশেষ করে বিও অ্যাকাউন্টধারীদের সাথে বোকারেজ হাউজের কর্মকর্তাদের সম্পর্ক বৃদ্ধির বিষয়ে নজর দিতে হবে। সেই সাথে ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে অবশ্যই লক্ষ্য করতে হবে ঋণ গ্রহীতার কাছ থেকে ঋণ আদায়ের সক্ষমতা। ঋণ ফেরত পাওয়ার সক্ষমতা অনুযায়ী ঋণ প্রদান করতে হবে।
এছাড়া যিনি ঋণ নিবে তিনি ঋণ ফেরতের বিষয়ে নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী ঋণ গ্রহণ করবেন। এ বিষয়ে বোকারেজ হাউজ ও বিও হিসাবধারীর মধ্যে সঠিক জ্ঞান প্রদান করতে হবে।
এ বিষয়ে বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, বাজারের পতন একটি স্বাভাবিক আচরণ। বাজারে উত্থান-পতন থাকবেই। বাজারের উত্থান ও পতনের বিষয়ে কমিশনের কোন হস্তক্ষেপ নেই। তবে উত্থান-পতন আইন-কানুন অনুযায়ী হচ্ছে কিনা, কোন ধরনের কারসাজি রয়েছে কি-না সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখা কমিশনের দায়িত্ব। এ বিষয়ে সার্ভিলেন্সের তথ্য অনুযায়ী পর্যবেক্ষণ চলছে।
তিনি আরো বলেন, ডিবিএর সাথে যে বৈঠক হয়েছে সেখানে আলোচনায় পতনের কোন মৌলিক কারণ পাওয়া যায়নি। ডিবিএ দুটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছে। প্রথমত সাধারণ বিনিয়োগকারীরা না জেনে না বোঝে শেয়ার বিক্রি করছে। বড় বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার থাকে লাখ লাখ। তাদের একটি অংশ বিক্রি করলে তাদের পাশাপাশি ছোট বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করছে। যা বাজারের নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
তাই একজন বিক্রি শুরু করলেই অন্যজন যেন বিক্রি না করে এবং নিজের সক্ষমতা অনুযায়ী শেয়ার ক্রয় বা বিক্রয় করে সেই বিষয়ে ডিলার, বোকারেজ হাউজ ও বিনিয়োগকারীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে ডিবিএ সভাপতি শরিফ আনোয়ার হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, শেয়ারবাজারের সার্বিক বিষয়ে আলোচানার জন্য আমাদের ডাকা হয়েছিল। বর্তমান বাজারের যে মন্দা তার পেছনে কি কারণ তা অনুসন্ধানে সার্ভিল্যান্স সিস্টেম জোরদার করার কথা বলা হয়েছে। বর্তমান কমিশনের উপর আস্থা রেখেই বিনিয়োগকারীরা বাজারে এসেছে। এখন তাদেরই এই আস্থা ধরে রাখার বিষয়। এ জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা করবো।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, এখন থেকে প্রতি মাসে ব্রোকারদের সাথে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এর মাধ্যমে একজন আরেকজনের সাথে পর্যালোচনা ও মতামত প্রদান করবে। এছাড়া বৈঠকে শেয়ারবাজারের উন্নয়নের জন্য কি কি করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
ডিজিটাল প্লাটফর্মে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম, এবং ডিবিএর সভাপতি শরীফ আনোয়ার হোসেন সহ সংগঠনটির পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।